০৭:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

গবাদীপশু মোটাতাজাকরণে স্টেরয়েড ব্যবহার  ও স্বাস্থ্যঝুকিঁ,  আমাদের করণীয় কী ?

মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে, প্রতি বছর বাংলাদেশের মানুষের মাংসের চাহিদার জন্য যে পরিমান পশু জবাই করা হয় তার অর্ধেকই পশু কোরবানীর ঈদকে ঘিরে। তাই এই সময়ে বেশী লাভ পাওয়ার আশায়  খামারীরা সারাবছর ধরে পশুপালন করে থাকে । প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের জরিপ মতে,এবছর কোরবানীর জন্য আনুমানিক ১ কোটি ১৮ লক্ষ গবাদি পশু প্রস্তুত আছে বলে ধরা হয়েছে ,যা প্রধানত ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার বড় খামারে লালন পালন করা হয়।

গত কয়েক বছর পাশের দেশ ভারত থেকে গরু আমদানী না হলেও পশুর ঘাটতি হয় নাই। সুতরাং এটি একটি বড় আয়ের উৎস অনেক কৃষকের জন্য। কিন্তু এই বিশাল শিল্পকে কিছুটা ঝুকিঁর্পূন করেছে নিষিদ্ধ ও কৃত্রিম উপায়ে গবাদি পশু মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়া।

আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গবাদিপশু অসুস্থ্য হলে স্বল্প মাত্রায় স্টেরয়েড ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছে। কিন্তু স্টেরয়েডের ক্ষতিকর প্রভাবের কারনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০০৬ সাল হতে স্টেরয়েড ব্যবহার সম্পূর্নরপে নিষিদ্ধ করেছে।আমাদের দেশের বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে ২০১০ সালে মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন, ২০১০প্রনীত হয়েছে। আইনটির ১৪ নং ধারায় উল্লেখ হয়েছে, ”১. মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য এ্যান্টিবায়েটিক, গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড, কীটনাশকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায় নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না। কোন ব্যক্তি উপধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে উহা এই আইনের অধীনে অপরাধ বলে গণ্য হবে”।

এই আইন কতটুকু প্রায়োগীকতা আমাদের সকলেরই জানা। সদ্য আ ফ ম ফারুক স্যারের গবেষনা থেকে আমরা দেখেছি গরুর দুধে কি পরিমাণ এ্যান্টিবায়েটিক আছে। এটি কোন নতুন আবিস্কার নয়। তারপরেও হইচই কম হয়নাই। গরুকে এ্যান্টিবায়েটিক খাওয়ালে তা দুধে যাবেই। আমি নিজে মুরগীর উপর গবেষনা করে দেখেছি, খামারীরা যত্রতত্র এ্যান্টিবায়েটিক ব্যবহার করে মুরগী পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা, গ্রাম্য পশু ডাক্তারের ভূমিকা এবং কোম্পানীগুলোর অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা দায়ী।

যাইহোক, গবাদী পশু পালনেরক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। মৎস্য খাদ্য ও পশু খাদ্য আইন ২০১০ অনুসারে স্টেরয়েড ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও শুধুমাত্র অসুস্থ্য হলে স্বল্পমাত্রায় ব্যবহারের নির্দেশ দিতে পারেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী ডাক্তারগণ। কিন্তু সেই বাস্তবতা কতটা মানা হচ্ছে? প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কিত কোন তথ্য নাই। ২০১৩ সালে এগুলো ব্যবহার না করার জন্য এই সম্পর্কে একটি বিঞ্জপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে তাদের দায়িত্বের ইতি টেনেছেন। প্রতিবছর প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরের রুটিন মিটিং হয় এবং ঢাকার বড় হাটগুলোতে ভেটেরীনারী ডাক্তার নিযুক্ত করা হয়। হাটের কোন পশু যদি অসুস্থ্য হয় তাহলে ক্রেতা বা বিক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে তার চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু স্টেরয়েড বা মোটাতাজাকরন বড়ি দিয়ে পশু মোটাকরা তা সনাক্তের জন্য ভেটেরীনারী ডাক্তারকে কোন নির্দেশনা করা নীতিমালা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাইনাই। এছাড়া মাংসে অধিকমাত্রায় স্টেরয়েড বা এ্যানিন্টবায়েটিক মাপার ব্যবস্থা অধিদপ্তরের আছে কি না তাজানা নেই। বরং গবাদি পশু এই উপায়ে মোটা তাজা করা হচ্ছে না বলে বক্তব্য প্রদান করে দায় শেষ করছেন।

