০২:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

নওগাঁ জুড়ে ভয়াবহ চিকিৎসক সংকট: ৬৫ শতাংশ পদ শূন্য, বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা

নওগাঁ জেলাজুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভয়াবহ ডাক্তার সংকট বিরাজ করছে। জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে মোট সৃষ্ট পদগুলোর প্রায় ৬৫ শতাংশই শূন্য। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার প্রায় ২৭ লাখেরও বেশি মানুষ।

জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ডাক্তার পদের সংখ্যা ৩১৯ হলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১১৫ জন। বাকি ২০৪টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। অনেক উপজেলায় রাতের বেলা ইমার্জেন্সি সেবা চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, নওগাঁ জেলা সদরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেও একই অবস্থা। কাগজে-কলমে হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ২৫০ হলেও, এখনও পর্যন্ত এখানে ১০০ শয্যার অনুমোদন অনুযায়ীই ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মী রয়েছে। ২৫০ শয্যা অনুমোদনের পরও নতুন কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি।

হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, পূর্বে ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার পদের সংখ্যা ছিল ৪৬। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩৫ জন, অর্থাৎ ১১টি পদ শূন্য। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী যা ২৫০ শয্যারও বেশি ধারণক্ষমতা।

২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের হাসপাতালে কাগজে ২৫০ শয্যা থাকলেও বাস্তবে এখনো ১০০ শয্যার মতোই ডাক্তার ও ওষুধ সরবরাহ পাচ্ছি। প্রতিদিন তিন থেকে চারশ’ রোগী ভর্তি থাকেন। গত ২৪-২৫ অর্থ বছরের জরিপে গড়ে প্রতিদিন ৩১০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এত অল্প সংখ্যক ডাক্তার দিয়েই আমরা অতিরিক্ত ডিউটি করে সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বর্তমানে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ থেকে ইন্টারনি ডাক্তারদের সাপোর্ট পাওয়ার কারণে এই ভোগান্তি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ২৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় ডাক্তার, ওষুধ এবং রোগীদের খাবার বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমরা আরও উন্নত সেবা দিতে পারব।”

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, “ডাক্তার সংকট নওগাঁয় দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিষয়টি আমরা বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানিয়েছি। নতুন করে পদায়ন ও বদলির মাধ্যমে শূন্য পদগুলো পূরণের উদ্যোগ চলছে। জেলা পর্যায়ে আমরা যতটা পারি সেবার মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি।”

এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী জানান, “ডাক্তারদের অনেক ভিড় থাকে। বেশিরভাগ সময়েই একজন ডাক্তারকেই ৫০-৬০ জন আবার থেকে থেকে এর থেকেও বেশি রোগী দেখতে হয়। এতে চিকিৎসা নিতে অনেক সময় লাগে।”

নওগাঁ সদর উপজেলার মানিক নামক আরেক রোগী বলেন, “গ্রাম থেকে আসতে অনেক কষ্ট হয়। আবার হাসপাতালে ডাক্তার কম থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এক দেঢ় ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ডাক্তার দেখানোর সুযোগ হয় তারপরও তিন চার জন রোগীকে একসাথে রুমে নিয়ে রোগের বিবরণ শুনে ডাক্তাররা চিকিৎসা প্রদান করেন। তবুও আমার মত সাধারন মানুষেরা সরকারি হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখানোর মাধ্যমে সেবা নিতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।”

স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ না হলে জেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।

ডিএস./

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

নির্বাচন বানচালে ছোটখাটো নয় বড় শক্তি কাজ করবে : প্রধান উপদেষ্টা

নওগাঁ জুড়ে ভয়াবহ চিকিৎসক সংকট: ৬৫ শতাংশ পদ শূন্য, বিপর্যস্ত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা

প্রকাশিত : ০৪:১৭:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

নওগাঁ জেলাজুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভয়াবহ ডাক্তার সংকট বিরাজ করছে। জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে মোট সৃষ্ট পদগুলোর প্রায় ৬৫ শতাংশই শূন্য। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার প্রায় ২৭ লাখেরও বেশি মানুষ।

জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ডাক্তার পদের সংখ্যা ৩১৯ হলেও কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১১৫ জন। বাকি ২০৪টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। অনেক উপজেলায় রাতের বেলা ইমার্জেন্সি সেবা চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, নওগাঁ জেলা সদরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেও একই অবস্থা। কাগজে-কলমে হাসপাতালটির শয্যা সংখ্যা ২৫০ হলেও, এখনও পর্যন্ত এখানে ১০০ শয্যার অনুমোদন অনুযায়ীই ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মী রয়েছে। ২৫০ শয্যা অনুমোদনের পরও নতুন কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি।

হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, পূর্বে ১০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার পদের সংখ্যা ছিল ৪৬। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩৫ জন, অর্থাৎ ১১টি পদ শূন্য। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকেন ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী যা ২৫০ শয্যারও বেশি ধারণক্ষমতা।

২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের হাসপাতালে কাগজে ২৫০ শয্যা থাকলেও বাস্তবে এখনো ১০০ শয্যার মতোই ডাক্তার ও ওষুধ সরবরাহ পাচ্ছি। প্রতিদিন তিন থেকে চারশ’ রোগী ভর্তি থাকেন। গত ২৪-২৫ অর্থ বছরের জরিপে গড়ে প্রতিদিন ৩১০ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এত অল্প সংখ্যক ডাক্তার দিয়েই আমরা অতিরিক্ত ডিউটি করে সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। বর্তমানে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ থেকে ইন্টারনি ডাক্তারদের সাপোর্ট পাওয়ার কারণে এই ভোগান্তি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ২৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় ডাক্তার, ওষুধ এবং রোগীদের খাবার বরাদ্দ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আমরা আরও উন্নত সেবা দিতে পারব।”

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, “ডাক্তার সংকট নওগাঁয় দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিষয়টি আমরা বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানিয়েছি। নতুন করে পদায়ন ও বদলির মাধ্যমে শূন্য পদগুলো পূরণের উদ্যোগ চলছে। জেলা পর্যায়ে আমরা যতটা পারি সেবার মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি।”

এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগী জানান, “ডাক্তারদের অনেক ভিড় থাকে। বেশিরভাগ সময়েই একজন ডাক্তারকেই ৫০-৬০ জন আবার থেকে থেকে এর থেকেও বেশি রোগী দেখতে হয়। এতে চিকিৎসা নিতে অনেক সময় লাগে।”

নওগাঁ সদর উপজেলার মানিক নামক আরেক রোগী বলেন, “গ্রাম থেকে আসতে অনেক কষ্ট হয়। আবার হাসপাতালে ডাক্তার কম থাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এক দেঢ় ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ডাক্তার দেখানোর সুযোগ হয় তারপরও তিন চার জন রোগীকে একসাথে রুমে নিয়ে রোগের বিবরণ শুনে ডাক্তাররা চিকিৎসা প্রদান করেন। তবুও আমার মত সাধারন মানুষেরা সরকারি হাসপাতালে এসে ডাক্তার দেখানোর মাধ্যমে সেবা নিতে পারলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।”

স্থানীয়রা মনে করছেন, দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ না হলে জেলার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।

ডিএস./