১০:২৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

দেশের বাইরেও খ্যাতি ছড়িয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান

‘মেজবান’ ফারসি শব্দ। এর অর্থ হলো নিমন্ত্রণকর্তা। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান মেজবান। চট্টগ্রামের ভাষায় এটিকে ‘মেজ্জান’ বলা হয়। ধারণা করা হয়, ১৫শ’ ও ১৬শ’ শতাব্দীর প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যে পাওয়া মেজোয়ানি ও মেজমান শব্দ দুটি থেকেই মেজবান শব্দের উৎপত্তি। এখানে মেজোয়ানি অর্থ আপ্যায়নকারী ও মেজমান অর্থ আপ্যায়ন।
মেজবানের নাম শুনলে জিভে জল আসে না, এমন লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। তবে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের মেজবানের আপ্যায়ন ব্যবস্থায় বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সে সময় মাটিতে চাটাই কিংবা পাটি বিছিয়ে ও মাটির সানকিতে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হতো। বর্তমানে চাটাই কিংবা পাটি কোনোটিরই ব্যবহার আর চোখে পড়ে না। দেখা যায় না মাটির সানকিও। এখন চেয়ার-টেবিল ও প্রচলিত থালায় অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। চট্টগ্রামে সাধারণত দুটি কারণে মেজবানের আয়োজন করা হয়। একটি হলো সুখ বা আনন্দ উপলক্ষে। অপরটি হলো শোকে। সুখ বা আনন্দ বলতে শিশুর জন্মের পর আকিকা, জন্মদিন, ব্যক্তিগত সাফল্য, নতুন ব্যবসা শুরু, নতুন বাড়ি তৈরি, বিয়ে, খৎনাসহ বিভিন্ন উপলক্ষে মেজবানের আয়োজন করে থাকেন অনেকেই। এছাড়া কারো মৃত্যুর পর কুলখানি, মৃত্যুবার্ষিকীতেও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে মেজবানের আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে অতিথিদের খাবার গ্রহণের পরিমাণ অনেকটা নির্ধারিত থাকলেও মেজবানে তা থাকে না। ফলে মেজবানের খাবার পরিবেশন ব্যবস্থাকে চট্টগ্রামের ভাষায় ‘ঢালা খানা’ বলা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে সকাল থেকে শুরু হয়ে মেজবানের অনুষ্ঠান চলে দুপুর পর্যন্ত। তবে বর্তমান সময়ে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্তও এ ভোজন অনুষ্ঠান চলতে দেখা যায়। এ খাবার সবার জন্য উন্মুক্ত। এতে দাওয়াত ছাড়াও অংশ নেন অনেকেই।এখানে ইলিশ ও অন্যান্য সুস্বাদু মাছের তুলনায় গরু-খাসি ও বুটের ডালের মেজবানকে লোভনীয় ও মজাদার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গত কয়েক দশকে চট্টগ্রামের মেজবান ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় শোক দিবসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করে আসছিলেন চট্টগ্রামের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও চসিকের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। যা এখনও চলমান।

এর আগে, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করে চট্টগ্রামে রাউজান থানা আওয়ামী লীগ। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেজবানের আয়োজন করে থাকেন চট্টগ্রাম কমিউনিটির লোকেরা। চাটগাঁয়ের এ ভোজন সংস্কৃতি দিন দিন হয়ে উঠছে জনপ্রিয়।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

শেষবার গুলশানের বাসায় খালেদা জিয়া

দেশের বাইরেও খ্যাতি ছড়িয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান

প্রকাশিত : ১২:০১:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ এপ্রিল ২০২১

‘মেজবান’ ফারসি শব্দ। এর অর্থ হলো নিমন্ত্রণকর্তা। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান মেজবান। চট্টগ্রামের ভাষায় এটিকে ‘মেজ্জান’ বলা হয়। ধারণা করা হয়, ১৫শ’ ও ১৬শ’ শতাব্দীর প্রাচীন পুঁথি সাহিত্যে পাওয়া মেজোয়ানি ও মেজমান শব্দ দুটি থেকেই মেজবান শব্দের উৎপত্তি। এখানে মেজোয়ানি অর্থ আপ্যায়নকারী ও মেজমান অর্থ আপ্যায়ন।
মেজবানের নাম শুনলে জিভে জল আসে না, এমন লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। তবে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের মেজবানের আপ্যায়ন ব্যবস্থায় বেশকিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সে সময় মাটিতে চাটাই কিংবা পাটি বিছিয়ে ও মাটির সানকিতে অতিথিদের আপ্যায়ন করা হতো। বর্তমানে চাটাই কিংবা পাটি কোনোটিরই ব্যবহার আর চোখে পড়ে না। দেখা যায় না মাটির সানকিও। এখন চেয়ার-টেবিল ও প্রচলিত থালায় অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়। চট্টগ্রামে সাধারণত দুটি কারণে মেজবানের আয়োজন করা হয়। একটি হলো সুখ বা আনন্দ উপলক্ষে। অপরটি হলো শোকে। সুখ বা আনন্দ বলতে শিশুর জন্মের পর আকিকা, জন্মদিন, ব্যক্তিগত সাফল্য, নতুন ব্যবসা শুরু, নতুন বাড়ি তৈরি, বিয়ে, খৎনাসহ বিভিন্ন উপলক্ষে মেজবানের আয়োজন করে থাকেন অনেকেই। এছাড়া কারো মৃত্যুর পর কুলখানি, মৃত্যুবার্ষিকীতেও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে মেজবানের আয়োজন করা হয়।

চট্টগ্রামের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে অতিথিদের খাবার গ্রহণের পরিমাণ অনেকটা নির্ধারিত থাকলেও মেজবানে তা থাকে না। ফলে মেজবানের খাবার পরিবেশন ব্যবস্থাকে চট্টগ্রামের ভাষায় ‘ঢালা খানা’ বলা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে সকাল থেকে শুরু হয়ে মেজবানের অনুষ্ঠান চলে দুপুর পর্যন্ত। তবে বর্তমান সময়ে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্তও এ ভোজন অনুষ্ঠান চলতে দেখা যায়। এ খাবার সবার জন্য উন্মুক্ত। এতে দাওয়াত ছাড়াও অংশ নেন অনেকেই।এখানে ইলিশ ও অন্যান্য সুস্বাদু মাছের তুলনায় গরু-খাসি ও বুটের ডালের মেজবানকে লোভনীয় ও মজাদার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। গত কয়েক দশকে চট্টগ্রামের মেজবান ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় শোক দিবসে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করে আসছিলেন চট্টগ্রামের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও চসিকের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। যা এখনও চলমান।

এর আগে, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জন্য মেজবানের আয়োজন করে চট্টগ্রামে রাউজান থানা আওয়ামী লীগ। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মেজবানের আয়োজন করে থাকেন চট্টগ্রাম কমিউনিটির লোকেরা। চাটগাঁয়ের এ ভোজন সংস্কৃতি দিন দিন হয়ে উঠছে জনপ্রিয়।