০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

ইয়াসের প্রভাবে নির্ঘুম নদী তীরবর্তী মানুষ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। নদীভাঙনের শঙ্কায় আছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে উপজেলার কুশিয়ারচর এলাকার নদী-তীরবর্তী ১০ বাড়িসহ প্রায় ১৫ বিঘা ফসলি জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। এদিকে নদীভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও অর্ধশত ঘর-বাড়িসহ ফসলি জমি।এছাড়া ওই ধূলসুরা, বাহাদুরপুর, কোর্টকান্দি, মালুচি পদ্মার পাড় এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী-তীরবর্তী এলাকায় অনেকের বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে এবং অনেক গাছপালাও কেটে ফেলা হয়েছে। মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন বলেন, ইয়াসের কারণে মানিকগঞ্জে পদ্মা ও যমুনার পানি বৃদ্ধি পায়। এতে অসময়ে হরিরামপুর উপজেলার ধূলসুরা, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের নদী-তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ৪ মাসের মধ্যে বাহাদুরপুর থেকে কাঞ্চনপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার পদ্মাপাড় এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

একই গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন (৫৫) বলেন, এবারসহ দুবার বাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। একজন মানুষের দুবার নদীতে বাড়ি ভাঙলে কিছুই থাকে না। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ বিঘা ফসলি জমি হারাইছি। অন্যের জায়গায় কোনোমতে ঘর তুলে আছি। পদ্মার পাড়ে স্থায়ী একটি বাঁধের জন্য সরকারের দৃষ্টি কমনা করেন তিনি।

সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা হাবেজা বেগম বলেন, ‘থাকার ব্যবস্থা নাই, আমরা খুব কষ্টে আছি। বাড়ির অর্থেক ভাইঙ্গা গেছে। এইটুকুও যদি নদীতে চলে যায় মাথা গোঁজার কোনো জায়গা থাকব না। পদ্মায় এইটুকু না নিলে আমারা থাকবার পারমু। নদীতে বাড়ি ভাইঙ্গা গেলে কই যামু, কই থাকমু এই চিন্তায় ঘুমাইতেও পারি না। আমাগো দুঃখ-কষ্ট দেখার মতো কেউ নাই। পদ্মা আমাগোর সব শেষ কইরা দিল।’

কুশিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা সুমন বেপারি (৫০) বলেন, ‘পদ্মা আমার বাড়ি-ঘর কেড়ে নিল। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে এখন আমি কোথায় যামু? কী করমু? নতুন করে ঘরবাড়ি তোলার মতো নিজের জায়গাও নাই। ঘর-দরজা অন্যের জায়গায় রাখছি, নিজের জায়গা না থাকায় খুব বেকায়দায় পড়েছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জিয়া বলেন, আমাদের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ১৩ মৌজার মধ্যে ১২টি নদীগর্ভে চলে গেছে। বাকি একটি মৌজার অর্ধেকও পদ্মায় গ্রাস করেছে। নদীভাঙন ঝুঁকি নিয়েই তীরবর্তী মানুষ বসবাস করছে। এক সপ্তাহে ১০টি বসতবাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং আরও অর্ধশত ঘর-বাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে।

ট্যাগ :

বীরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

ইয়াসের প্রভাবে নির্ঘুম নদী তীরবর্তী মানুষ

প্রকাশিত : ১২:০১:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুন ২০২১

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ। নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। নদীভাঙনের শঙ্কায় আছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ইতোমধ্যে উপজেলার কুশিয়ারচর এলাকার নদী-তীরবর্তী ১০ বাড়িসহ প্রায় ১৫ বিঘা ফসলি জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। এদিকে নদীভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে আরও অর্ধশত ঘর-বাড়িসহ ফসলি জমি।এছাড়া ওই ধূলসুরা, বাহাদুরপুর, কোর্টকান্দি, মালুচি পদ্মার পাড় এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী-তীরবর্তী এলাকায় অনেকের বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে এবং অনেক গাছপালাও কেটে ফেলা হয়েছে। মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন বলেন, ইয়াসের কারণে মানিকগঞ্জে পদ্মা ও যমুনার পানি বৃদ্ধি পায়। এতে অসময়ে হরিরামপুর উপজেলার ধূলসুরা, কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের নদী-তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ৪ মাসের মধ্যে বাহাদুরপুর থেকে কাঞ্চনপুর পর্যন্ত চার কিলোমিটার পদ্মাপাড় এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।

একই গ্রামের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন (৫৫) বলেন, এবারসহ দুবার বাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। একজন মানুষের দুবার নদীতে বাড়ি ভাঙলে কিছুই থাকে না। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ বিঘা ফসলি জমি হারাইছি। অন্যের জায়গায় কোনোমতে ঘর তুলে আছি। পদ্মার পাড়ে স্থায়ী একটি বাঁধের জন্য সরকারের দৃষ্টি কমনা করেন তিনি।

সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা হাবেজা বেগম বলেন, ‘থাকার ব্যবস্থা নাই, আমরা খুব কষ্টে আছি। বাড়ির অর্থেক ভাইঙ্গা গেছে। এইটুকুও যদি নদীতে চলে যায় মাথা গোঁজার কোনো জায়গা থাকব না। পদ্মায় এইটুকু না নিলে আমারা থাকবার পারমু। নদীতে বাড়ি ভাইঙ্গা গেলে কই যামু, কই থাকমু এই চিন্তায় ঘুমাইতেও পারি না। আমাগো দুঃখ-কষ্ট দেখার মতো কেউ নাই। পদ্মা আমাগোর সব শেষ কইরা দিল।’

কুশিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা সুমন বেপারি (৫০) বলেন, ‘পদ্মা আমার বাড়ি-ঘর কেড়ে নিল। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে এখন আমি কোথায় যামু? কী করমু? নতুন করে ঘরবাড়ি তোলার মতো নিজের জায়গাও নাই। ঘর-দরজা অন্যের জায়গায় রাখছি, নিজের জায়গা না থাকায় খুব বেকায়দায় পড়েছি।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জিয়া বলেন, আমাদের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ১৩ মৌজার মধ্যে ১২টি নদীগর্ভে চলে গেছে। বাকি একটি মৌজার অর্ধেকও পদ্মায় গ্রাস করেছে। নদীভাঙন ঝুঁকি নিয়েই তীরবর্তী মানুষ বসবাস করছে। এক সপ্তাহে ১০টি বসতবাড়ি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং আরও অর্ধশত ঘর-বাড়ি ঝুঁকিতে রয়েছে।