চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে একযোগে ৬টি বসতঘরে আগুন লেগে সর্বস্ব ছাই হয়ে গেছে ৬টি হিন্দু পরিবারের। অগ্নিকান্ডের ঘটনার আগে ঘরের টিনের চালে ডিল ছোঁড়ে দুর্বৃত্তরা। এর ৪৫ মিনিট পর উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকের ৬টি পরিবারের বসতঘরে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লে ওঠে। মুহুর্তেই আগুনের লেলিহান শিখায় ছাই হয়ে যায় দরিদ্র এসব সংখ্যালঘু পরিবারের সব স্বপ্ন।
গত শনিবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাত পৌনে ২টায় উপজেলার মায়ানী ইউনিয়নের পূর্ব মায়ানী গ্রামের মনু ভূঁইয়া পাড়ার শীল বাড়িতে এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকজন, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দাবি, এটি সাধারণ অগ্নিকান্ড নয় পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। তারা ধারণা করছেন জায়গা-জমি নিয়ে এলাকার দুটি মুসলিম পরিবারের চলমান বিরোধ নিরীহ এসব হিন্দু পরিবারের জন্য কাল হয়েছে। তবে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের ধারণা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, রাত পৌনে ২টায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসময় পরিবারের লোকজনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এসময় মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বাষুদেব শীল, জয়দেব শীল, রঞ্জিত শীল, নয়ন শীল, স্বপ্না রাণি শীল ও সহদেব শীলের বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তবে এতে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার রাতে ও রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) লাবিব আব্দুল্লাহ, মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুবল চাকমা ও মিরসরাই থানার ওসি মজিবুর রহমান।
গতকাল রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো আগুনে তাদের সর্বস্ব খুঁইয়ে মাটিতে নির্বাক বসে আছে। অনেকেই কথাও বলতে পারছে না। তবে এসময় ক্ষতিগ্রস্থ স্বপ্না রাণি শীল বলেন, ‘আগুনে লাগানোর ঘন্টাখানেক আগে ঘরের টিনের চালে বেশ কয়েকটি ডিল ছোঁড়া হয়। এসময় আমরা সবাই জেগে ঘরের বাইরে যাই আবার ঘুমানোর চেষ্টা করি। এসময় রাত পৌনে ২টার নাগাদ সবকটি ঘরে একসাথে আগুন লাগে। এটি সাধারণ কোন আগুন নয়, কেউ লাগিয়েছ।’
এসময় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা স্থানীয় মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির আহম্মদ নিজামী বলেন, ‘এটি কোন সাম্প্রদায়িক ঘোষ্ঠীর নাশকতার আগুন নয়। এখানে ৫০ কোটি টাকা মূল্যের একটি জমি নিয়ে পাশ^বর্তী দুটি মুসলিম পরিবারের বিরোধ চলছে। মূলত ওই জমি এসব হিন্দু পরিবারগুলোর পূর্বপুরুষের। আমরা ধারণা করছি বিরোধ থেকে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটতে পারে।’
মিরসরাই উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুপুর ধর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘এখানকার ৪টি ঘরে বিদ্যুত লাইন ছিল না। আর সবকটি ঘরে একযোগে আগুন লাগে। এটি কোন সাধারণ অগ্নিকান্ডের ঘটনা নয়। তবে কোন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও ঘটনাটি ঘটায়নি। আমরা এ ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে বিষয়টি গভীর তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ এসময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন মিরসরাই উপজেলা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি কল্যাণ রায় ও ছাত্র ঐক্য পরিষদের সভাপতি সৈকত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নয়ন শর্মা।
মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারি জানান, প্রাথমিকভাবে দারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।
মিরসরাই থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, এটি সাম্প্রদায়িক কোন নাশকতা নয়, ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্যমতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে অগ্নিকান্ডের ঘটনা আমরা গভীরভাবে তদন্ত করছি। সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুবল চাকমা জানান, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করছেন মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান। এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। আগে তদন্তের কাজ শেষ হউক।