- পাঁচটি লটে ২৪২ কোটি টাকায় কেনা হবে ৪৮ মিলিয়ন সাইকেল বড়ি
- সাত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র কিনলেও জমা দিয়েছে তিনজন
- কর্মকর্তাদের জোগসাজশে উচ্চ দামের সরবরাহকারীকে নির্বাচনের চেষ্টা
সরকারি মজুদে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর রয়েছে সংকট। মুখে খাওয়ার পিলের মজুদও ফুরিয়ে আসছে। মাত্র কয়েক মাসের মজুদ আছে। জরুরি ভিত্তিতে মুখে খাওয়ার পিল কেনার উদ্যোগ নেয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনও গত মাসে জানিয়েছিলেন জরুরি ভিত্তিতে এসব সামগ্রী কেনা হবে। এরপর অধিদপ্তর পাঁচটি লটে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকার পিল কেনাকাটার পরিকল্পনা হাতে নেয়। উন্মুক্ত দরপত্রে সাতজন ঠিকাদার অংশ নিতে আগ্রহ দেখায়। শেষ পর্যন্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে দরপত্র জমাও দেয়। সবছিলো ঠিকঠাক। বিপত্তি ঘটে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে। অভিযোগ ওঠে, দরপত্র যাচাই বাছাই শেষে সর্বোনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে ভেতরে ভেতরে কাজ চলছে। সব ঠিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে ঠিকাদাকে নোটিফিকেশন অফ অ্যাওয়ার্ড বা (এনওএ) দেওয়ার কথা পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করেন, স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ব্যতিক্রম নয়। এইসব অনিয়ম এখন বন্ধ করা সম্ভব না হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে অধিদপ্তরের।
কেনাকাটার নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফিল্ড সার্ভিসেস ডেলিভারি(এফএসডি/জিডি)-৪ এর আওতায় জিওবি (উন্নয়ন) আরপিএ ( জিওবি) খাতের অর্থায়নে ৫টি লটের মাধ্যমে মুখে খাওয়ার জন্মনিরোধক পিল কেনাকাটার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র কিনে সাতটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঔষধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রেনেটা, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর প্রতি ইউনিট মুখে খাওয়ার বড়ি ৫০ দশমিক ৫০ টাকার মধ্যে কেনার উদ্যোগ নেয়। সেই হিসেবে ৪৮ মিলিয়ন সাইকেল পিল কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। দরপত্রে অংশ নিয়ে টেকনো ড্রাগস প্রতি ইউনিট মুখে খাওয়ার পিলের দাম ধরে ৪৬ দশমিক ৮৫ টাকা। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেনেটা প্রতি ইউনিটের দাম ধরে ৪৯ দশমিক ৭৫ টাকা। এই বিপুল অঙ্কের টাকার কেনাকাটয় বড় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের পরিচালক জাকিয়া আখতার। তিনি নিজেই দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির সভাপতি। তার ইচ্ছোয় সর্বোনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজটি পাচ্ছে না টেকনো ড্রাগস নামের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। পছন্দের প্রতিষ্ঠান রেনেটাকে কাজটি পাইয়ে দিতে অন্তরালে সব আয়োজন শেষ করেছে দরপকত্র সংশ্লিষ্টরা। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পাঁচটি লটের ৪৮ মিলিয়ন সাইকেল মুখে খাওয়ার পিল কেনাকাটায় অধিদপ্তরের পরিচালক রেনেটাকে এককভাবে নির্বাচন করে রেখেছেন। এতে একদিকে সরবরাহকারী লাভবান হবে। সঙ্গে উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের পরিচালকও। অপচয় হবে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত অর্থ।
সরকারের ওয়েবসাইটে (সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল) দেখা যায়, দেশের প্রায় ৩৮টি উপজেলায় মুখে খাওয়ার মুজদ নেই। অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, মজুদ থাকা মুখে খাওয়া বড়িতে আর মাত্র চারমাস কার্যক্রম চলতে পারে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের পরিচালক এবং দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির সভাপতি জাকিয়া আখতার বলেন, টেন্ডার ইভ্যালুয়েশন (দরপত্র পুনর্মূল্যায়ন) চলছে। চলমান একটি প্রক্রিয়া নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।
জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম বলেন, স্বাস্থ্যখাতে সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট বছরের পর বছর লেগে থাকে। কেনাকাটার সবক্ষেত্রে অনিয়ম যেনো নিয়ম। পরিবার পরিকল্পনা খাত ব্যতিক্রম নয়। এখানে কেনাকাটায় খতিয়ে দেখা দরকার। অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
























