নেত্রকোনা জেলায় ঝড়ে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার হাওর বেষ্টিত উপজেলা মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরীতে এই ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। কৃষকদের মাঝে চলতি মৌসুমের ধান কেটে ঘরে তোলার আমেজ চলছে। কিন্তু ঠিক এ মুহূর্তে ভয়াবহ ঝড়ে সেই আমেজে ভাটা পড়েছে। নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রোববারের এই ঝড়ে ওই তিন উপজেলায় কমপক্ষে ১৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে ভালো ফলন হলেও ঘরে ধান তুলতে পারবেন না ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এতে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে তাদের।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে হাওরের খালিয়াজুরী উপজেলায় ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, মদনে ১৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর ও মোহনগঞ্জ ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে বলে আশা ছিল কৃষকদের। বেশির ভাগ জমির ধানই পাকতে শুরু করেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে ব্রি-২৮ জাতের ধানের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের ধান কাটা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে আগাম জাতের লাগানো কিছু কিছু জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু ঝড়ে কৃষকদের সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করে দেখা গেছে হাওরাঞ্চলের ১৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মদনের তিয়শ্রী ইউনিয়ের বাগজান গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া, খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দীপুর গ্রামের আরিফ মিয়া, মোহনগঞ্জ উপজেলার হাটনাইয়া গ্রামের হাসেম মিয়া, নলজুরী গ্রামের হেলিম মিয়াসহ অনেকেই বলেন, হাওরের এক ফসলি জমির ফসল দিয়ে সারা বছর পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। রোববার রাতের গরম ঝড়ো হাওয়ায় জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঋণ করে জমিতে ফসল উৎপাদন করেছিলাম। এখন সারা বছর খাবো কী আর কী দিয়ে ঋণ পরিশোধ করব। সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, তাহলে পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
মদন উপজেলার মাঘান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সামসুল আলম চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, ইউনিয়নের প্রায় ১৪ আনা জমির ফসলক্ষতি হয়েছে।
মদন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান জানান, প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে আমি স্থানীয় কৃষি অফিসারদের নিয়ে মদন, মোহনগঞ্জ ও কালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করছি।





