সুতরাং অইন থাকলেও তা প্রয়োগের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। ফলে আইন মানার প্রকৃত দায় আসে খামারীদের

উপর। যারা অধিক মুনাফার আশায় এই কাজটি করে। এখন প্রশ্ন তাদের দায় কতটুকু? তারা প্রধানত গরুর

চিকিৎসার জন্য গ্রাম্য পশু ডাক্তার ও খাদ্য এবং খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহকারী দোকানদারদের উপর নির্ভরশীল। তাদের ব্যবস্থামত অধিক মুনাফার আশায় এটি করে থাকে। তারা জানেই না তাদের আদৌ দায় আছে কিনা। পত্র পত্রিকার তথ্য ঘাটাঘটি করলাম আইন শৃ্খংলা বাহিনীর কর্মতৎপরতা সম্পর্কে। তাদের কাছে হয়তো কেউ অভিযোগ করে নাই বলে তাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন। এছাড়া কোন খামারী ব্যবহার করছে এটাপ্রমাণ করা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। তারপরও এইসব অবৈধ স্টেরয়েড ট্যাবলেট অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন শেষ দায় নিতে হয় সেই জনগণকে যারা এই মাংস কোরবাণী সহ সারা বছর খাচ্ছে না জেনে। তাদের এই না জানার দায় থেকেই এই লেখা।

নিষিদ্ধ উপায়ে  মোটাতাজাকরণ   

অধিকাংশ পরিসংখ্যান মতে, সীমান্তবর্তী এলাকা গুলোতে এইপন্থা অবলম্বন করা হয় । কারণ অবৈধ পথে ভারত ও মায়ানমার থেকে নিষিদ্ধ মেডিসিনগুলো  আসে এবং এই সকল জায়গাগুলোতে যত্রতত্র ব্যবহার হয়। এমনকি অনেকক্ষেত্রে এগুলো মুদি দোকানেও পাওয় যায়। এগুলোর মধ্যডেক্সামেথাসোন বা ডেকাসোম, বেটামেথাসোন, পেরিয়াকটিন, ওরাডেক্সোন, প্রেডনিসোলোন, বেটনেনাল,কোরটান, স্টেরন এবং এডাম-৩৩ অন্যতম। এছাড়া ব্যাথার ঔষুধকেও মোটাতাজা করণে ব্যবহার করা হয়।

অনেক খামারী ইউরিয়াকেও মোটাতাজাকরনের জন্য ব্যভহার করে থাকেন। এছাড়াও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ’’পাম্প বা লাল সাদা বড়ি বলে খ্যাত স্টেরয়েড ব্যভহার করা হয়। সাধারণত, অসাধু ব্যবসায়ী ও কিছু খামারী যাদের জ্ঞানের স্বল্পতা আছে তারা এই কাজটি করে থাকে গ্রাম্য পল্লী চিৎিসকের পরামর্শ মতে। এগুলো ব্যবহার করলেও গবাদিপশু সাময়িক মোটা ও সুন্দর দেখায় সত্যি কিন্ত জবাইয়ের পর পানি বের হয়ে প্রকৃত মাংসের পরিমাণ কমে যায়। কেন এমন হয়? এধরনের রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহারে গরুর হৃৎপিন্ড, লিভার ও প্রধানত কিডনী বিকল হয়। ফলে তার শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি বের না হয়ে জমে মোটা তাজা দেখায়। তবে গরু মোটা হলে সেটা যে অস্বাস্থ্যকর তা কিন্তু নয়।

 

