লালমনিরহাট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ শাহজালাল সরকারি কাজ করতে গিয়ে হুমকি পেয়ে নিজের নিরাপত্তার জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) লালমনিরহাট সদর থানায় তিনি এ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল লালমনিরহাট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোঃ শাহজালাল। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি রুটিন কাজের অংশ হিসেবে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র লালমনিরহাট পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন করতে গিয়ে মারাত্মক কিছু অনিয়ম নজরে আসে তার। তেমনি মাঠে কাজ পরিদর্শনে নিয়ে অজস্র অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়।
লালমনিরহাট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ শাহজালাল স্বাক্ষরিত সাধারণ ডায়েরি (জিডি) সূত্রে জানা যায়, আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী গত ০৮.০৪.২০২৪ খ্রি. তারিখ লালমনিরহাট জেলায় উপ-পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর আমার রুটিন কাজের অংশ হিসেবে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, লালমনিরহাট পরিদর্শন করি। পরিদর্শন করতে গিয়ে মারাত্মক কিছু অনিয়ম নজরে আসে। উল্লেখিত কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারি তথা কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোছা. মনোয়ারা বেগমের সহাযোগিতায় প্রাক্তন মেডিকেল অফিসার (ক্লিনিক) ডা. নিশাতনুর নাহার ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২৫ (পঁচিশ) লক্ষাধিক টাকা ভূয়া বিল ভাইচারের মাধ্যমে সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলন করে আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে প্রতিবেদন হিসেবে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করা হয়। তেমনি মাঠকাজ পরিদর্শনে নিয়ে অজস্র অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এ জেলার কতিপয় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারি (প্রাক্তন টিএফটিএ) অনিয়ম ও দুর্নীতি করে লক্ষ লক্ষ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। এদের সহযোগিতা করেছেন কতিপয় মাঠ কর্মচারি। অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে কতিপয় কর্মকর্তা।
জিডিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মাঠকাজ পরিদর্শন করতে গিয়ে মাঠে এবং কর্মস্থলে অনেককে অনুপস্থিত পাই। প্রথম দিকে মৌখিক ভাবে মাঠকাজে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানাই। তারা সংশোধন না হবার পর বেশ কয়েকজনকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পেয়ে কারণ ব্যাখ্যা করার নোটিশ জারি করি। দুর্নীতিগ্রস্ত মোছা. মনোয়ারা বেগমকে সহ কয়েকজনকে জেলার বাইরে বদলি করার প্রস্তাব প্রেরণ করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর। একজন নৈশ প্রহরী চাকরি দেবার আশ্বাস দিয়ে অনেকের কাছে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তাকে জেলার বাইরে বদলি করার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তাকে বদলি করেন।
অতি সম্প্রতি উপজেলা পর্যায়ের দুয়েকজন কর্মকর্তার প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় উল্লেখিত অফিস সহকারি তথা মুদ্রাক্ষরিক, দুর্নীতিগ্রস্ত উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারি এবং কতিপয় পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকের নেতৃত্বে যথাযথ কর্তৃপক্ষের ছুটি ব্যতিরেকে বিভাগীয় পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা, রংপুর বিভাগ, রংপুর মহোদয়ের দপ্তরে উপস্থিত হয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি তারা নিম্নস্বাক্ষরকারীর অফিসে উপস্থিত হয়ে কিংবা মাঠ পরিদর্শনে গেলে নিম্নস্বাক্ষরকারীকে শারীরিক হেনস্থা সহ অফিস এবং নিম্নস্বাক্ষরকারীর ব্যবহার করা সরকারি গাড়ি ভাংচুর করার পরিকল্পনা করছেন। স্থানীয় দৈনিক সহ অন্যান্য মাধ্যমে মোছা. মনোয়ারা বেগমের দুর্নীতির খবর প্রচারিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে নথিভূক্ত করার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
সাধারণ ডায়েরি (জিডি) প্রসঙ্গে লালমনিরহাট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ শাহজালাল জানান, আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা। সরকারি কার্যসম্পাদন করাই আমার দায়িত্ব। আমি সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার শারীরিক হেনস্থা সহ অফিস এবং সরকারি গাড়ি ভাংচুর করার পরিকল্পনা করছেন। তারা যেন পরবর্তীতে কোনো অপ্রীতিকর কাজ করতে না পারে, সেই লক্ষ্যে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি।
তিনি আরও জানান, কারো সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই। আমি শুধু আমার দায়িত্বটুকু পালন করে যেতে চাই।
লালমনিরহাট সদর থানার ডিউটি অফিসার এএসআই নুরীমা বলেন, ডিডি শাহজালালের লিখিত অভিযোগটি জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
লালমনিরহাট পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকের জিডি প্রসঙ্গে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ নূরনবী বলেন, এই সংক্রান্ত একটি জিডি হয়েছে। যাহার জিডি নং- ১৭৬৮/২৫। তাং ২৯/১০/২৫ইং।
ডিএস./
																			
																		




















