১২:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিশিরভেজা শিউলি ফুল যেন হৃদয় ছোঁয়া প্রকৃতির নির্মল ভালোবাসা

সকালে শিশিরমাখা শিউলি ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। ঝলমল করছে দুপুরের রোদ। সন্ধ্যা ও ভোরে এখন বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া ও কুয়াশা বা শিশির পড়া শুরু হয়ে গেছে। আমরা জানি, বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রূপের পসরা নিয়ে হাজির হয়। এক-এক ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফুলে ও ফলে, ফসলে ও সৌন্দর্যে সেজে ওঠে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোন দেশের প্রকৃতিতে ঋতুবৈচিত্র্যর এমন রূপ বোধ হয় নেই। শিউলি মূলত শরতেরই ফুল। তবে হেমন্তও বঞ্চিত নয় শিউলির শোভা ও সৌরভ থেকে। ফুল ফোটা দিনে দিনে কমে এলেও কার্তিকের শেষাবধি তার দেখা পাওয়া যাবে।ভোরবেলায় শিশির মাখা শিউলি ফুল কুড়াতে যাওয়ার স্মৃতিও অম্লান সেই অনুরক্তদের অন্তরে। শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে রূপময়। শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দুর্বাঘাসের ওপর চাদরের মত বিছিয়ে থাকে সাদা আর জাফরন রং মেশানো রাশি রাশি শিউলিফুল। ভোরের এই সুরভিত বাতাস মনে জাগায় আনন্দের বন্যা। তাই খুব ভোরে কিশোর কিশোরীরা ছুটে যায় শিউলি তলায়। সূর্য ওঠে সোনার আলোয়। নির্মল আলোয় ভরে যায় চারদিক।
জন্মস্থান উত্তর-ভারত। বৈজ্ঞানিক নাম Nyctanthes arbor-tristis। আমাদের দেশের সব অঞ্চলেই জন্মে। লাতিন Nyctanthes-এর অর্থ হচ্ছে ‘সন্ধ্যায় ফোটা’ এবং arbor-tristis-এর মানে হচ্ছে ‘বিষণ্ন গাছ’। সন্ধ্যায় ফোটা আর সকালে ঝরা ফুলের মধ্যে বিষণ্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এই রকম নামকরণের কারণ বলে ধারণা করা হয়। ঝরা ফুলগলো যেমন তরতাজা, শিশির গুলোও তেমনি হিরার টুকরা। যদিও সাধারণভাবে এটি শিউলি নামেই পরিচিত। যাই হোক এই শিউলি ফুলের আর এক নাম পারিজাত।
শিউলির ভেষজ গুণ: অন্যান্য গাছ গাছড়ার মত শিউলির ও রয়েছে ভেষজ গুণ। বিখ্যাত অমরকোষ গ্রন্থের রচয়িতা অমর সিংহ শিউলিকে বণৌষধী হিসাবে নথিভূক্ত করেছেন। আর্য়বেদিক শাস্ত্রে শিউলির থেকে শিউলির পাতার ভেষজ গুণ বেশি করে উল্লেখ্য করা আছে। ভারতীয় বনৌষধি নামক গ্রন্থে উল্লেখ্য আছে বাতরোগে শিউলি পাতার রস খুব উপকারী। এই গ্রন্থে শিউলিকে ভেষজ জগতেও চানক্য হিসাবে অভিহিত করে বলা হয়েছে যে শত ভীমরুলের হাত থেকে চন্দ্রগুপ্তকে রক্ষা করছিলেন চানক্য। আর মানুষের সায়েটিকা বাতে যখন ভীমরুলের হুল ফোটানর মত যন্ত্রণা আসে তাকে দমন করতে পারে শিউলি। সায়েটিকা বাতে ৮/১০ টি শিউলির পাতা ভালভাবে থোক করে ৪/৫ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছাকতে হবে। এরপর সকাল বিকাল দুবেলা কয়েকদিন করে খাওয়ালে যন্ত্রণার উপশম হবে। নিয়ম অনুযায়ি এই রস খেলে অনেক উপকার হয়।