 স্টেরয়েড প্রদানকৃত মোটাতাজা গরু চেনার উপায় 

গরুর গায়ে হাত দিলে চাপ দিলে চাপটি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসেনা। গরুর স্বাভাবিক চঞ্চলতা কমথাকে। গরু অধিকাংশ সমায় ঝিমায় ও দাড়িয়ে না থেকে বসে থাকার প্রবণতা বেশি। সবসময় গরুর মুখ দিয়ে লালা

ঝরতে থাকে।গরু স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘনঘন নি:শ্বাস নিতে থাকে এবং সবসময় হাপাতে থাকে। এর কারন গরু বেশি ক্লান্ত থাকে এবং অসুস্থ্য থাকে। এ ধরনের গরু রোদে থাকতে পারে না। গরুর শরীরে হাত দিলে অনুভূতি কম থাকে।

 

গরু মোটাতাজাকরনে স্টেরয়েড বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যদি ব্যবহারের স্বাস্থ্য ঝুকিঁ

আর্ন্তজাতিক মানের গবেষনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, স্টেরয়েড ও এ্যান্টিবায়েটিক রান্নার

তাপে নষ্ট হয়না। ফলে মাংসের সাথে এগুলো মানবরদহে প্রবেশ করে। ফলে এই ধরনের মাংস প্রধানত

বন্ধ্যাত্বকরণ, ক্যান্সার, কিডনী বিকল ও ডায়াবেটিসের মত রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি করে। যা বাংলাদেশের

সাম্প্রতিক বোগের পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমেয়। এছাড়া শিশুদের এই ধরনের মাংস থেকে দ্রত বয়:সন্ধি, চুল পাকা ও অন্যান্য দ্রত বয়ো:বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় ??

আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল, প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরকে এই সকল গবাদি পশু সনাক্তকরণের বাস্তব সম্মত নীতিমালা, পরীক্ষণের ব্যবস্থা ও জনবল

প্রয়োগ করতে হবে। অবৈধভাবে সেন্টরয়েড আমদানীকারককে আইনের আওতায় আনতে হবে। খামারীদের এই ধরনের যত্রতত্র স্টেরয়েড ব্যবহারেরর প্রবণতা ত্যাগ করা উচিত। তাদের গরু মোটাতাজাকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভের প্রয়োজন আছে। তাদের জানা উচিত যত্রতত্র স্টেরয়েড ব্যবহারে গরু মারাও যেতে পারে। তখন লাভের তুলনায় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সুতরাং খামারীদের উচিত উপজেলা ভেটেরিনারী ডাক্তারের পরামর্শে গরুর চিকিৎসা করা। সর্বোপরি জনগনের উচিত অস্বাস্থ্যকরভাবে ও কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু চিনে ক্রয় না করা। এছাড়াও দেশী জাতের গরুতে মোটাতাজাকরণ ফলপ্রসূ হয় কম। তাই দেশী জাত চিনে গরু ক্রয় করতে পারলেও এই ধরনের স্বাস্থ্যঝুকিঁ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

 

করোনাকালীন সময়ে  কীভাবে কুরবানির পশু কিনবেন?

আমাদের জানা জরুরী যে পশু থেকে করোনা ছড়ায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পশু থেকে ছড়ানোর যে কথা বলেছিল, সেটা ছিল প্রধানত চীনের জন্য।আমাদের দেশে এখনও কোন রিপোর্ট পাওয়া যায় নাই যে, গবাদিপশু থেকে করোনা ছড়াবে। সুতরাং আমদের উচিত হল গবাদিপশু দিয়ে কুরবানি করা। করোনার কারনে পশুর হাট বন্ধ রাখা ঠিক না। অনেকে বলেছেন, সমপরিমাণ অর্থ দান করে দিলে কুরবানি হয়ে যাবে সেটি ঠিক নয়। প্রয়োজনে অনলাইনে কিনা যেতে পারে। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু ক্রয় করা যেতে পারে।

লেখকঃ অধ্যাপক, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ইকো ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট অফ গ্রেটার দিনাজপুর এন্ড রংপুর রিজন এর প্রকল্পের আওতায় আঞ্চলিক পর্যায়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

গবাদীপশু মোটাতাজাকরণে স্টেরয়েড ব্যবহার  ও স্বাস্থ্যঝুকিঁ,  আমাদের করণীয় কী ?

