আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মানিকগঞ্জের শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা-যমুনার চরাঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে দামও ভালো পাওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।
জানা যায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও শিবালয় উপজেলার মূল ভূখন্ডের অর্ধেক জমি পদ্মা-যমুনা নদীর ব্যাপক ভাঙনে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ওই সব জমি এখন নদীর মাঝখানে চরাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। জেগে উঠা ওই সব চরে ফসল হিসেবে বাদাম, মাশকালাই এবং ভূট্টার চাষাবাদ হয়ে থাকে। চরাঞ্চলে অন্যান্য ফসলের চেয়ে বাদামে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন চাষিরা বাদামের প্রতি অধিক অগ্রহী হয়ে উঠেছে।
অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মানিকগঞ্জে অধিক জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। তাছাড়া জমিতে বর্ষার পানি আসার আগেই চাষিরা জমি থেকে বাদাম ঘরে তুলতে পেরে অনেকটাই চিন্তা মুক্ত। সদর উপজেলার কাফাটিয়া বাজারের খুচরা বিক্রেতা আবুল কাশেম বলেন, হরিরামপুর থেকে প্রতিমণ বাদাম ৩২০০ টাকা দরে কিনে এনেছি। যাতায়াত খরচসহ ৩৩০০ টাকা পড়েছে। খুচরা প্রতি কেজি ১০০ টাকা ধরে চার হাজার টাকা মণ বিক্রি করছি।
শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান জানান, চলিত মৌসুমে শিবালয়ের যমুনার চরে ১২০ হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৭৬ হেক্টর জমিতে। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে এক দশমিক ৯৪ থেকে দুই দশমিক ২৪ মেট্রিক টন পর্যন্ত। তিনি আরো জানান, শিবালয়ে কৃষকদের সরকারি প্রণোদনা হিসেবে প্রায় ১৫০০ কৃষকের মাঝে জনপ্রতি ১০ কেজি পরিমাণ উন্নতমানের বীজ বিতরণ করা হয়েছিল। এদের মধ্যে তেওতা ইউপির ১৪০০, শিবালয়ে ৫০ ও উথলী ইউপির ৫০ জন কৃষকের মাঝে এই প্রণোদনা প্রদান করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জুবায়ের আহম্মেদ জানান, এ বছর মানিকগঞ্জে ৯ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৮৬০ হেক্টর বেশি। বাদামে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন থাকায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে। বাদাম একদিকে যেমন খাদ্যের যোগান দিয়ে থাকে অন্যদিকে ভোজ্য তেলের চাহিদা মিটিয়ে কচিপাতা গবাদি পশুর খাদ্য চাহিদাও পূরণ করে। চলতি বছরে মানিকগঞ্জে বাদামের ফলন ভালো হওয়ায় শিবালয় উপজেলার প্রায় দুই সহস্রাধিক কৃষক লাভের মুখ দেখেছেন। চর এলাকায় বাদাম চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।