কৃষি খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও সার সরবরাহে সঙ্কট রোধে ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫ বাতিল করে ২০০৯ সালের নীতিমালা বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন (বিএফএ) কুমিল্লা জেলা ইউনিট। একই সঙ্গে কৃষকদের দোরগোড়ায় সময়মতো সার সরবরাহ নিশ্চিত ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সারের ক্রয়মূল্যের সঙ্গে পরিবহন, অন্যান্য খরচ এবং লভ্যাংশ বাবদ শতকরা ২৫ ভাগ বৃদ্ধি করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণেরও জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর আলম এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত ‘সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা–২০২৫’ বাস্তবায়িত হলে মাঠপর্যায়ে সারের সুষ্ঠ সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে এবং কৃষি উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে আসবে।
তিনি বলেন, বিএফএ ১৯৯৬ সাল থেকে দেশের সারের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দীর্ঘ ৩ দশক ধরে বিএফএ কৃষির উন্নয়নে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
একজন ডিলারকে গড়ে ৩০ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে হয় এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাকিতে সার সরবরাহ করতে হয়। কৃষকরা ফসল বিক্রির পর ওই টাকা পরিশোধ করলেও পুরো অর্থ ফেরত আসে না। এমন বাস্তবতায় নতুন নীতিমালা চালু হলে অনেক ডিলার দেউলিয়া হয়ে পড়বে, যা দেশের সার সরবরাহ ব্যবস্থাকে ভেঙে দেবে।
লিখিত বক্তব্যে আরো জানানো হয়, ইউনিয়নভিত্তিক তিনজন নতুন ডিলার নিয়োগের প্রস্তাবও বাস্তবসম্মত নয়। এতে বিনিয়োগ ব্যয় ও পরিচালন খরচ বহুগুণে বাড়বে, অথচ লভ্যাংশ কমে যাবে। ফলে সার ব্যবসায়ীরা নিরুৎসাহিত হবে, এবং সার সংকট দেখা দিতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বর্তমানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ডিলারশিপ পদ্ধতিই কার্যকর এবং স্থিতিশীল ব্যবস্থা।
বিএফএ কুমিল্লা ইউনিট মনে করে, একই পরিবারের সদস্যরা যদি পৃথক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে এবং সরকারের চাহিদা অনুযায়ী সব দলিল উপস্থাপন করতে পারে, তবে তাদের ডিলারশিপ বহাল রাখা ন্যায্য হবে। সংগঠনটি নারী উদ্যোক্তাদের সার ব্যবসায় যুক্ত করার পক্ষেও মত দেয়।
বক্তব্যে মো. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ২০ বছর আগে নির্ধারিত প্রতি বস্তায় মাত্র ১০০ টাকা পরিবহন খরচ আজ আর বাস্তবসম্মত নয়। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় তারা দাবি জানান, ক্রয়মূল্যের সঙ্গে শতকরা ২৫ ভাগ যুক্ত করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হোক, যাতে সরকারি মূল্যে সার বিক্রি নিশ্চিত থাকে। এ সময় মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, সরকারের ভর্তুকি মূল্যের সারের ওপর কোনো আগাম কর আরোপ করা হলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। এছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এখনই নীতিমালা পরিবর্তনের চেষ্টা করলে পিক সিজনে সার সংকট দেখা দিতে পারে।
তিনি আহ্বান জানান, নীতিমালা ২০২৫ কার্যকর না করে বরং দেশের প্রতিটি জেলা থেকে অন্তত ১০ জন বিসিআইসি ডিলারের মতামতের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের পরীক্ষিত নীতিমালাকে পর্যালোচনা করা হোক। অন্যথায়, সার সংকটের দায় বর্তমান সরকারের ওপরই পড়বে।
সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হাসান তাঁর বক্তব্যে আরো বলেন, কৃষক জাতির মেরুদণ্ড। কৃষকের স্বার্থ রক্ষাই আমাদের প্রথম দায়িত্ব। তাই সার ডিলারদের ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে কৃষি উৎপাদন যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই বিষয়ে সরকারের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
শেষে সংগঠনের পক্ষ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়কে নীতিমালা-২০২৫ বাস্তবায়ন স্থগিত করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএফএ’র কুমিল্লা ইউনিটের সহ-সভাপতি মো. আখতার হোসেন, বিএফএ কুমিল্লার সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী আবদুল মতিন, মোঃ আখতার হোসেন, দিলিপ কুমার সাহা, চন্দন কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ আবদুল হান্নান, যুগ্ম সম্পাদক একেএম মোস্তফাসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের পরে, বিএফএ কুমিল্লা ইউনিটের নেতৃবৃন্দ সার সমন্বিত নতুন নীতিমালা বাতিল ও বিক্রয়মূল্যে ২৫% বৃদ্ধি দাবিতে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারক লিপি জমা দেন। এসময়, জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারক লিপি জমা নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম।
 
																			 
																		 সৈয়দ আহাম্মদ লাভলু, কুমিল্লা
																সৈয়দ আহাম্মদ লাভলু, কুমিল্লা								 




















