০৪:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চির নিদ্রায় শায়িত কারাতে রেফারী বিগম্যান হুমায়ন কবির জুয়েল

দিনটি ছিল ঈদর দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ২৬ মে ২০২০। হটাৎ ঢাকা থেকে প্রিয় বন্ধু বাবুলের কল এলো, একটি দুঃখের সংবাদ আজ সকালে জুয়েল ভাই মারা গেছেন।
বন্ধু বাবুল ছিল হুমায়ন কবির জুয়েলের প্রিয় পাত্র। বন্ধুর ফোন কেটে যাওয়ার পর কিছুতেই এ কথা বিশ্বাষ হচ্ছিল না শিহান জুয়েল মারা গেছেন।
তারপর সবার সাথে ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হলাম মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের কারাতে রেফারী অংগনের উজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ন কবির জুয়েল সত্যিই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।
বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের কারাতের যে পরিচিত করেছিলেন এই জুয়েলকে বিদেশীরা”বিগম্যান” হিসেবে চিনতো।কারন,তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কারাতে জগতের সব চেয়ে মোটা মানুষ। মানুষটির মধ্যে ছিল অসাাধারণ কারাতে রেফারী করার বাচন ভংগি ও কলাকৌশল।
তিনি ছিলেন দেশের সকল কারাতে রেফারী তৈরীর কারিগর। বাংলাদেশে যে কয়জন আন্তর্জাতিক কারাতে রেফারী আছে তারা সবাই তারই তৈরী।
জুয়েল এর ভিতর কারাতে রেফারী করার একটা গুন ছিল তার মধ্যে অন্যতম, কারাতে রেফারী করার সময় যে শব্দ উচ্চারন করতে হত ঐ শব্দ উচ্চারনে তিনি ছিলেন পারদর্শী। বড় ভাল মানুষ ছিলেন তিনি।
সারা দেশে ও বিদেশে কারাতে লোকদের কাছে প্রিয় মুখ ছিল এই লোকটি। ঢাকা’তে কেউ যদি তার কাছে রেফারী’র ব্যাপারে যেত তাকে যথেষ্ঠ সহযোগিতা করত এবং নিজের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করত।
২০১৯ এ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন এর নির্বাচনে নতুন কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পিছনে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন এই প্রিয় মানুষটি। কারাতে প্রচুর ভালবাসতেন। এই কারাতের জন্য যোগ্য থাকা সত্বেও কোন চাকরী করেন নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারাতে নিয়েই পরে ছিলেন।
বাংলাদেশ কারাতে রেফারী এসোসিয়েশন করে সারা দেশে কারাতে রেফারী ছাত্র-ছাত্রী তৈরী করেছেন। তাদের মর্যাদার জন্য জাতীয় কারাতে রেফারীতে ভূষিত করেছিলেন।
এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে “ জুয়েল কারাতে একাডেমী” কারাতে প্রতিষ্ঠান খুলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী তৈরী করেছেন যা পুরো রাজধানীতে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন।
বর্তমানে তার ছাত্র-ছাত্রীরা দেশে -বিদেশে নিজ ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির সুনাম করেছেন। কেউ কেউ তার সুপারিশে বড় বড় কোম্পানী,সরকারী,আধা- সরকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্ম করার সুযোগ পেয়েছেন। সারা দেশে যত কারাতে রেফারী ছাত্র-ছাত্রী আছে সবাই তারই তৈরী।