মেদ রোগ: মেদ কমাতে বৈদ্যরা শিঊলি ডালের চূর্ণ দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে বিকালে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ব্যবস্থা অবলম্বনে কিছু দিনের মধ্যে মেদের হ্রাস লক্ষ্য করা যায়। কৃমিঃ শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল দুবেলা গরম পানি দিয়ে খাওয়ালে কেচোর মত কৃমি পরে যায়। গুড়া কৃমির উপদ্রব ও কমে যায়।

গলা বসা: গলা বসার ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস বেশ উপকারী। শ্লেশ্মার দোষে অনেকের গলার আওয়াজ বসে যায়।, এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়ার নিশ্চয়তা।

জ্বালা: কেউ কেউ দিনের কোন কোন সময় শরীরে জ্বালা অনুভব করেন এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন খাবার প্রয়োজন হলে চালের চূর্ণর সাথে ১ গ্রাম মাত্রায় দুবেলা খাওয়া ভাল।
মূর্ছা রোগ: মূর্ছা রোগে শিউলি পাতার রস ২ চামচ মাত্রায় অল্প গরম করে দুবেলা খেতে হবে। তবে মূর্ছা রোগের শুরুর দিকে খাওয়ালে ভাল ফল দেয়।

খাদ্যে বিষ ক্রিয়া: খাদ্যে বিষক্রিয়ার দরুন রোগী অত্যাধিক বমি করে রোগী দুর্বল হয়ে পরলে, অল্প গরম জলে শিউলির রস ২ বেলা খেলে দুর্বলতা কেটে যায়।

শিউলি চরিত: দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। ঔষধি হিসেবে ব্যবহার হয় শিউলির বীজ, পাতা ও ফুল। এই ফুল বোঁটা শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাউডার বানিয়ে হালকা গরম পানিতে মেশালে চমৎকার রঙ হয়।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

