জাপান তার দেশের কোম্পানিগুলোকে চায়না থেকে অন্য দেশে সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিচ্ছে এবং জাপানি কোম্পানিগুলো স্থানান্তরের ক্ষেত্রে পছন্দের দেশের তালিকায় রেখেছে বাংলাদেশকে। এটা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে উল্লম্ফিত করবে বলে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত নওকি ইতো ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “চীনে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে জাপানের কোম্পানিগুলো বহুমুখীকরণ করতে হচ্ছে। এটা বাংলাদেশকে একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছে।”
জাপানি কোম্পানিগুলো যখন নিজেদের কারখানাগুলো স্থানান্তর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন বাংলাদেশ জাপানিদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুত করার মাধ্যমে জাপানি কোম্পানিগুলোকে বিশেষ উৎপাদন সুবিধা দিয়ে দেশটির বিনিয়োগ নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করছে। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ১ হাজার একর জায়গার ওপর বিস্তৃত এই বিশেষ শিল্প এলাকা। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি এখানে জাপানের ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আশা করছে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনে বেতন কাঠামো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে এরই মধ্যে জাপানের উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের খরচ কম এমন স্থানগুলো খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের সরবরাহ চেইন চীন থেকে সরিয়ে অন্য দেশে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তারা ভিয়েতনাম এবং বাংলাদেশে অবকাঠামোর উন্নতি দেখতে পাচ্ছে। রাষ্ট্রদূত ইতোর মতে, গত ১০ বছরের বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো জাপানি কোম্পানির সংখ্যা তিনগুন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩শ টিতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জাপানের বিশেষ শিল্প এলাকার উন্নয়নে ১শ কোটি ডলারের যে প্রকল্প রয়েছে সেখানে জাপান বিশেষ উন্নয়ন ঋণ বরাদ্দ দিয়েছে ৩৫ কোটি ডলার। এশিয়ায় স্পেশাল ইকোনমিক জোনে এটাই জাপানের সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত এই শিল্প পার্কটির কার্যক্রম শুরু করার কথা ২০২২ সালে। রাষ্ট্রদূত ইতোর মতে, এখানে সুজুকি মোটারস করপোরেশন এবং মিটসুবিসি করপোরেশনের মতো গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে নতুন বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে জাপানের সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দুটি প্রতিষ্ঠান হলো জাপান ট্যোবাকো ইনকরপোরেশন ও হোন্ডা মোটারস কোম্পানি।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে লেখা হয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করার এক কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মধ্যে অন্যতম এই দেশ। এখানে আছে কমপক্ষে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। জাপানের তুলনায় শতকরা মাত্র ৪০ ভাগ এ দেশের আয়তন।
প্রভাবশালী ওই গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়, জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শতকরা ৫ দশমিক ২ ভাগ। তবে বর্তমান অর্থবছরে তা শতকরা ৭ দশমিক ৪ ভাগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে এই প্রবৃদ্ধি শতকরা ৮ দশমিক ২ ভাগ পূর্বাভাস করা হয়েছিল। প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে এখনও এ অঞ্চলে ভাল অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো বলেছেন, বাংলাদেশে ক্ষতি কাটিয়ে উঠার হার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে দ্রুত হচ্ছে।