রোববার (৫ অক্টোবর) লাগাতার বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, ধরলা, রত্নাই ও সানিয়াজানসহ প্রায় সকল নদ-নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৫ টি ইউনিয়নই বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট জেলার চারদিকে শুধু পানি আর পানি। লালমনিরহাটে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপরে তিস্তা, ১৫ সেন্টিমিটার নিচে ধরলার পানি। বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হওয়ায় রোপা-আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার ৫ টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৩৫ টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছেন। এসব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়ক পথ ভেঙ্গে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বানভাসি মানুষগুলো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন বলেন, ধরলা নদীর পানি বেড়ে এ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, ধরলা নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে এ ইউনিয়নের বন্যার অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
এদিকে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পানি বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকাল ৩ টা থেকে কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় পানির সমতল ২৯ দশমিক ৫১ মিটার। (বিপদসীমা ২৯ দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার) যা বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় পানির সমতল ৫১ দশমিক ৯৫ মিটার। (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) যা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রোববার (৫ অক্টোবর) রাত থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপরে থাকলেও সকাল ৯ টার পর থেকেই আবারও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ এবার আরও একটি বন্যার কবলে পড়েছেন।
পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতিপূর্বেই হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি, তিস্তায় এটি বড় ধরনের বন্যা। তবে বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানির প্রবাহ বেড়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির প্রবাহ কমেছে বলে দাবি করেছে তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুম ইনচার্জ নুরুল ইসলাম।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, তিস্তার পানির প্রবাহ বেড়েছে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে। তবে ভারতে পানির প্রবাহ কমে গেলে তিস্তার পানি আরও কমবে বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জেলার ৫টি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ডিএস..