০৪:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সমুদ্র উপকূলের ৩৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এর মধ্যে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় ৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উপকূলবর্তী এ এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খেপুপাড়া উপবিভাগের দেয়া তথ্যানুসারে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় উপজেলার অন্তত পাঁচটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় লোকালয়। এতে ভেসে যায় হাজার হাজার পুকুর ও মৎস্য খামার। বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের মধ্যে রয়েছে ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারের নিজামপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ৫৪/এ নম্বর পোল্ডারের দেবপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ৫৪/এ নম্বর পোল্ডারের গ-ামারী পয়েন্টে দশমিক ৩০ কিলোমিটার, ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডারের ধূলাসার পয়েন্টে দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার, ৪৭/৫ নম্বর পোল্ডারের পশরবুনিয়া পয়েন্টে দশমিক ১১ কিলোমিটার জোয়ারের পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারের নিজামপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ও ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডারের ধূলাসার পয়েন্টে দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরুরি সংস্কারের কাজ চলছে। বাকি বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে লালুয়া ইউনিয়নের প্রায় সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সিডরের সময় বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে আর সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে গোটা লালুয়া ইউনিয়ন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় থাকে পানিবন্দি। শুধু তা-ই নয়। বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিদিন দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় লালুয়া ইউনিয়নের মোট ২৬টি গ্রামের ২৩টি গ্রামই থাকে পানির নিচে। অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমার জোতে এসব এলাকার হাজারো মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুবার জোয়ারের পানি ওঠা-নামা করায় এলাকার কাঁচা রাস্তাগুলো এরই মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধে বালির বস্তা ফেলে কোনোরকমে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করা হয়েছে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমে যেকোনো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে আবারো প্লাবিত হবে লোকালয়।লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, এ ইউনিয়নে পাকা সড়ক আছে পাঁচ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক আছে ২০ কিলোমিটার। ইউনিয়নের প্রায় সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সিডরের সময় বিধ্বস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে আট কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোতে। জোয়ার-ভাটার কারণে লালুয়ার ২০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক অনেকটা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে ইউনিয়নের মানুষ সাগরে নি¤œচাপ সৃষ্টির খবর পেলেই থাকে আতঙ্কে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খেপুপাড়া উপবিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, অক্ষত বেড়িবাঁধগুলোর মধ্যে ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারের নিজামপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডারের ধূলাসার পয়েন্টে দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারকাজ চলছে। বাকি অক্ষত বেড়িবাঁধ পুনঃসংস্কার প্রকল্প প্রণয়ন চলছে, যা আগামী দুই মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। কুয়াকাটা স্থায়ী বিচ রক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৫০ কোটি টাকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্ক

প্রকাশিত : ১২:০১:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুন ২০২১

ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সমুদ্র উপকূলের ৩৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এর মধ্যে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় ৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে সমুদ্র উপকূলবর্তী এ এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খেপুপাড়া উপবিভাগের দেয়া তথ্যানুসারে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময় উপজেলার অন্তত পাঁচটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় লোকালয়। এতে ভেসে যায় হাজার হাজার পুকুর ও মৎস্য খামার। বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের মধ্যে রয়েছে ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারের নিজামপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ৫৪/এ নম্বর পোল্ডারের দেবপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ৫৪/এ নম্বর পোল্ডারের গ-ামারী পয়েন্টে দশমিক ৩০ কিলোমিটার, ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডারের ধূলাসার পয়েন্টে দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার, ৪৭/৫ নম্বর পোল্ডারের পশরবুনিয়া পয়েন্টে দশমিক ১১ কিলোমিটার জোয়ারের পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের মধ্যে ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারের নিজামপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ও ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডারের ধূলাসার পয়েন্টে দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরুরি সংস্কারের কাজ চলছে। বাকি বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে লালুয়া ইউনিয়নের প্রায় সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সিডরের সময় বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে আর সংস্কার করা হয়নি। বর্তমানে গোটা লালুয়া ইউনিয়ন ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় থাকে পানিবন্দি। শুধু তা-ই নয়। বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিদিন দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। এ সময় লালুয়া ইউনিয়নের মোট ২৬টি গ্রামের ২৩টি গ্রামই থাকে পানির নিচে। অমাবস্যা কিংবা পূর্ণিমার জোতে এসব এলাকার হাজারো মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। প্রতিদিন দুবার জোয়ারের পানি ওঠা-নামা করায় এলাকার কাঁচা রাস্তাগুলো এরই মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধে বালির বস্তা ফেলে কোনোরকমে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করা হয়েছে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুমে যেকোনো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে আবারো প্লাবিত হবে লোকালয়।লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস জানান, এ ইউনিয়নে পাকা সড়ক আছে পাঁচ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক আছে ২০ কিলোমিটার। ইউনিয়নের প্রায় সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সিডরের সময় বিধ্বস্ত হয়। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে আট কিলোমিটার বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোতে। জোয়ার-ভাটার কারণে লালুয়ার ২০ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক অনেকটা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অরক্ষিত বেড়িবাঁধের কারণে ইউনিয়নের মানুষ সাগরে নি¤œচাপ সৃষ্টির খবর পেলেই থাকে আতঙ্কে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খেপুপাড়া উপবিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী বলেন, অক্ষত বেড়িবাঁধগুলোর মধ্যে ৪৭/১ নম্বর পোল্ডারের নিজামপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার, ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডারের ধূলাসার পয়েন্টে দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারকাজ চলছে। বাকি অক্ষত বেড়িবাঁধ পুনঃসংস্কার প্রকল্প প্রণয়ন চলছে, যা আগামী দুই মাসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। কুয়াকাটা স্থায়ী বিচ রক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৫০ কোটি টাকা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।