চট্টগ্রামে আনোয়ারা উপজেলায় সন্ধ্যা নামলে দেয়াং পাহাড় থেকে বন্যহাতির পাল নেমে প্রতিদিন তান্ডব চালাচ্ছে বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক গ্রামে।বন্যহাতির পালের তান্ডব থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ,দোকানপাট,ফসলি জমি এমন কি ঘরবাড়িও ।এতে ভয় ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় থানায় অভিযোগ করলেও পোহাতে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনা।
বিজনেস বাংলাদেশ পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা যায়- বন্যহাতি পালের আক্রমণে আনোয়ারা উপজেলায় প্রায় দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ সীমাহীন তান্ডব চালিয়ে আহত, নিহত, ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিন নষ্ট করার অভিযোগে থানায় মামলা হয় প্রায় ৫০০ টির অধিক। গত ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ সালে (মঙ্গলবার) আজকের বিজনেস বাংলাদেশ পত্রিকায় “বন্যহাতির আক্রমণে হারাচ্ছে নিরীহ মানুষের প্রাণ। বন্যহাতি নিয়ে রমরমা সিন্ডিকেট ব্যবসার সাথে জড়িত প্রশাসন ও বনবিভাগ” শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী রির্পোট প্রকাশিত হয়।
বন্যহাতি তান্ডবে নিহত-
১৩ জুলাই ২০১৮ সালে বৈরাগ ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় বন্যহাতির আক্রমণে আবদুর রহমান (৭৫) এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
২৬ জুন ২০১৯ সালে বটতলী ইউনিয়নের পুরাতন গুচ্ছগ্রামে বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট মোমেনা খাতুন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন।১৫ জুলাই ২০১৯ সালে বৈরাগ ইউনিয়নের কান্তিরহাট হলিফাপাড়া এলাকায় আকতার হোসেন চৌধুরী (৫৪) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
১৭ আগস্ট ২০১৯ সালে তৈলারদ্বীপ এলাকার আলী মাষ্টারের বাড়িতে আবদুল মোতালেব বাবুল (৬৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ৭ জানুয়ারি ২০২০ সালে বটতলী ইউনিয়নের নুর পাড়ায় বন্যহাতির আক্রমণে মোহাম্মদ সোলায়মান (৮৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং রোববার রাত পৌনে ১টার দিকে বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর গুয়াপঞ্চক গ্রামে বন্যহাতির আক্রমণে রানী দেবী (৪৫) নামের এক নারী নিহত হন। তিনি ডাক্তার অরুন কান্তি দাশ এর স্ত্রী।১১ অক্টোবর, ২০২১ সালে বৈরাগ ইউনিয়নের মধ্যম গুয়াপঞ্চক গ্রামের মোহাম্মদ উল্যা পাড়া এলাকায় আনুমানিক বয়স ৫০ বছরের মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
গত ২৭ শে আগস্ট (মঙ্গলবার) ১নং বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক গ্রামে ৫ নং ওয়ার্ড বাসিন্দা আবদুল শুক্কুর।প্রতিদিন মতো যাচ্ছিল মসজিদে ফরজের নামাজ আদায় করার জন্য।বাসা থেকে বাহির হয়ে মসজিদে যাওয়ার পথে সামনে পড়ে বন্যহাতির পাল।বন্যহাতির পালের আক্রমণে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে এখনো চিকিৎসা কোন উন্নতি হয়নি। ২২ শে আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ভোর ৫.০০ ঘটিকায় গুয়াপঞ্চক গ্রামের ৫ নং ওয়ার্ড আমুর পাড়ায় আবদুর রহিমের দোকানের সামনের লোহার গ্রিল ভেঙ্গে দোকানে রক্ষিত বিভিন্ন মুদি মালামাল খেয়ে এবং পা দিয়া পাড়াইয়া নষ্ট করে ফেলে। ৭ শে আগস্ট (বুধবার) আনুমানিক ভোর ৩.৫০ ঘটিকায় মিন্নাত আলীর বাড়ীর চগুন মিয়াবাড়িতে বন্য হাতির পাল রাতের অন্ধকারের তান্ডব চালিয়ে ঘরের লোহার দরজা ও পাকা দেওয়াল ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে রক্ষিত বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট করে ফেলে।
এই ঘটনায় ক্ষতিপূরন পাওয়া আসায় ১৩ আগস্ট (মঙ্গলবার) চগুন মিয়া কম্পিউটার দোকান থেকে একটা অভিযোগ লেখে আনোয়ারা থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা জানায় এখন আগের মতো সাধারণ ডায়রি নেওয়া হয় না।আপনি সাধারণত ডায়েরির জায়গায় অভিযোগ লেখে আনেন। পুলিশ গিয়ে তদন্ত করে আসলে আপনি তখন সাধারণত ডায়রি করতে পারবেন।
চগুন মিয়া আরো জানান আমি একজন কৃষক।কোন রকম চাষাবাদ করে সংসার চালিয়ে ভাত খায়।তারমধ্যে বন্যহাতির পাল তান্ডব চালিয়ে আমার ঘরের দরজা,পাকা দেওয়াল ভেঙ্গে পেলে। ভাঙ্গা দরজা আর দেওয়াল নিয়ে ঘরে বসাবাস করতেছি।৩০ তারিখ হলো এখনো পর্যন্ত কোন পুলিশ সদস্য তদন্ত বা পরিদর্শনে আসেনি।
আনোয়ারা থানা ওসি মোল্লা জাকির হোসেন জানান বন্যহাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত হবে।গত ৭ আগস্ট চগুন মিয়া নামে একটা অভিযোগ হয়েছিল।সেটা তদন্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান অবশ্যই তদন্ত হয়েছে।বন্যহাতির বিষয়টা পরিবেশ অধিদপ্তরে দেখবে।এখানে আমাদের কিছু করার নেই।গত এক মাসে বন্যহাতির বিষয়ে কয়টি অভিযোগ জমা হয়েছে জানতে চাওয়ায় তিনি জানান কয়টি অভিযোগ হয়েছে আমার জানা নাই, বলতে পারবো না।
বাঁশখালী জলদি রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জান জানান,বন্যহাতি গুলো তাড়ানো সম্ভব না।যদি বন্যহাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্তরা থানায় অভিযোগ করে। তাহলে তদন্ত করে বনবিভাগ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হব।
বিজনেস বাংলাদেশ/এমএফ






















