০২:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫

সাতকানিয়ায় শিম চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় শীতকালীন সবজি শিম চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।বাঁশের তৈরি মাচার ওপর দুলছে শিমগাছের কচি ডগা। ডগার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে শিমের লাল ফুল। সবুজ পাতার কচি ডগায় লাল ফুলে হাসছে কৃষকের স্বপ্ন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কিছু কিছু জায়গায় অনেকেই আগাম শিম ক্ষেত করেছেন সেখানে থোকায় থোকায় ধরেছে দেশীয় শিম। বাজালিয়া ,পুরানগড়, কেওঁচিয়া ঘুরে দেখা যায় ,মাঠে শিমের ফুল, মুকুল আর সবুজ পাতায় মিলেমিশে সৌন্দর্যও ছড়াচ্ছে বেশ।শীত মৌসুম শুরুর আগেই এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে ভরে উঠেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষেত খামার।

শীতকালীন সবজি হলেও এ অঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের শিম চাষ করে সফল হয়েছেন অনেকেই।

সাতকানিয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া শঙ্খনদীর তীরবর্তী চরের মাটিতে যে কোনো সবজি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বছরের ১২ মাস এখানে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেন চাষীরা। স্বাদে অতুলনীয় এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় শঙ্খচরের সবজির চাহিদা অন্যান্য এলাকা থেকে একটু বেশি। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকার সবজির ঘাটতি মেটাতে বড় অবদান রাখে এখানকার উৎপাদিত সবজি। এদিকে অন্যান্য সবজির তুলনায় শিম চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় প্রতি মৌসুমে শিম চাষের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব শিমের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে বাজারে,

শিম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন সবজি। দেশি শিম বাংলাদেশের ঘরে ঘরে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দেশের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এমনকি শহরের বাড়ির ছাদে শিম আবাদ হয়ে থাকে। বর্তমানে বছরের অর্ধেক সময়ে শিম বাজারে পাওয়া যায়। তবে স্বাদ ও গন্ধে শীতকালীন শিমের মতো নয়।

শীতকালীন শিম পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং সব শ্রেণির লোকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিম সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। শিমের বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ছাড়াও খনিজ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন এ, বি ও সি থাকে।আমাদের দেহের পুষ্টিসাধনে এসব উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে শিম খাদ্য হিসেবে খুবই উপকারী। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জোগান ছাড়াও শিম অন্যতম লাভজনক সবজি। এর চাষ করে জমি থেকে অনেক ফসলের তুলনায় হেক্টর প্রতি অধিক আয় করা যায়।

সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়,আগাম কিছু শীতকালীন সবজি বাজারে এসেছে,পাওয়া যাচ্ছে শিম,মূলা,ফুলকপি ও বাঁধাকপি এর মধ্যে শিম বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৬০ টাকায়, মুলা ৪০ টাকা, ফুলকপি ১২০ টাকা ও বাঁধাকপি ৯০ টাকায় ।

কেওঁচিয়ার কৃষক মোঃ রুবেল জানান,প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই শিমের চাষাবাদ শুরু করা হয়,৩ কাণি জমিতে চাষাবাদ করেছেন তিনি শিম ক্ষেতে ফুল এসেছে হয়তো আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পর বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

কৃষক ছালেহ আহমদ জানান,এ বছরে তিনি ৪ কাণি জমিতে শিম চাষ করেছেন, ফুল ও মুকুল এসেছে ,আগামী ২০ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হবে ,শিম চাষ করে অল্প সময়ে লাভবান হওয়ায় প্রতিবছর চাষ করে থাকেন বলে জানান তিনি।

কেওঁচিয়া ব্লগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল দাশ বলেন,অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় চাষিরা আগাম শিম আবাদে ঝুঁকছেন।তিনি জানান,কেওচিয়া ব্লগে ৪ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে আগামী ২০ দিন পর শিম বাজারে বিক্রি করতে পারবেন কৃষক ‌।

উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান জানান,চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৪৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে ‌। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ে বাজালিয়া পুরানগড় ইউনিয়নে শিমের প্রচুর আবাদ রয়েছে । তিনি বলেন শিম চাষে সফলতা পেতে উন্নত জাত নির্বাচন, সঠিক সময়ে চাষাবাদ, উপযুক্ত মাটি তৈরি, সময়মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, এবং সঠিক পরিচর্যার ওপর মনোযোগ দিতে হবে। ভালো ফলনের জন্য মাটির ধরণ অনুযায়ী জৈব সার ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব ।

ডিএস./

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সাতকানিয়ায় শিম চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