প্রকাশিত : ০৪:১৫:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ জুলাই ২০২০

মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের তথ্যের ভিত্তিতে, প্রতি বছর বাংলাদেশের মানুষের মাংসের চাহিদার জন্য যে পরিমান পশু জবাই করা হয় তার অর্ধেকই পশু কোরবানীর ঈদকে ঘিরে। তাই এই সময়ে বেশী লাভ পাওয়ার আশায়  খামারীরা সারাবছর ধরে পশুপালন করে থাকে । প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের জরিপ মতে,এবছর কোরবানীর জন্য আনুমানিক ১ কোটি ১৮ লক্ষ গবাদি পশু প্রস্তুত আছে বলে ধরা হয়েছে ,যা প্রধানত ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার বড় খামারে লালন পালন করা হয়।

গত কয়েক বছর পাশের দেশ ভারত থেকে গরু আমদানী না হলেও পশুর ঘাটতি হয় নাই। সুতরাং এটি একটি বড় আয়ের উৎস অনেক কৃষকের জন্য। কিন্তু এই বিশাল শিল্পকে কিছুটা ঝুকিঁর্পূন করেছে নিষিদ্ধ ও কৃত্রিম উপায়ে গবাদি পশু মোটাতাজাকরন প্রক্রিয়া।

আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন গবাদিপশু অসুস্থ্য হলে স্বল্প মাত্রায় স্টেরয়েড ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেছে। কিন্তু স্টেরয়েডের ক্ষতিকর প্রভাবের কারনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০০৬ সাল হতে স্টেরয়েড ব্যবহার সম্পূর্নরপে নিষিদ্ধ করেছে।আমাদের দেশের বর্তমান আওয়ামী সরকারের আমলে ২০১০ সালে মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন, ২০১০প্রনীত হয়েছে। আইনটির ১৪ নং ধারায় উল্লেখ হয়েছে, ”১. মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য এ্যান্টিবায়েটিক, গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড, কীটনাশকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায় নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাবে না। কোন ব্যক্তি উপধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করিলে উহা এই আইনের অধীনে অপরাধ বলে গণ্য হবে”।

এই আইন কতটুকু প্রায়োগীকতা আমাদের সকলেরই জানা। সদ্য আ ফ ম ফারুক স্যারের গবেষনা থেকে আমরা দেখেছি গরুর দুধে কি পরিমাণ এ্যান্টিবায়েটিক আছে। এটি কোন নতুন আবিস্কার নয়। তারপরেও হইচই কম হয়নাই। গরুকে এ্যান্টিবায়েটিক খাওয়ালে তা দুধে যাবেই। আমি নিজে মুরগীর উপর গবেষনা করে দেখেছি, খামারীরা যত্রতত্র এ্যান্টিবায়েটিক ব্যবহার করে মুরগী পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা, গ্রাম্য পশু ডাক্তারের ভূমিকা এবং কোম্পানীগুলোর অধিক মুনাফা লাভের প্রবণতা দায়ী।

যাইহোক, গবাদী পশু পালনেরক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা যায়। মৎস্য খাদ্য ও পশু খাদ্য আইন ২০১০ অনুসারে স্টেরয়েড ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও শুধুমাত্র অসুস্থ্য হলে স্বল্পমাত্রায় ব্যবহারের নির্দেশ দিতে পারেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী ডাক্তারগণ। কিন্তু সেই বাস্তবতা কতটা মানা হচ্ছে? প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কিত কোন তথ্য নাই। ২০১৩ সালে এগুলো ব্যবহার না করার জন্য এই সম্পর্কে একটি বিঞ্জপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে তাদের দায়িত্বের ইতি টেনেছেন। প্রতিবছর প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরের রুটিন মিটিং হয় এবং ঢাকার বড় হাটগুলোতে ভেটেরীনারী ডাক্তার নিযুক্ত করা হয়। হাটের কোন পশু যদি অসুস্থ্য হয় তাহলে ক্রেতা বা বিক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে তার চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু স্টেরয়েড বা মোটাতাজাকরন বড়ি দিয়ে পশু মোটাকরা তা সনাক্তের জন্য ভেটেরীনারী ডাক্তারকে কোন নির্দেশনা করা নীতিমালা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাইনাই। এছাড়া মাংসে অধিকমাত্রায় স্টেরয়েড বা এ্যানিন্টবায়েটিক মাপার ব্যবস্থা অধিদপ্তরের আছে কি না তাজানা নেই। বরং গবাদি পশু এই উপায়ে মোটা তাজা করা হচ্ছে না বলে বক্তব্য প্রদান করে দায় শেষ করছেন।

