র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরনের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ বিগত দিনগুলোতে অপহরণকারী আসামীদের বিরুদ্ধে ৩৭ টি অভিযান পরিচালনা করে ৩৭ জন ভিকটিম উদ্ধারসহ ৩৮ জন অপহরণকারী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর দুপুরে র্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান,২০১৮ সালে এক হতদরিদ্র দিনমজুরের কন্যা সন্তান জীবিকার তাগিদে রাস্তায় ফুল ও কাগজের স্টিকার বিক্রি শুরু করে। প্রতিদিনের মতো ভিকটিম ফুল বিক্রি করতে রাস্তায় যায় এবং দিন শেষে সে আর বাসায় আসেনি। মেয়েকে বাসায় আসতে না দেখে ভিকটিমের পিতা মাতা হন্যে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় তার সন্ধান করতে থাকে। তাদের চেনা জানা সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর একপর্যায়ে ভিকটিমের বাবা মা তাদের সন্তানকে খুঁজে না পেয়ে গুলশান থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করে। ডায়েরী করার ৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোন খোঁজ না পেয়ে তারা র্যাব-৩ এ একটি অভিযোগ করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এবং গুলশান থানায় নিখোঁজ ডায়েরীর ভিত্তিতে র্যাব-৩ ছায়া তদন্ত শুরু করে জানতে পারে যে, তাদের মেয়েকে অপহরণ করে গ্রেফতারকৃত আসামী নিজ বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে আটকে রেখে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করে আসছে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গত সাত দিন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে গত ১৮ ডিসেম্বর ২২ ইং গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চার বছর পূর্বে অপহরণপূর্বক আটককৃত এবং গৃহকর্মী হিসেবে নির্মম নির্যাতনের শিকার এক অসহায় পথশিশুকে উদ্ধার করে এবং সেই ঘৃণ্যিত অপরহণকারী মোঃ আব্দুল্লাহ (৩৯)রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে গুলশান এলাকার আজাদ মসজিদের সামনে ফুটপাতে পথশিশু ভিকটিমকে ফুল ও কাগজের স্টীকার বিক্রি করা অবস্থায় দেখতে পায়। সেখান থেকেই অপহরণকারী তাকে টার্গেট করে এবং বেশ কয়েকদিন তাকে অনুসরণ করতে থাকে। এরপর একদিন বিকেলে ফুল বিক্রি করার সময় অপহরণকারী ভিকটিমকে ডেকে তার নাম জিজ্ঞেস করে এবং তার ছেঁড়া জামা কাপড় দেখে নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভিকটিম শিশুটিকে একটি মার্কেটে নিয়ে যায়। নতুন জামা কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনে দিয়ে ভিকটিমকে অপহরণকারী তার
স্টীলের কারখানায় নিয়ে যায়। কারখানায় নিয়ে শিশুটিকে ৭/৮ দিন রাখার পর তাকে স্থানীয় এক দালালের কাছে গৃহ পরিচারিকা হিসেবে ২০,০০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রির জন্য বায়নাপত্র করা হয়। কিন্তু কারখানায় থাকার ফলে খাবার এবং পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে শিশুটি অসুস্থ হয়ে গেলে তার অবস্থা দেখে উক্ত দালাল শিশুটিকে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। শিশুটি অতিমাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ শিশুটিকে তার নিজ বাসায় নিয়ে যায় এবং তাকে দিয়ে গৃহপরিচারিকার সকল কাজকর্ম করাতে থাকে। গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহ আরও জানায় যে, সে মূলত অর্থের লোভে শিশুটিকে চড়ামূল্যে বিক্রির আশায় অপহরণ করেছিল। কিন্তু আশানুরুপমূল্যে বিক্রি করতে না পারায় তার নিজ বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজে ভিকটিমকে নিয়োজিত করে।
ভিকটিমের জবানবন্দিতে জানা যায়, অপহরণের পর আটক থাকাকালীন শিশুটি বাবা মার কাছে যাওয়ার জন্য গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহর নিকট অনেক কাকুতি মিনতি করলেও তাতে কোন কাজ হয় না । যতদিন যায় শিশুটি তার বাবা মার কাছে যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়তই কান্নাকাটি করে এবং তাদের বাসায় যারা নিয়মিত যাতায়াত করত তাদের অনেকের কাছেই শিশুটি তার বাবা মার বস্তির ঠিকানা দিয়ে সেই ঠিকানায় তাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করত।এভাবেই দুঃখ কষ্টে নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেফতারকৃত আব্দুল্লাহর গৃহ পরিচারিকা হিসেবে ভিকটিম ৪ বছর কাটিয়ে দেয়।
ভিকটিম ০৪ বছর পূর্বে অপহৃত হওয়ার সময় ১২ বছরের এক নাবালিকা শিশু ছিল। বর্তমানে তার বয়স ১৬ বছর। সে ১০ বছর বয়স থেকে গুলশানের বিভিন্ন রাস্তায় ফুল ও কাগজের স্টীকার বিক্রি করে বাবা মায়ের অভাব অনটনের সংসারে আর্থিকভাবে সহায়তা করত। ভিকটিমের বাবা সিটি কর্পোরেশনের পরিছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করত এবং বর্তমানে সে রিক্সা চালক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ফারজানা হক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) র্যাব-৩।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

























