০৫:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

কৃষকদের প্রকৃত বন্ধু মতিন

প্রায় ৬০ বছর ধরে কৃষিকাজ করছেন রোশন আলী। ৭৭ বছর বয়সী এই কৃষকের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে। এবারও প্রায় তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে তার জমিতে সেচসুবিধা দিচ্ছেন তার গ্রামের কলেজশিক্ষক মতিন সৈকত। শুরুতেই পুরো মৌসুমের জন্য বিঘাপ্রতি সেচ দিতে কৃষকদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নিতেন তিনি। ২০২১ সালে এসেও একই টাকা নিচ্ছেন। কৃষকবন্ধু মতিন এভাবেই টানা ২৫ বছর ধরে সেচসুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন।

রোশন আলী বলেন, আশপাশের প্রতিটি গ্রামে সেচের জন্য বিঘাপ্রতি কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। সেখানে মতিন সৈকত তাদের কাছ থেকে ২৫ বছর ধরে নিচ্ছেন মাত্র ২০০ টাকা। এ দীর্ঘ সময়ে সবকিছুর খরচ বেড়েছে, তবে বাড়েনি তার সেচের পানির দাম। বর্তমানে দেশের কোথাও এত কম দামে সেচসুবিধা পাওয়া যায় কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। এ অঞ্চলে কোথাও এই সুযোগ নেই, এটি একটি বিরল বিষয়। মতিন পানির দরেই তাদের পানি দিচ্ছেন।

মতিন সবার কাছে পরিচিত কৃষক ও পরিবেশের বন্ধু হিসেবে। কৃষকদের কল্যাণে নানামুখী কাজ করেন তিনি। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন সচ্ছল কৃষক। ছোটবেলা থেকে বাবা সব সময় বলতেন, পাঁচে পদে মানুষ হও। এক. জমিতে গেলে হালচাষ কর। দুই. মসজিদে গেলে ইমামতি করো। তিন. সালিশে গেলে সাবস্ত্যকারী হও। চার. আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নাও এবং পাঁচ. সমাজের জন্য ভালো কিছু কর।’

মতিন জানান, ১৯৯৭ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে কৃষকদের কল্যাণে সেচ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। ১৫০ বিঘা জমিতে সেচসুবিধা দিচ্ছেন তিনি।

তিনি বলেন, পুরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে মোট ৩০ হাজার টাকা পান। পাঁচ-ছয় মাস ধরে সেচসুবিধা দেন। এতে তার পকেট থেকেও অর্থ খরচ হয়। তবে এটি একটি সেবামূলক কাজ। অন্যরাও এভাবে উদ্যোগ নিলে ২০০ টাকায় না হলেও ৪০০-৫০০ টাকায় সেচসুবিধা দিতে পারে। কিন্তু কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

সিংগুলা গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম মোল্লা বলেন, মতিন তাদের কৃষিজমিতে ঝাঁটা-জিংলা পুঁতে দেন (পার্চিং পদ্ধতি)। এতে পাখি বসে ধানের জমি থেকে পোকামাকড় খেয়ে ফেলে, ফসলকে নিরাপদ রাখে। এ কারণে তাদের ফসলে কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না।

পুটিয়া গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, মতিন প্রতি বছর ফসলের মৌসুমে ঢোল পিটিয়ে, মাইকিং করে এলাকার কৃষকদের কীটনাশকের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে সচেতন করেন। পাশাপাশি নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন কাজ করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, মতিন সৈকত কৃষকদের প্রকৃত বন্ধু। তিনি স্বল্পমূল্যে সেচ দেওয়ায় কৃষকরা বোরো আবাদে লাভবান হচ্ছেন। তার মতো অন্যরাও এভাবে সেচসুবিধা দিলে মানুষ কৃষিকাজে আরও উদ্বুদ্ধ হবে। তাকে দেখে এখন অনেক শিক্ষিত তরুণও কৃষিতে ঝুঁকছেন।

ট্যাগ :

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় আপিল বিভাগের রায় ৪ সেপ্টেম্বর

কৃষকদের প্রকৃত বন্ধু মতিন

প্রকাশিত : ১২:০১:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ ২০২১

প্রায় ৬০ বছর ধরে কৃষিকাজ করছেন রোশন আলী। ৭৭ বছর বয়সী এই কৃষকের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে। এবারও প্রায় তিন বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে তার জমিতে সেচসুবিধা দিচ্ছেন তার গ্রামের কলেজশিক্ষক মতিন সৈকত। শুরুতেই পুরো মৌসুমের জন্য বিঘাপ্রতি সেচ দিতে কৃষকদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নিতেন তিনি। ২০২১ সালে এসেও একই টাকা নিচ্ছেন। কৃষকবন্ধু মতিন এভাবেই টানা ২৫ বছর ধরে সেচসুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন।

রোশন আলী বলেন, আশপাশের প্রতিটি গ্রামে সেচের জন্য বিঘাপ্রতি কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। সেখানে মতিন সৈকত তাদের কাছ থেকে ২৫ বছর ধরে নিচ্ছেন মাত্র ২০০ টাকা। এ দীর্ঘ সময়ে সবকিছুর খরচ বেড়েছে, তবে বাড়েনি তার সেচের পানির দাম। বর্তমানে দেশের কোথাও এত কম দামে সেচসুবিধা পাওয়া যায় কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। এ অঞ্চলে কোথাও এই সুযোগ নেই, এটি একটি বিরল বিষয়। মতিন পানির দরেই তাদের পানি দিচ্ছেন।

মতিন সবার কাছে পরিচিত কৃষক ও পরিবেশের বন্ধু হিসেবে। কৃষকদের কল্যাণে নানামুখী কাজ করেন তিনি। তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন একজন সচ্ছল কৃষক। ছোটবেলা থেকে বাবা সব সময় বলতেন, পাঁচে পদে মানুষ হও। এক. জমিতে গেলে হালচাষ কর। দুই. মসজিদে গেলে ইমামতি করো। তিন. সালিশে গেলে সাবস্ত্যকারী হও। চার. আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নাও এবং পাঁচ. সমাজের জন্য ভালো কিছু কর।’

মতিন জানান, ১৯৯৭ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে কৃষকদের কল্যাণে সেচ কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। ১৫০ বিঘা জমিতে সেচসুবিধা দিচ্ছেন তিনি।

তিনি বলেন, পুরো মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে মোট ৩০ হাজার টাকা পান। পাঁচ-ছয় মাস ধরে সেচসুবিধা দেন। এতে তার পকেট থেকেও অর্থ খরচ হয়। তবে এটি একটি সেবামূলক কাজ। অন্যরাও এভাবে উদ্যোগ নিলে ২০০ টাকায় না হলেও ৪০০-৫০০ টাকায় সেচসুবিধা দিতে পারে। কিন্তু কৃষকদের কাছ থেকে নেওয়া হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এতে কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে।

সিংগুলা গ্রামের কৃষক আবদুর রহিম মোল্লা বলেন, মতিন তাদের কৃষিজমিতে ঝাঁটা-জিংলা পুঁতে দেন (পার্চিং পদ্ধতি)। এতে পাখি বসে ধানের জমি থেকে পোকামাকড় খেয়ে ফেলে, ফসলকে নিরাপদ রাখে। এ কারণে তাদের ফসলে কোনো কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না।

পুটিয়া গ্রামের কৃষক সুরুজ মিয়া বলেন, মতিন প্রতি বছর ফসলের মৌসুমে ঢোল পিটিয়ে, মাইকিং করে এলাকার কৃষকদের কীটনাশকের ভয়াবহতার বিরুদ্ধে সচেতন করেন। পাশাপাশি নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন কাজ করেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, মতিন সৈকত কৃষকদের প্রকৃত বন্ধু। তিনি স্বল্পমূল্যে সেচ দেওয়ায় কৃষকরা বোরো আবাদে লাভবান হচ্ছেন। তার মতো অন্যরাও এভাবে সেচসুবিধা দিলে মানুষ কৃষিকাজে আরও উদ্বুদ্ধ হবে। তাকে দেখে এখন অনেক শিক্ষিত তরুণও কৃষিতে ঝুঁকছেন।