প্রকাশিত : ০৪:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় শীতকালীন সবজি শিম চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা।বাঁশের তৈরি মাচার ওপর দুলছে শিমগাছের কচি ডগা। ডগার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে শিমের লাল ফুল। সবুজ পাতার কচি ডগায় লাল ফুলে হাসছে কৃষকের স্বপ্ন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কিছু কিছু জায়গায় অনেকেই আগাম শিম ক্ষেত করেছেন সেখানে থোকায় থোকায় ধরেছে দেশীয় শিম। বাজালিয়া ,পুরানগড়, কেওঁচিয়া ঘুরে দেখা যায় ,মাঠে শিমের ফুল, মুকুল আর সবুজ পাতায় মিলেমিশে সৌন্দর্যও ছড়াচ্ছে বেশ।শীত মৌসুম শুরুর আগেই এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে ভরে উঠেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষেত খামার।

শীতকালীন সবজি হলেও এ অঞ্চলের কৃষকরা আগাম জাতের শিম চাষ করে সফল হয়েছেন অনেকেই।

সাতকানিয়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া শঙ্খনদীর তীরবর্তী চরের মাটিতে যে কোনো সবজি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বছরের ১২ মাস এখানে বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করেন চাষীরা। স্বাদে অতুলনীয় এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় শঙ্খচরের সবজির চাহিদা অন্যান্য এলাকা থেকে একটু বেশি। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের এলাকার সবজির ঘাটতি মেটাতে বড় অবদান রাখে এখানকার উৎপাদিত সবজি। এদিকে অন্যান্য সবজির তুলনায় শিম চাষ বেশি লাভজনক হওয়ায় প্রতি মৌসুমে শিম চাষের পরিধি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব শিমের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে বাজারে,

শিম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন সবজি। দেশি শিম বাংলাদেশের ঘরে ঘরে অত্যন্ত জনপ্রিয়। দেশের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এমনকি শহরের বাড়ির ছাদে শিম আবাদ হয়ে থাকে। বর্তমানে বছরের অর্ধেক সময়ে শিম বাজারে পাওয়া যায়। তবে স্বাদ ও গন্ধে শীতকালীন শিমের মতো নয়।

শীতকালীন শিম পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং সব শ্রেণির লোকের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শিম সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। শিমের বীজে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ছাড়াও খনিজ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন এ, বি ও সি থাকে।আমাদের দেহের পুষ্টিসাধনে এসব উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে শিম খাদ্য হিসেবে খুবই উপকারী। প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের জোগান ছাড়াও শিম অন্যতম লাভজনক সবজি। এর চাষ করে জমি থেকে অনেক ফসলের তুলনায় হেক্টর প্রতি অধিক আয় করা যায়।

সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়,আগাম কিছু শীতকালীন সবজি বাজারে এসেছে,পাওয়া যাচ্ছে শিম,মূলা,ফুলকপি ও বাঁধাকপি এর মধ্যে শিম বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৬০ টাকায়, মুলা ৪০ টাকা, ফুলকপি ১২০ টাকা ও বাঁধাকপি ৯০ টাকায় ।

কেওঁচিয়ার কৃষক মোঃ রুবেল জানান,প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই শিমের চাষাবাদ শুরু করা হয়,৩ কাণি জমিতে চাষাবাদ করেছেন তিনি শিম ক্ষেতে ফুল এসেছে হয়তো আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন পর বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

কৃষক ছালেহ আহমদ জানান,এ বছরে তিনি ৪ কাণি জমিতে শিম চাষ করেছেন, ফুল ও মুকুল এসেছে ,আগামী ২০ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হবে ,শিম চাষ করে অল্প সময়ে লাভবান হওয়ায় প্রতিবছর চাষ করে থাকেন বলে জানান তিনি।

কেওঁচিয়া ব্লগের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল দাশ বলেন,অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় চাষিরা আগাম শিম আবাদে ঝুঁকছেন।তিনি জানান,কেওচিয়া ব্লগে ৪ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে আগামী ২০ দিন পর শিম বাজারে বিক্রি করতে পারবেন কৃষক ‌।

উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুজ্জামান জানান,চলতি মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৪৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে ‌। উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ে বাজালিয়া পুরানগড় ইউনিয়নে শিমের প্রচুর আবাদ রয়েছে । তিনি বলেন শিম চাষে সফলতা পেতে উন্নত জাত নির্বাচন, সঠিক সময়ে চাষাবাদ, উপযুক্ত মাটি তৈরি, সময়মতো সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, এবং সঠিক পরিচর্যার ওপর মনোযোগ দিতে হবে। ভালো ফলনের জন্য মাটির ধরণ অনুযায়ী জৈব সার ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব ।

ডিএস./