০২:১৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

লাউ চাষে সাফল্য শ্রীমঙ্গলের কলেজ ছাত্র উজ্জ্বলের

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাইটুলা গ্রামের তরুণ কৃষক ও কলেজ ছাত্র উজ্জ্বল কুর্মী দেখিয়ে দিচ্ছেন, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে কৃষিকাজে সাফল্য লাভ করা সম্ভব। শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিকাজকে নিজের অন্যতম কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই গাছপালা ও মাটির প্রতি টান থাকলেও পড়াশোনার চাপের কারণে আগে তেমন সুযোগ পাননি। তবে কলেজ জীবনে এসে কৃষিকে নিজের জীবনের অংশ করে নেওয়ার দৃঢ় সংকল্প থেকেই তিনি এই পথে নেমেছেন।

প্রায় আড়াই মাস আগে উজ্জ্বল তার পরিবারের নিজস্ব আট শতক জমিতে লাউ চাষ শুরু করেন। জমি প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে লাউ ক্ষেতের মাচা বাঁধা, নিয়মিত পরিচর্যা ও দেখভালসবকিছুই তিনি নিজেই করেন। প্রথম দিকে মাটি প্রস্তুত করে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি, সব কাজ করেছেন নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী। শুরু থেকেই গাছের যত্ন এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেন তিনি। প্রাকৃতিক উপায়ে পোকামাকড় দমন ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি জমির উর্বরতা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। এর ফল মিলেছে হাতেনাতে। আড়াই মাসের মাথায় তার ক্ষেতে সবুজ সতেজ লাউ ধরতে শুরু করে।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার মাচায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি লাউ ঝুলে আছে। বড় বড় সবুজ লাউগুলো বাতাসে দুলে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছিল। গ্রামবাসীর অনেকেই ক্ষেতে গিয়ে লাউগুলো দেখছেন এবং উজ্জ্বলের পরিশ্রমের প্রশংসা করছেন। ইতোমধ্যে তিনি তিন দফা লাউ বিক্রি করেছেন এবং ভাল দামও পেয়েছেন। লাউয়ের মান ও ফলন দেখে আশেপাশের কৃষকরাও উজ্জ্বলের চাষাবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

উজ্জ্বল বলেন, “প্রথমে শখের বশেই লাউ চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু ফলন দেখে মনে হচ্ছে, এটি অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক সম্ভাবনাময়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ডিসেম্বর পর্যন্ত লাউ সংগ্রহ করা যাবে। আশা করছি ভালো লাভও হবে।” তিনি আরও জানান, সঠিক পরিকল্পনা ও যত্ন নিলে যে কোনো তরুণ সহজেই সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

লাউ ছাড়াও উজ্জ্বল তার জমিতে নিয়মিত শিম, ডাঁটা, করলা, ব্রকোলি, ফুলকপি, লালশাকসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি চাষ করেন। কৃষিকাজের প্রতি তার এই ভালোবাসা এসেছে পরিবারের ঐতিহ্য থেকে, তবে নিজের উদ্যমই তাকে আলাদা করে তুলেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিকাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উজ্জ্বল বলেন, “আমি কৃষিকাজকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছি। এই কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষির সঙ্গে যুক্ত থেকে যেমন পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনা যায়, তেমনি মানসিক তৃপ্তিও পাওয়া যায়।”

গ্রামের অন্যান্য তরুণদের জন্য উজ্জ্বল এখন এক অনুপ্রেরণার নাম। সবজি চাষ করে তিনি প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছা থাকলে অল্প জমিতেও লাভজনক কৃষি পন্য উৎপাদন করা সম্ভব। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও উজ্জ্বলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তরুণরা যদি এইভাবে উদ্যোগী হয়, তবে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।

শিক্ষার পাশাপাশি কৃষিকে পেশা হিসেবে গ্রহণের উজ্জ্বলের এই উদ্যোগ আগামী দিনের তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করবে এমনটাই আশা করছেন স্থানীয়রা। কৃষি ও শিক্ষার সমন্বয়ে তার এই পথচলা প্রমাণ করে যে মাটির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আধুনিক জীবনের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।

ডিএস./

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

নাটোর প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ বিলুপ্ত, পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন

লাউ চাষে সাফল্য শ্রীমঙ্গলের কলেজ ছাত্র উজ্জ্বলের

প্রকাশিত : ০৪:৪৪:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাইটুলা গ্রামের তরুণ কৃষক ও কলেজ ছাত্র উজ্জ্বল কুর্মী দেখিয়ে দিচ্ছেন, ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম থাকলে কৃষিকাজে সাফল্য লাভ করা সম্ভব। শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিকাজকে নিজের অন্যতম কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই গাছপালা ও মাটির প্রতি টান থাকলেও পড়াশোনার চাপের কারণে আগে তেমন সুযোগ পাননি। তবে কলেজ জীবনে এসে কৃষিকে নিজের জীবনের অংশ করে নেওয়ার দৃঢ় সংকল্প থেকেই তিনি এই পথে নেমেছেন।

প্রায় আড়াই মাস আগে উজ্জ্বল তার পরিবারের নিজস্ব আট শতক জমিতে লাউ চাষ শুরু করেন। জমি প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে লাউ ক্ষেতের মাচা বাঁধা, নিয়মিত পরিচর্যা ও দেখভালসবকিছুই তিনি নিজেই করেন। প্রথম দিকে মাটি প্রস্তুত করে বাঁশ দিয়ে মাচা তৈরি, সব কাজ করেছেন নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী। শুরু থেকেই গাছের যত্ন এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের দিকে বিশেষ মনোযোগ দেন তিনি। প্রাকৃতিক উপায়ে পোকামাকড় দমন ও জৈব সার ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি জমির উর্বরতা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। এর ফল মিলেছে হাতেনাতে। আড়াই মাসের মাথায় তার ক্ষেতে সবুজ সতেজ লাউ ধরতে শুরু করে।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তার মাচায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি লাউ ঝুলে আছে। বড় বড় সবুজ লাউগুলো বাতাসে দুলে অপরূপ সৌন্দর্য ছড়াচ্ছিল। গ্রামবাসীর অনেকেই ক্ষেতে গিয়ে লাউগুলো দেখছেন এবং উজ্জ্বলের পরিশ্রমের প্রশংসা করছেন। ইতোমধ্যে তিনি তিন দফা লাউ বিক্রি করেছেন এবং ভাল দামও পেয়েছেন। লাউয়ের মান ও ফলন দেখে আশেপাশের কৃষকরাও উজ্জ্বলের চাষাবাদের আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

উজ্জ্বল বলেন, “প্রথমে শখের বশেই লাউ চাষ শুরু করেছিলাম। কিন্তু ফলন দেখে মনে হচ্ছে, এটি অর্থনৈতিক দিক থেকেও অনেক সম্ভাবনাময়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ডিসেম্বর পর্যন্ত লাউ সংগ্রহ করা যাবে। আশা করছি ভালো লাভও হবে।” তিনি আরও জানান, সঠিক পরিকল্পনা ও যত্ন নিলে যে কোনো তরুণ সহজেই সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

লাউ ছাড়াও উজ্জ্বল তার জমিতে নিয়মিত শিম, ডাঁটা, করলা, ব্রকোলি, ফুলকপি, লালশাকসহ বিভিন্ন মৌসুমি সবজি চাষ করেন। কৃষিকাজের প্রতি তার এই ভালোবাসা এসেছে পরিবারের ঐতিহ্য থেকে, তবে নিজের উদ্যমই তাকে আলাদা করে তুলেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিকাজ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উজ্জ্বল বলেন, “আমি কৃষিকাজকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছি। এই কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগে। পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষির সঙ্গে যুক্ত থেকে যেমন পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনা যায়, তেমনি মানসিক তৃপ্তিও পাওয়া যায়।”

গ্রামের অন্যান্য তরুণদের জন্য উজ্জ্বল এখন এক অনুপ্রেরণার নাম। সবজি চাষ করে তিনি প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছা থাকলে অল্প জমিতেও লাভজনক কৃষি পন্য উৎপাদন করা সম্ভব। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারাও উজ্জ্বলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তরুণরা যদি এইভাবে উদ্যোগী হয়, তবে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে।

শিক্ষার পাশাপাশি কৃষিকে পেশা হিসেবে গ্রহণের উজ্জ্বলের এই উদ্যোগ আগামী দিনের তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করবে এমনটাই আশা করছেন স্থানীয়রা। কৃষি ও শিক্ষার সমন্বয়ে তার এই পথচলা প্রমাণ করে যে মাটির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে আধুনিক জীবনের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।

ডিএস./