সুতরাং অইন থাকলেও তা প্রয়োগের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। ফলে আইন মানার প্রকৃত দায় আসে খামারীদের

উপর। যারা অধিক মুনাফার আশায় এই কাজটি করে। এখন প্রশ্ন তাদের দায় কতটুকু? তারা প্রধানত গরুর

চিকিৎসার জন্য গ্রাম্য পশু ডাক্তার ও খাদ্য এবং খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহকারী দোকানদারদের উপর নির্ভরশীল। তাদের ব্যবস্থামত অধিক মুনাফার আশায় এটি করে থাকে। তারা জানেই না তাদের আদৌ দায় আছে কিনা। পত্র পত্রিকার তথ্য ঘাটাঘটি করলাম আইন শৃ্খংলা বাহিনীর কর্মতৎপরতা সম্পর্কে। তাদের কাছে হয়তো কেউ অভিযোগ করে নাই বলে তাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন। এছাড়া কোন খামারী ব্যবহার করছে এটাপ্রমাণ করা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ। তারপরও এইসব অবৈধ স্টেরয়েড ট্যাবলেট অবৈধভাবে প্রবেশের দায়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে কর্তৃপক্ষ। এখন শেষ দায় নিতে হয় সেই জনগণকে যারা এই মাংস কোরবাণী সহ সারা বছর খাচ্ছে না জেনে। তাদের এই না জানার দায় থেকেই এই লেখা।

নিষিদ্ধ উপায়ে  মোটাতাজাকরণ   

অধিকাংশ পরিসংখ্যান মতে, সীমান্তবর্তী এলাকা গুলোতে এইপন্থা অবলম্বন করা হয় । কারণ অবৈধ পথে ভারত ও মায়ানমার থেকে নিষিদ্ধ মেডিসিনগুলো  আসে এবং এই সকল জায়গাগুলোতে যত্রতত্র ব্যবহার হয়। এমনকি অনেকক্ষেত্রে এগুলো মুদি দোকানেও পাওয় যায়। এগুলোর মধ্যডেক্সামেথাসোন বা ডেকাসোম, বেটামেথাসোন, পেরিয়াকটিন, ওরাডেক্সোন, প্রেডনিসোলোন, বেটনেনাল,কোরটান, স্টেরন এবং এডাম-৩৩ অন্যতম। এছাড়া ব্যাথার ঔষুধকেও মোটাতাজা করণে ব্যবহার করা হয়।

অনেক খামারী ইউরিয়াকেও মোটাতাজাকরনের জন্য ব্যভহার করে থাকেন। এছাড়াও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ’’পাম্প বা লাল সাদা বড়ি বলে খ্যাত স্টেরয়েড ব্যভহার করা হয়। সাধারণত, অসাধু ব্যবসায়ী ও কিছু খামারী যাদের জ্ঞানের স্বল্পতা আছে তারা এই কাজটি করে থাকে গ্রাম্য পল্লী চিৎিসকের পরামর্শ মতে। এগুলো ব্যবহার করলেও গবাদিপশু সাময়িক মোটা ও সুন্দর দেখায় সত্যি কিন্ত জবাইয়ের পর পানি বের হয়ে প্রকৃত মাংসের পরিমাণ কমে যায়। কেন এমন হয়? এধরনের রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহারে গরুর হৃৎপিন্ড, লিভার ও প্রধানত কিডনী বিকল হয়। ফলে তার শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি বের না হয়ে জমে মোটা তাজা দেখায়। তবে গরু মোটা হলে সেটা যে অস্বাস্থ্যকর তা কিন্তু নয়।