বাংলাদেশের কারাতে আন্তর্জাতিক দরবারে পৌঁছানোর লক্ষে সোতোকান কারাতে দো ফেডারেশন গড়ে তুলেন। নিজের নাম ও দেশের নাম উজ্জ্বল করে ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ এত বিদেশের মাটিতে তার মত কারাতে রেফারী করার সুযোগ পায়নি। প্রায় সারা বিশ্বে বড় বড় আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে হয়ে তিনি কারাতে রেফারী করেছেন।
জাপানী কারাতে প্রশিক্ষক শিহান তেতসুরো কিতামুরা, ঢাকা’র শিহান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন সেন্টু, সেন্সি মোঃ জসিম উদ্দিন, মোঃ মতিউর রহমান নাঈম,নারায়ণগন্জ’র শিহান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, কুমিল্লার শিহান মোঃ মোখলেসুর রহমান আবু, সেন্সি নুরে আলম, চট্টগ্রামের শিহান শাহজাদা আলম, কাজী রাশেদ আলী, রতন তালুকদার,সেন্সি এস এম আরিফ চৌধুরী, তুলু-উশ-শামস, অজয় দে, কাওসার আহমেদ এবং আমি (আব্দুল হান্নান কাজল) তার প্রিয় পাত্র ছিলাম।
চট্টগ্রামে যখনই তিনি রেফারী প্রশিক্ষণ,প্রতিযেগিতায় আসতেন চট্রগ্রামের উল্লেখিত লোকদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেন। তার প্রিয় খাবার ছিল শিক কাবাব।
দেশে-বিদেশে এই কারাতে জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র মাত্র ৫৫ বছর বয়সে অকালে চলে যাওয়াতে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের ও বিদেশের কারাতে অংগনের।
তিনি মারা যাওয়ার পূর্বে অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে সারা দেশের অসহায় কারাতে ,রেফারী ছাত্র-ছাত্রীদের পণ্য সামগ্রী দিয়ে ও আর্থিক সহযোগিতা করে গেছেন।
তার মৃত্যূর কথা অনেকেই বিশ্বাষ করতে পারছেন না।অকালে ঝরে গেল একটি তারকা। আমরা হারিয়েছি কারাতে রেফারী তৈরী করার কারিগড় পিতা’কে।
আমরা তার কছে হেরে গেছি,তার ভালবাসার মূল্য দিতে পারিনি। তার মৃত্যূর সংবাদ পেয়েও করোনা ভাইরাসের কারনে গনপরিবহণ চলাচল না থাকার দরুন জানাযায় অংশ গ্রহন করতে পারিনি।
হয়ত পারবোনা তাঁর ঋন শোধ করতে। আমরা তার মত এমন হিরা হয়ত আর কখনো পাবোনা। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় যে যার ধর্ম মতে তার জন্য দোয়া করতে পারি। মহান দয়ালু আল্লাহর কাছে তার জন্য প্রতিদিন যে যেখানে থাকি সেখান থেকে জেয়ারত করতে পারি।
প্রতি বছর তার মৃত্যূবার্ষিকীতে কোরআন খতম ও জুয়েল স্মৃতি জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতা ও জুয়েল স্মৃতি আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশের কারাতে জগতে তার যে অবদান ছিল তা চালু রেখে তাকে স্মরণ করতে পারি।তাহলে তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেচেঁ থাকবেন।
আমরা এই উজ্জ্বল নক্ষত্র কে কিছুতেই যেন না ভুলি। বাংলাদেশ কারাতে রেফারী এসোসিয়েশন এর সকল সদস্যদের অনুরোধে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন এর নিকট এই আকুল আবেদন জানাই।
এমনি করে সবাই যাবে যেতে হবে, যেখানেই যান ভাল থাকেন,শান্তিতে থাকেন, আপনি চিরকাল আমাদের মণিকোঠায় থাকবেন, দেবনা আপনাকে ভুলিতে, প্রিয় কারাতে রেফারী প্রশিক্ষক হুমায়ন কবির জুয়েল আপনাকে।
লেখক:- সাংবাদিক ও সদস্য – বাংলাদেশ কারাতে রেফারী এসোসিয়েশন।