শিশিরভেজা শিউলি ফুল যেন হৃদয় ছোঁয়া প্রকৃতির নির্মল ভালোবাসা

প্রকাশিত : ০৬:৩২:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০২৩

সকালে শিশিরমাখা শিউলি ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। ঝলমল করছে দুপুরের রোদ। সন্ধ্যা ও ভোরে এখন বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া ও কুয়াশা বা শিশির পড়া শুরু হয়ে গেছে। আমরা জানি, বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রূপের পসরা নিয়ে হাজির হয়। এক-এক ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফুলে ও ফলে, ফসলে ও সৌন্দর্যে সেজে ওঠে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোন দেশের প্রকৃতিতে ঋতুবৈচিত্র্যর এমন রূপ বোধ হয় নেই। শিউলি মূলত শরতেরই ফুল। তবে হেমন্তও বঞ্চিত নয় শিউলির শোভা ও সৌরভ থেকে। ফুল ফোটা দিনে দিনে কমে এলেও কার্তিকের শেষাবধি তার দেখা পাওয়া যাবে।ভোরবেলায় শিশির মাখা শিউলি ফুল কুড়াতে যাওয়ার স্মৃতিও অম্লান সেই অনুরক্তদের অন্তরে। শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে রূপময়। শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দুর্বাঘাসের ওপর চাদরের মত বিছিয়ে থাকে সাদা আর জাফরন রং মেশানো রাশি রাশি শিউলিফুল। ভোরের এই সুরভিত বাতাস মনে জাগায় আনন্দের বন্যা। তাই খুব ভোরে কিশোর কিশোরীরা ছুটে যায় শিউলি তলায়। সূর্য ওঠে সোনার আলোয়। নির্মল আলোয় ভরে যায় চারদিক।
জন্মস্থান উত্তর-ভারত। বৈজ্ঞানিক নাম Nyctanthes arbor-tristis। আমাদের দেশের সব অঞ্চলেই জন্মে। লাতিন Nyctanthes-এর অর্থ হচ্ছে ‘সন্ধ্যায় ফোটা’ এবং arbor-tristis-এর মানে হচ্ছে ‘বিষণ্ন গাছ’। সন্ধ্যায় ফোটা আর সকালে ঝরা ফুলের মধ্যে বিষণ্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটাই এই রকম নামকরণের কারণ বলে ধারণা করা হয়। ঝরা ফুলগলো যেমন তরতাজা, শিশির গুলোও তেমনি হিরার টুকরা। যদিও সাধারণভাবে এটি শিউলি নামেই পরিচিত। যাই হোক এই শিউলি ফুলের আর এক নাম পারিজাত।
শিউলির ভেষজ গুণ: অন্যান্য গাছ গাছড়ার মত শিউলির ও রয়েছে ভেষজ গুণ। বিখ্যাত অমরকোষ গ্রন্থের রচয়িতা অমর সিংহ শিউলিকে বণৌষধী হিসাবে নথিভূক্ত করেছেন। আর্য়বেদিক শাস্ত্রে শিউলির থেকে শিউলির পাতার ভেষজ গুণ বেশি করে উল্লেখ্য করা আছে। ভারতীয় বনৌষধি নামক গ্রন্থে উল্লেখ্য আছে বাতরোগে শিউলি পাতার রস খুব উপকারী। এই গ্রন্থে শিউলিকে ভেষজ জগতেও চানক্য হিসাবে অভিহিত করে বলা হয়েছে যে শত ভীমরুলের হাত থেকে চন্দ্রগুপ্তকে রক্ষা করছিলেন চানক্য। আর মানুষের সায়েটিকা বাতে যখন ভীমরুলের হুল ফোটানর মত যন্ত্রণা আসে তাকে দমন করতে পারে শিউলি। সায়েটিকা বাতে ৮/১০ টি শিউলির পাতা ভালভাবে থোক করে ৪/৫ কাপ পানিতে সেদ্ধ করে এক কাপ থাকতে নামিয়ে ছাকতে হবে। এরপর সকাল বিকাল দুবেলা কয়েকদিন করে খাওয়ালে যন্ত্রণার উপশম হবে। নিয়ম অনুযায়ি এই রস খেলে অনেক উপকার হয়।

মেদ রোগ: মেদ কমাতে বৈদ্যরা শিঊলি ডালের চূর্ণ দেড় গ্রাম মাত্রায় সকালে বিকালে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই ব্যবস্থা অবলম্বনে কিছু দিনের মধ্যে মেদের হ্রাস লক্ষ্য করা যায়। কৃমিঃ শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল দুবেলা গরম পানি দিয়ে খাওয়ালে কেচোর মত কৃমি পরে যায়। গুড়া কৃমির উপদ্রব ও কমে যায়।

গলা বসা: গলা বসার ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস বেশ উপকারী। শ্লেশ্মার দোষে অনেকের গলার আওয়াজ বসে যায়।, এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়ার নিশ্চয়তা।

জ্বালা: কেউ কেউ দিনের কোন কোন সময় শরীরে জ্বালা অনুভব করেন এ ক্ষেত্রে শিউলি পাতার রস সকাল বিকাল ২ বেলা খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘদিন খাবার প্রয়োজন হলে চালের চূর্ণর সাথে ১ গ্রাম মাত্রায় দুবেলা খাওয়া ভাল।
মূর্ছা রোগ: মূর্ছা রোগে শিউলি পাতার রস ২ চামচ মাত্রায় অল্প গরম করে দুবেলা খেতে হবে। তবে মূর্ছা রোগের শুরুর দিকে খাওয়ালে ভাল ফল দেয়।

খাদ্যে বিষ ক্রিয়া: খাদ্যে বিষক্রিয়ার দরুন রোগী অত্যাধিক বমি করে রোগী দুর্বল হয়ে পরলে, অল্প গরম জলে শিউলির রস ২ বেলা খেলে দুর্বলতা কেটে যায়।

শিউলি চরিত: দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। ঔষধি হিসেবে ব্যবহার হয় শিউলির বীজ, পাতা ও ফুল। এই ফুল বোঁটা শুকিয়ে গুঁড়ো করে পাউডার বানিয়ে হালকা গরম পানিতে মেশালে চমৎকার রঙ হয়।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