এ যেন রূপকথার গল্পের মতো কারো বিয়ে সাধি বা মুসলমানি বা যে কোন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সামগ্রী চাইলেই পাওয়া যেত এই দিঘী থেকে। ‘মাছুমাবাদ দিঘী’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশালাকার আয়তন প্রায় ৩০ একর জমি নিয়ে গঠিত এই দিঘীটি । যার গভীরতা প্রায় ১৫ -২০ ফুট। চতুর্দকে ঝুঁকে থাকা বৃক্ষরাজীবেষ্টিত এই দিঘীর ঘাটে বাধাঁ স্পীটবোট। দিঘীর দু পাশে রয়েছে সুপ্রশস্থ সান বাঁধানো ঘাটলা। পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে জনবসতি উত্তর পাশে রয়েছে মন্দির ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে কবরস্থান। পাকা সরু রাস্তা দিয়ে বেষ্টিত। চতুর্দিকে সুউচ্চ মাটির ঢিবি।দিঘীর নীল জলরাশীর মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন দ্বীপ যে কারোরই মন ছুঁয়ে যাবে। দিঘীর মাঝখানে গড়ে উঠা দ্বীপটির মাঝেও রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঘাটলা সবুজে গেঁড়া বৃক্ষ এবং একটি বাড়ি যা দিঘীর সৌন্দর্যকে আরো ফুটিয়ে তুলেছে। প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো দিঘী মোঘল আমলের কীর্তি বহন করছে। দিঘী নিয়ে রয়েছে নানা রূপকথার গল্প। মধ্যযুগের বিখ্যাত মাছুমাবাদ দিঘী যা সারা বাংলার এক অনুপম সৌন্দর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক দিঘী। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যে কোন ভ্রমণপিপাষুদের মন ছুঁয়ে যাবে। রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মাছুমাবাদ এলাকায় অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মাছুমাবাদ দিঘীটি কবে, কখন খনন করা হয়েছে তার কোন সঠিক তথ্য কারো জানা নাই।
তবে এলাকাবাসী ও ঐতিহাসিকদের মতে বাংলার বার ভূইয়া প্রধান ঈসা খাঁনের সিপাহসালার প্রধান দেওয়ান মাছুম খাঁন কাবলী স্থানীয়দের পানিয় জলের অভাব দূর করার জন্য আনুমানিক ১৫০০ খ্র্রিস্টাব্দের কিছু পূর্বে এটা খনন করেন। কথিত আছে ৩০ হাজার শ্রমিক ও ৫০০ হাতির সাহায্যে খনন করা হয়েছে এই দিঘী। দিঘীর মাঝখানে যে দ্বীপটি রয়েছ তাতে যাতায়াতের জন্য দিঘীর পশ্চিম পাশে একটি রাস্তা ছিল। বিগত ১৯৮৬-১৯৮৭ সনে দিঘীটি সংস্কার করার সময় ঐ রাস্তাটি কেটে ফেলা হয়।
লোকমুখে প্রচলিত আছে, প্রাচীনকালে এই দিঘী থেকে পাওয়া যেতো বিয়ে শাদির জন্য ব্যবহৃত সকল প্রকার হাঁড়িপাতিল, বাসন-চামচ খানাপিনার সব উপকরণ। সেই সময়কালে কোন বিয়ে সাধি বা সামাজিক অনুষ্ঠান হলে সন্ধ্যায় দিঘীর পাড়ে চাহিদাপত্র লিখে রেখে আসলে পরদিন দিঘীতে অলৌকিকভাবে ঐসব জিনিস পত্র নিয়ে নৌকা ভাসতো।
আরো রূপকথার গল্প রয়েছে এই দিঘীকে ঘিরে কথা হয় দিঘীর পাড়ের স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের সাথে তারা জানান, বাপ দাদাগো মুখে শুনেছি হেগো আমলের আগেও এই দিঘী আছিলো। মাছুমাবাদ এলাকার সবচেয়ে প্রবীণ নরেন্দ্র চন্দ্র সাহা বলেন, দিঘীটার বয়স ৫০০ বছরের উপরে, আমরা এটাকে গায়েবি দিঘী বলেই চিনি। মুড়াপাড়া থেকে দিঘীর পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন জান্নাতি আক্তার জিম বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দিঘীটি সত্যিই অসাধারণ এবং তার মাঝখানে দ্বীপটি দিঘীকে সোনায় সোহাগা করে তুলেছে। পরিকল্পনার অভাবে পরিবেশ রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্রমেই আকর্ষণ হারাচ্ছে এক সময়ের মধ্যযুগের বিখ্যাত অমর কীর্তি মাছুমাবাদ দিঘী। সঠিক পরিকল্পনা, পরিবেশ ও নিরাপত্তাসহ পযর্টকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে পারলে মাছুমাবাদ দিঘী হতে পারে পর্যটকদের মিলনমেলার কেন্দ্রবিন্দু