জনপ্রিয়

চির নিদ্রায় শায়িত কারাতে রেফারী বিগম্যান হুমায়ন কবির জুয়েল

প্রকাশিত : ০৮:২২:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মে ২০২০
দিনটি ছিল ঈদর দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ২৬ মে ২০২০। হটাৎ ঢাকা থেকে প্রিয় বন্ধু বাবুলের কল এলো, একটি দুঃখের সংবাদ আজ সকালে জুয়েল ভাই মারা গেছেন।
বন্ধু বাবুল ছিল হুমায়ন কবির জুয়েলের প্রিয় পাত্র। বন্ধুর ফোন কেটে যাওয়ার পর কিছুতেই এ কথা বিশ্বাষ হচ্ছিল না শিহান জুয়েল মারা গেছেন।
তারপর সবার সাথে ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হলাম মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের কারাতে রেফারী অংগনের উজ্জ্বল নক্ষত্র হুমায়ন কবির জুয়েল সত্যিই চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে।
বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের কারাতের যে পরিচিত করেছিলেন এই জুয়েলকে বিদেশীরা”বিগম্যান” হিসেবে চিনতো।কারন,তিনি ছিলেন বাংলাদেশের কারাতে জগতের সব চেয়ে মোটা মানুষ। মানুষটির মধ্যে ছিল অসাাধারণ কারাতে রেফারী করার বাচন ভংগি ও কলাকৌশল।
তিনি ছিলেন দেশের সকল কারাতে রেফারী তৈরীর কারিগর। বাংলাদেশে যে কয়জন আন্তর্জাতিক কারাতে রেফারী আছে তারা সবাই তারই তৈরী।
জুয়েল এর ভিতর কারাতে রেফারী করার একটা গুন ছিল তার মধ্যে অন্যতম, কারাতে রেফারী করার সময় যে শব্দ উচ্চারন করতে হত ঐ শব্দ উচ্চারনে তিনি ছিলেন পারদর্শী। বড় ভাল মানুষ ছিলেন তিনি।
সারা দেশে ও বিদেশে কারাতে লোকদের কাছে প্রিয় মুখ ছিল এই লোকটি। ঢাকা’তে কেউ যদি তার কাছে রেফারী’র ব্যাপারে যেত তাকে যথেষ্ঠ সহযোগিতা করত এবং নিজের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করত।
২০১৯ এ বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন এর নির্বাচনে নতুন কমিটি নির্বাচিত হওয়ার পিছনে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন এই প্রিয় মানুষটি। কারাতে প্রচুর ভালবাসতেন। এই কারাতের জন্য যোগ্য থাকা সত্বেও কোন চাকরী করেন নি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারাতে নিয়েই পরে ছিলেন।
বাংলাদেশ কারাতে রেফারী এসোসিয়েশন করে সারা দেশে কারাতে রেফারী ছাত্র-ছাত্রী তৈরী করেছেন। তাদের মর্যাদার জন্য জাতীয় কারাতে রেফারীতে ভূষিত করেছিলেন।
এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে “ জুয়েল কারাতে একাডেমী” কারাতে প্রতিষ্ঠান খুলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী তৈরী করেছেন যা পুরো রাজধানীতে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন।
বর্তমানে তার ছাত্র-ছাত্রীরা দেশে -বিদেশে নিজ ও আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির সুনাম করেছেন। কেউ কেউ তার সুপারিশে বড় বড় কোম্পানী,সরকারী,আধা- সরকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্ম করার সুযোগ পেয়েছেন। সারা দেশে যত কারাতে রেফারী ছাত্র-ছাত্রী আছে সবাই তারই তৈরী।
