যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচটি ইউপির কয়েকশ ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে চলমান এই ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে আরো অনেক ফসলি জমি ও বসতবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোতে বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাসিন্দারা জানান, প্রায় এক দশক আগে যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকেই বাস্তুহারা হন। এরপর কৈজুরি ইউপির বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন তারা।
চলতি বছর আবার যমুনা ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। গিলে খাচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ নদীর পাড়ের সব স্থাপনা। যে ভাঙন এর মধ্যে পৌঁছে গেছে শওকত আলীর ঘরের দোরগোড়ায়।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন শরিফের মোড় এলাকায় আশ্রয় গড়ে তোলা কয়েক শ মানুষ যমুনার ভয়াল ভাঙনে নতুন করে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। আগাম সতর্কতা হিসেবে অনেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর তৈরি করা ঘর সরিয়ে নিচ্ছেন। তবে, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে তার অন্য ঘরটিও যে কোনো মুহূর্তে চলে যেতে পারে যমুনার গর্ভে। শেষ আশ্রয়টি হারিয়ে গেলে নতুন কোনো ঘর তোলার সামর্থ্য নেই বলে তারা জানান।
ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল ও হাটপাচিল নামের দুটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে কেউ বাঁধের উপর, আবার কেউ দূরবর্তী কোনো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত তারা সরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকার বাসিন্দারা বলেন, ‘আমাগের দুরবস্থা দেহার কেউ নাই।’
শাহজাদপুরের ইউএনও শামসুজ্জোহা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার জন্য ভাঙনে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউএনও শাহ মো. শামসুজ্জোহা জানান, হঠাৎ করে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার কৈজুরি, জালালপুর, সনাতনী, গালা ও খুকনি ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী ১৩টি গ্রামে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এলাকাগুলোতে বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হলেও কাজ হচ্ছে না।
ইউএনও আরো জানান, শাহজাদপুর এলাকায় যমুনার ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর মধ্যে ৬০০ কোটি টাকার একটা প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। আশা করছি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে এই অঞ্চলে যমুনার ভাঙন স্থায়ীভাবে রোধ করা যাবে।