০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

কুড়িগ্রামে ভাঙনে বিপর্যস্ত তিস্তার দুই তীরের মানুষ

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দুই তীরের মানুষ। প্রতি বর্ষা মৌসুমে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সরকারি তেমন পদক্ষেপ না থাকায় হতাশ নদী অববাহিকায় বসবাসকারীরা।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনার কারণে বর্তমানে কোনো প্রকল্প চলমান নেই। তিস্তার ভাঙন রোধে মেগা প্রকল্প অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে কাজ শুরু হবে। তবে এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে।

কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী তিস্তা নদী প্রবাহিত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে যাওয়ায় ভয়াল রূপ ধারণ করেছে এ নদী। এক সপ্তাহের ভাঙনে তিস্তার অববাহিকার উলিপুর, রাজারহাট ও চিলমারী উপজেলার গড়াই পিয়ার, খেতাবখাঁ, গতিয়াসাম, বুড়িরহাট, কালিরহাট, ডাংরারহাট, কাশিমবাজারসহ অন্তত ১৫টি স্থানে প্রায় দেড় শতাধিক ঘর-বাড়ি ও বিস্তীর্ণ আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা।

উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গড়াই পিয়ার গ্রামে তিস্তাপাড়ের আব্দুল মজিদ জানান, গত এক সপ্তাহে গড়াই পিয়ার এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে দুটি ওয়ার্ড তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রায় ৬০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয় মাঠ ও খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

একই এলাকার মমিনা জানান, তিস্তার ওপারে আমার বাড়ি ছিল। সে বাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার পর এখানে বাড়ি করেছি। এ বাড়িও ভেঙে গেছে। এখন কোথায় যাব জানি না। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। কোথাও যে একটু জায়গা কিনে বাড়ি করব, সে উপায়ও নেই।চিলমারী উপজেলার কাশিমবাজার এলাকার জয়নাল আবেদীন জানান, অবিলম্বে যদি তিস্তার ভাঙন রোধ করা না হয়, তাহলে চলতি বর্ষা মৌসুমে আরো শতশত পরিবার ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে। বিভিন্ন স্থাপনাসহ তিস্তা পাড়ের মানুষের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষায় স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার ভাঙন রোধে বিভিন্ন প্রকল্প চলমান। ভাঙন কম থাকলেও তিস্তা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা থাকায় এ মুহূর্তে তিস্তায় কোনো প্রকল্প চলমান নেই। তবে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তিস্তা নিয়ে প্রক্রিয়াধীন মেগা প্রকল্প অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করা সম্ভব। তখন তিস্তার পারের মানুষ ভাঙন ও বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

কুড়িগ্রামে ভাঙনে বিপর্যস্ত তিস্তার দুই তীরের মানুষ

প্রকাশিত : ১২:০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দুই তীরের মানুষ। প্রতি বর্ষা মৌসুমে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সরকারি তেমন পদক্ষেপ না থাকায় হতাশ নদী অববাহিকায় বসবাসকারীরা।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনার কারণে বর্তমানে কোনো প্রকল্প চলমান নেই। তিস্তার ভাঙন রোধে মেগা প্রকল্প অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে কাজ শুরু হবে। তবে এ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে।

কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী তিস্তা নদী প্রবাহিত হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে যাওয়ায় ভয়াল রূপ ধারণ করেছে এ নদী। এক সপ্তাহের ভাঙনে তিস্তার অববাহিকার উলিপুর, রাজারহাট ও চিলমারী উপজেলার গড়াই পিয়ার, খেতাবখাঁ, গতিয়াসাম, বুড়িরহাট, কালিরহাট, ডাংরারহাট, কাশিমবাজারসহ অন্তত ১৫টি স্থানে প্রায় দেড় শতাধিক ঘর-বাড়ি ও বিস্তীর্ণ আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ সরকারি-বেসরকারি নানা স্থাপনা।

উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গড়াই পিয়ার গ্রামে তিস্তাপাড়ের আব্দুল মজিদ জানান, গত এক সপ্তাহে গড়াই পিয়ার এলাকার তিনটি ওয়ার্ডের মধ্যে দুটি ওয়ার্ড তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়েছে। প্রায় ৬০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয় মাঠ ও খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

একই এলাকার মমিনা জানান, তিস্তার ওপারে আমার বাড়ি ছিল। সে বাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার পর এখানে বাড়ি করেছি। এ বাড়িও ভেঙে গেছে। এখন কোথায় যাব জানি না। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন। কোথাও যে একটু জায়গা কিনে বাড়ি করব, সে উপায়ও নেই।চিলমারী উপজেলার কাশিমবাজার এলাকার জয়নাল আবেদীন জানান, অবিলম্বে যদি তিস্তার ভাঙন রোধ করা না হয়, তাহলে চলতি বর্ষা মৌসুমে আরো শতশত পরিবার ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে। বিভিন্ন স্থাপনাসহ তিস্তা পাড়ের মানুষের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষায় স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার ভাঙন রোধে বিভিন্ন প্রকল্প চলমান। ভাঙন কম থাকলেও তিস্তা নিয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা থাকায় এ মুহূর্তে তিস্তায় কোনো প্রকল্প চলমান নেই। তবে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তিস্তা নিয়ে প্রক্রিয়াধীন মেগা প্রকল্প অনুমোদন হলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করা সম্ভব। তখন তিস্তার পারের মানুষ ভাঙন ও বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে।