০২:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫

লালমনিরহাটে মাদকে ছয়লাব-যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে! অবিভাবকগণ উদ্ধিগ্ন!

লালমনিরহাটে মাদকে ছয়লাব যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে। মাদক মামলায় জামিনে বেরিয়ে আবারও চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। মাদক মামলা বাড়লেও কমে নাই মাদক পাচার ও চোরাচালান।

জানা গেছে, উত্তরের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদকদ্রব্যে, এ মরণনেশা মাদকে ডুবে থাকছে জেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো মানুষ। এ তালিকায় রয়েছে ওঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এতে করে এ জেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকায় ওঠতি বয়সের তরুণ ও যুবক ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন।

দফায় দফায় মাদক বিরোধী অভিযান ও অসংখ্য মাদক মামলার পরও সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোতে কোনভাবেই থামছে না মাদকের বিস্তার। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের পরও মাদক ব্যবসায়ীরা রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়। সীমান্তের কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০/৬০ জন বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী সক্রিয়। একেকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ টি মাদকের মামলা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত সরকারের সময় সীমান্ত এলাকার কিছু নেতাকর্মীর আশ্রয়ে গড়ে ওঠে শক্তিশালী মাদক নেটওয়ার্ক। তখন থেকেই জেলার কালীগঞ্জের গোড়ল ও আশপাশের এলাকা মাদক পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়। মাদক প্রতিরোধে গোড়লে একটি তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের পর প্রথমদিকে রাজনৈতিক তদবিরে পুলিশ সফল হতে না পারলেও গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ কঠোর অবস্থান নেয়। তখন অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। তবুও মাদকচক্র থেমে নেই। নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে নানা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। স্বল্প জনবল নিয়েও পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করছে।

সীমান্তবাসী সূত্রে জানা যায়, উত্তরের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে প্রায় ২৪৮ কিলোমিটার ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। ওই সীমান্ত গুলোতে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি, রংপুর ৫১ বিজিবি ও রংপুর ৬১ বিজিবি সদস্যরা। সীমান্তের ওই ৩টি সেক্টরের অধীনে থাকা কমপক্ষে অর্ধশত স্পট  দিয়ে দেদারছে আসছে ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক। শুধুমাত্র কালীগঞ্জের গোড়ল ইউনিয়নেই শতাধিক সক্রিয় মাদক ব্যবসায়ী ও অসংখ্য খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। মাদক বিক্রি করে অনেকে গরিব থেকে কোটিপতি হয়েছেন, তাদের রয়েছে আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি ও বিপুল জমিজমা। ফলে এসব গ্রাম এখন ‘মাদকের গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সীমান্ত এলাকার মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলারসহ নানা যানবাহনে চড়ে সুকৌশলে তরুণ, যুবক, কিশোর, যুবতীরা ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, মদ, সেবন করতে ছুটে আসেন এই এলাকায়।

ওই এলাকার মশিউর রহমান বলেন, এলাকায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। প্রতিদিন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাঁজা দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে। ভারত থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে প্রথমে সীমান্তের গ্রামগুলোতে জড়ো করা হয়। পরে সুযোগ বুঝে সেগুলো বিভিন্ন যানবাহনে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সুকৌশলে সরবরাহ করা হয়। মাঝে মধ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ছোট-বড় চালানসহ বহনকারীদের আটক করতে সক্ষম হলেও বড় বড় চালানসহ মূল হোতারা এখনো ধরাছায়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ কারনে মাদক নিমূল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সচেতনমহল মনে করেন, যুবসমাজকে বাঁচাতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় যুব সমাজ ধ্বংসসহ চুরি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবনতা মারাত্বকভাবে বেড়ে যাবে। এ জন্য পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবিকে আরো সক্রিয়ভাবে মাঠে অভিয়ান পরিচালনা করে মাদক ব্যাবসায়ীদের গ্রেফতার করে কঠিন বিচারের আওতায় আনতে হবে।

অরণ্য স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী পরিচালক আনজুরুল হক সরকার মিন্টু বলেন, গুটি কয়েক মাদক ব্যবসায়ীর কারণে এলাকার শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও সহজে মাদক পেয়ে আসক্ত হচ্ছে। এমনকি গ্রামগুলোর নামের সাথেও এখন মাদকের ট্যাগ লেগে গেছে।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়াও  সীমান্ত গ্রাম গুলোতে ‘মাদক নিয়ে সচেতনতা মূলক বিভিন্ন কর্মসূচী চলমান রয়েছে। মাদক ঠেকাতে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন, জেলা পুলিশ সুপার।

ডিএস./

ট্যাগ :

লালমনিরহাটে মাদকে ছয়লাব-যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে! অবিভাবকগণ উদ্ধিগ্ন!

প্রকাশিত : ০৪:৪৫:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

লালমনিরহাটে মাদকে ছয়লাব যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে। মাদক মামলায় জামিনে বেরিয়ে আবারও চোরাচালান ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। মাদক মামলা বাড়লেও কমে নাই মাদক পাচার ও চোরাচালান।

জানা গেছে, উত্তরের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে পাড়া-মহল্লায় হাত বাড়ালেই মিলছে সব ধরনের মাদকদ্রব্যে, এ মরণনেশা মাদকে ডুবে থাকছে জেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির হাজারো মানুষ। এ তালিকায় রয়েছে ওঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। এতে করে এ জেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকায় ওঠতি বয়সের তরুণ ও যুবক ইয়াবাসেবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় আছেন।

দফায় দফায় মাদক বিরোধী অভিযান ও অসংখ্য মাদক মামলার পরও সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোতে কোনভাবেই থামছে না মাদকের বিস্তার। প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের পরও মাদক ব্যবসায়ীরা রীতিমতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে জানা যায়। সীমান্তের কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০/৬০ জন বড় বড় মাদক ব্যবসায়ী সক্রিয়। একেকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ টি মাদকের মামলা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত সরকারের সময় সীমান্ত এলাকার কিছু নেতাকর্মীর আশ্রয়ে গড়ে ওঠে শক্তিশালী মাদক নেটওয়ার্ক। তখন থেকেই জেলার কালীগঞ্জের গোড়ল ও আশপাশের এলাকা মাদক পাচারের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়। মাদক প্রতিরোধে গোড়লে একটি তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের পর প্রথমদিকে রাজনৈতিক তদবিরে পুলিশ সফল হতে না পারলেও গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ ইং তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশ কঠোর অবস্থান নেয়। তখন অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। তবুও মাদকচক্র থেমে নেই। নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা পুলিশের বিরুদ্ধে নানা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। স্বল্প জনবল নিয়েও পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করছে।

সীমান্তবাসী সূত্রে জানা যায়, উত্তরের সীমান্ত জেলা লালমনিরহাটে প্রায় ২৪৮ কিলোমিটার ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। ওই সীমান্ত গুলোতে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি, রংপুর ৫১ বিজিবি ও রংপুর ৬১ বিজিবি সদস্যরা। সীমান্তের ওই ৩টি সেক্টরের অধীনে থাকা কমপক্ষে অর্ধশত স্পট  দিয়ে দেদারছে আসছে ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক। শুধুমাত্র কালীগঞ্জের গোড়ল ইউনিয়নেই শতাধিক সক্রিয় মাদক ব্যবসায়ী ও অসংখ্য খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। মাদক বিক্রি করে অনেকে গরিব থেকে কোটিপতি হয়েছেন, তাদের রয়েছে আলিশান বাড়ি, দামি গাড়ি ও বিপুল জমিজমা। ফলে এসব গ্রাম এখন ‘মাদকের গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সীমান্ত এলাকার মফিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, থ্রি-হুইলারসহ নানা যানবাহনে চড়ে সুকৌশলে তরুণ, যুবক, কিশোর, যুবতীরা ফেনসিডিল, গাঁজা, ইয়াবা, মদ, সেবন করতে ছুটে আসেন এই এলাকায়।

ওই এলাকার মশিউর রহমান বলেন, এলাকায় মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। প্রতিদিন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিল, হেরোইন ও গাঁজা দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে। ভারত থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে প্রথমে সীমান্তের গ্রামগুলোতে জড়ো করা হয়। পরে সুযোগ বুঝে সেগুলো বিভিন্ন যানবাহনে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় সুকৌশলে সরবরাহ করা হয়। মাঝে মধ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ছোট-বড় চালানসহ বহনকারীদের আটক করতে সক্ষম হলেও বড় বড় চালানসহ মূল হোতারা এখনো ধরাছায়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এ কারনে মাদক নিমূল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সচেতনমহল মনে করেন, যুবসমাজকে বাঁচাতে হলে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় যুব সমাজ ধ্বংসসহ চুরি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবনতা মারাত্বকভাবে বেড়ে যাবে। এ জন্য পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবিকে আরো সক্রিয়ভাবে মাঠে অভিয়ান পরিচালনা করে মাদক ব্যাবসায়ীদের গ্রেফতার করে কঠিন বিচারের আওতায় আনতে হবে।

অরণ্য স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্বাহী পরিচালক আনজুরুল হক সরকার মিন্টু বলেন, গুটি কয়েক মাদক ব্যবসায়ীর কারণে এলাকার শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও সহজে মাদক পেয়ে আসক্ত হচ্ছে। এমনকি গ্রামগুলোর নামের সাথেও এখন মাদকের ট্যাগ লেগে গেছে।

লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত আছে। এছাড়াও  সীমান্ত গ্রাম গুলোতে ‘মাদক নিয়ে সচেতনতা মূলক বিভিন্ন কর্মসূচী চলমান রয়েছে। মাদক ঠেকাতে স্হানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন, জেলা পুলিশ সুপার।

ডিএস./