বাংলাদেশের কারাতে আন্তর্জাতিক দরবারে পৌঁছানোর লক্ষে সোতোকান কারাতে দো ফেডারেশন গড়ে তুলেন। নিজের নাম ও দেশের নাম উজ্জ্বল করে ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ থেকে আজ পর্যন্ত কেউ এত বিদেশের মাটিতে তার মত কারাতে রেফারী করার সুযোগ পায়নি। প্রায় সারা বিশ্বে বড় বড় আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পক্ষে হয়ে তিনি কারাতে রেফারী করেছেন।
জাপানী কারাতে প্রশিক্ষক শিহান তেতসুরো কিতামুরা, ঢাকা’র শিহান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন সেন্টু, সেন্সি মোঃ জসিম উদ্দিন, মোঃ মতিউর রহমান নাঈম,নারায়ণগন্জ’র শিহান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, কুমিল্লার শিহান মোঃ মোখলেসুর রহমান আবু, সেন্সি নুরে আলম, চট্টগ্রামের শিহান শাহজাদা আলম, কাজী রাশেদ আলী, রতন তালুকদার,সেন্সি এস এম আরিফ চৌধুরী, তুলু-উশ-শামস, অজয় দে, কাওসার আহমেদ এবং আমি (আব্দুল হান্নান কাজল) তার প্রিয় পাত্র ছিলাম।
চট্টগ্রামে যখনই তিনি রেফারী প্রশিক্ষণ,প্রতিযেগিতায় আসতেন চট্রগ্রামের উল্লেখিত লোকদের নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে যেতেন। তার প্রিয় খাবার ছিল শিক কাবাব।
দেশে-বিদেশে এই কারাতে জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র মাত্র ৫৫ বছর বয়সে অকালে চলে যাওয়াতে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের ও বিদেশের কারাতে অংগনের।
তিনি মারা যাওয়ার পূর্বে অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে সারা দেশের অসহায় কারাতে ,রেফারী ছাত্র-ছাত্রীদের পণ্য সামগ্রী দিয়ে ও আর্থিক সহযোগিতা করে গেছেন।
তার মৃত্যূর কথা অনেকেই বিশ্বাষ করতে পারছেন না।অকালে ঝরে গেল একটি তারকা। আমরা হারিয়েছি কারাতে রেফারী তৈরী করার কারিগড় পিতা’কে।
আমরা তার কছে হেরে গেছি,তার ভালবাসার মূল্য দিতে পারিনি। তার মৃত্যূর সংবাদ পেয়েও করোনা ভাইরাসের কারনে গনপরিবহণ চলাচল না থাকার দরুন জানাযায় অংশ গ্রহন করতে পারিনি।
হয়ত পারবোনা তাঁর ঋন শোধ করতে। আমরা তার মত এমন হিরা হয়ত আর কখনো পাবোনা। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় যে যার ধর্ম মতে তার জন্য দোয়া করতে পারি। মহান দয়ালু আল্লাহর কাছে তার জন্য প্রতিদিন যে যেখানে থাকি সেখান থেকে জেয়ারত করতে পারি।
প্রতি বছর তার মৃত্যূবার্ষিকীতে কোরআন খতম ও জুয়েল স্মৃতি জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতা ও জুয়েল স্মৃতি আন্তর্জাতিক কারাতে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশের কারাতে জগতে তার যে অবদান ছিল তা চালু রেখে তাকে স্মরণ করতে পারি।তাহলে তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেচেঁ থাকবেন।
আমরা এই উজ্জ্বল নক্ষত্র কে কিছুতেই যেন না ভুলি। বাংলাদেশ কারাতে রেফারী এসোসিয়েশন এর সকল সদস্যদের অনুরোধে বাংলাদেশ কারাতে ফেডারেশন এর নিকট এই আকুল আবেদন জানাই।
এমনি করে সবাই যাবে যেতে হবে, যেখানেই যান ভাল থাকেন,শান্তিতে থাকেন, আপনি চিরকাল আমাদের মণিকোঠায় থাকবেন, দেবনা আপনাকে ভুলিতে, প্রিয় কারাতে রেফারী প্রশিক্ষক হুমায়ন কবির জুয়েল আপনাকে।
লেখক:- সাংবাদিক ও সদস্য – বাংলাদেশ কারাতে রেফারী এসোসিয়েশন।