 

 স্টেরয়েড প্রদানকৃত মোটাতাজা গরু চেনার উপায় 

গরুর গায়ে হাত দিলে চাপ দিলে চাপটি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসেনা। গরুর স্বাভাবিক চঞ্চলতা কমথাকে। গরু অধিকাংশ সমায় ঝিমায় ও দাড়িয়ে না থেকে বসে থাকার প্রবণতা বেশি। সবসময় গরুর মুখ দিয়ে লালা

ঝরতে থাকে।গরু স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘনঘন নি:শ্বাস নিতে থাকে এবং সবসময় হাপাতে থাকে। এর কারন গরু বেশি ক্লান্ত থাকে এবং অসুস্থ্য থাকে। এ ধরনের গরু রোদে থাকতে পারে না। গরুর শরীরে হাত দিলে অনুভূতি কম থাকে।

 

গরু মোটাতাজাকরনে স্টেরয়েড বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যদি ব্যবহারের স্বাস্থ্য ঝুকিঁ

আর্ন্তজাতিক মানের গবেষনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে, স্টেরয়েড ও এ্যান্টিবায়েটিক রান্নার

তাপে নষ্ট হয়না। ফলে মাংসের সাথে এগুলো মানবরদহে প্রবেশ করে। ফলে এই ধরনের মাংস প্রধানত

বন্ধ্যাত্বকরণ, ক্যান্সার, কিডনী বিকল ও ডায়াবেটিসের মত রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি করে। যা বাংলাদেশের

সাম্প্রতিক বোগের পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমেয়। এছাড়া শিশুদের এই ধরনের মাংস থেকে দ্রত বয়:সন্ধি, চুল পাকা ও অন্যান্য দ্রত বয়ো:বৃদ্ধির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

 

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় ??

আমার ব্যক্তিগত অভিমত হল, প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরকে এই সকল গবাদি পশু সনাক্তকরণের বাস্তব সম্মত নীতিমালা, পরীক্ষণের ব্যবস্থা ও জনবল

প্রয়োগ করতে হবে। অবৈধভাবে সেন্টরয়েড আমদানীকারককে আইনের আওতায় আনতে হবে। খামারীদের এই ধরনের যত্রতত্র স্টেরয়েড ব্যবহারেরর প্রবণতা ত্যাগ করা উচিত। তাদের গরু মোটাতাজাকরণের পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানলাভের প্রয়োজন আছে। তাদের জানা উচিত যত্রতত্র স্টেরয়েড ব্যবহারে গরু মারাও যেতে পারে। তখন লাভের তুলনায় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সুতরাং খামারীদের উচিত উপজেলা ভেটেরিনারী ডাক্তারের পরামর্শে গরুর চিকিৎসা করা। সর্বোপরি জনগনের উচিত অস্বাস্থ্যকরভাবে ও কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজা করা গরু চিনে ক্রয় না করা। এছাড়াও দেশী জাতের গরুতে মোটাতাজাকরণ ফলপ্রসূ হয় কম। তাই দেশী জাত চিনে গরু ক্রয় করতে পারলেও এই ধরনের স্বাস্থ্যঝুকিঁ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

 

করোনাকালীন সময়ে  কীভাবে কুরবানির পশু কিনবেন?

আমাদের জানা জরুরী যে পশু থেকে করোনা ছড়ায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পশু থেকে ছড়ানোর যে কথা বলেছিল, সেটা ছিল প্রধানত চীনের জন্য।আমাদের দেশে এখনও কোন রিপোর্ট পাওয়া যায় নাই যে, গবাদিপশু থেকে করোনা ছড়াবে। সুতরাং আমদের উচিত হল গবাদিপশু দিয়ে কুরবানি করা। করোনার কারনে পশুর হাট বন্ধ রাখা ঠিক না। অনেকে বলেছেন, সমপরিমাণ অর্থ দান করে দিলে কুরবানি হয়ে যাবে সেটি ঠিক নয়। প্রয়োজনে অনলাইনে কিনা যেতে পারে। এছাড়া মাস্ক ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশু ক্রয় করা যেতে পারে।

লেখকঃ অধ্যাপক, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়