০৬:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

করোনাকালে সঙ্কট বেড়েছে অভিবাসন প্রত্যাশীদের

জার্মানিতে সবই যেন চলছে করোনাকে ঘিরে। দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন শিশুদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, ব্যবসা, শিল্প-সাহিত্যে এর প্রভাব কতটা খারাপ হতে পারে- এসব নিয়ে চলছে বিতর্ক। শরণার্থীরা পড়ে গেছেন আড়ালে।

সামির আল জুবোরি ইরাক থেকে জার্মানিতে এসেছেন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। সেই থেকে বন শহরের শরণার্থী শিবির তার ঠিকানা। ৩৯ বছর বয়সী সামির করোনাকালে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা দেখে অভিভূত, ‘বিশেষ করে করোনার সময়ে জার্মানিতে থাকতে পেরে আমি খুশি, কারণ, ইরাকে স্বাস্থ্যসেবা জঘন্য।’

দু’দুবার করোনা-পরীক্ষা হয়েছে তার। ফলাফল দুবারই নেগেটিভ। অবশ্য শরণার্থী শিবিরের সবাই তার মতো ভাগ্যবান নয়। গত কয়েক মাসে এই শিবিরের ৫০ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। বেশিরভাগই বয়সে তরুণ বলে ইতোমধ্যে সেরেও উঠেছেন তারা।

তবে শিবিরের ২০০ মানুষের জীবনে নানাভাবেই খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছে কোভিড-১৯। স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রয়োগের কারণে খেলাধুলা বন্ধ, নেই লাইব্রেরিতে বই পত্রিকা পড়ে সময় কাটানোর সুযোগ, এক সঙ্গে বসে গল্প করা নিষেধ, যারা কাজ করতেন তাদের কর্মস্থলও বন্ধ।

রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছিলেন আইটিতে পড়াশোনা করা সামির আল জুবোরি। ভালো লাগছিল না কর্মহীন জীবন। অনলাইনে কয়েক জায়গায় কাজের সুযোগ চেয়ে সাড়া পাননি। শেষ পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন রান্না ঘরে। জানালেন, ‘রান্নাঘরে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছি আমি। হেড কুকের সঙ্গে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেছি।’

জার্মান কাউন্সিল অন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইন্ট্রিগ্রেশন (বিজেডআই)-এর মেমেত কিলিচ মনে করেন করোনায় গ্রাস করা চলতি সময়ে জার্মানিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা নিঃসন্দেহে অবহেলিত। অনেকের মনেই ভয়, যে-কোনোদিন হয়ত তাদের ফেরত পাঠানো হবে দেশে। অভিবাসনের আবেদন করে বসে আছেন অনেকেই। কাজ এগোচ্ছে না।

আইনজীবী মেমেত কিলিচ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যেই বিজেডআই গড়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। করোনাকালে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুরবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তুরস্ক থেকে পালিয়ে আসা এক পুলিশ কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করলেন, ‘আমরা তার রাজনৈতিকি আশ্রয়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখনো শুনানির তারিখই পাইনি।’

মেমেত কিলিচের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্কট এখন অন্যদের চেয়ে দ্বিগুণ-একদিকে জার্মানিতে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়, অন্যদিকে হঠাৎ কর্তৃপক্ষ দেশেফেরত পাঠাতে পারে, সেই ভয়।

কিলিচ মনে করেন, মোটামুটি স্বস্তিতে জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ বহাল থাকা উচিত। কিন্তু মিউনিখকেন্দ্রিক গবেষণা সংস্থা ইভোনে গিসিংয়ের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনাকালে অন্য দেশ থেকে আসা মানুষ, অর্থাৎ অভিবাসনপ্রত্যাশীরাই বেশি চাকরি হারিয়েছেন।

বেসরকারি সংস্থা প্রো আজিল-এর আইনজীবী ভিবকে জুডিথ মনে করেন, করোনা সঙ্কটের এই পর্যায়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবনে অতীতের একটা স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি ফিরে এসেছে। তার ভাষায়, ‘প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে এখানে যেন স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। এখন আবার একেকটা গ্রুপে ভাগ করে করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে একটু বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি জুডিথ, ‘কর্তৃপক্ষ একদিকে সবাইকে বলছে ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে, অন্যদিকে চালিয়ে যাচ্ছে জোর করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত পাঠানো। কী অদ্ভুত!

ট্যাগ :

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

করোনাকালে সঙ্কট বেড়েছে অভিবাসন প্রত্যাশীদের

প্রকাশিত : ১২:০০:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২১

জার্মানিতে সবই যেন চলছে করোনাকে ঘিরে। দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন শিশুদের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, ব্যবসা, শিল্প-সাহিত্যে এর প্রভাব কতটা খারাপ হতে পারে- এসব নিয়ে চলছে বিতর্ক। শরণার্থীরা পড়ে গেছেন আড়ালে।

সামির আল জুবোরি ইরাক থেকে জার্মানিতে এসেছেন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। সেই থেকে বন শহরের শরণার্থী শিবির তার ঠিকানা। ৩৯ বছর বয়সী সামির করোনাকালে জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা দেখে অভিভূত, ‘বিশেষ করে করোনার সময়ে জার্মানিতে থাকতে পেরে আমি খুশি, কারণ, ইরাকে স্বাস্থ্যসেবা জঘন্য।’

দু’দুবার করোনা-পরীক্ষা হয়েছে তার। ফলাফল দুবারই নেগেটিভ। অবশ্য শরণার্থী শিবিরের সবাই তার মতো ভাগ্যবান নয়। গত কয়েক মাসে এই শিবিরের ৫০ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। বেশিরভাগই বয়সে তরুণ বলে ইতোমধ্যে সেরেও উঠেছেন তারা।

তবে শিবিরের ২০০ মানুষের জীবনে নানাভাবেই খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছে কোভিড-১৯। স্বাস্থ্যবিধির কঠোর প্রয়োগের কারণে খেলাধুলা বন্ধ, নেই লাইব্রেরিতে বই পত্রিকা পড়ে সময় কাটানোর সুযোগ, এক সঙ্গে বসে গল্প করা নিষেধ, যারা কাজ করতেন তাদের কর্মস্থলও বন্ধ।

রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠছিলেন আইটিতে পড়াশোনা করা সামির আল জুবোরি। ভালো লাগছিল না কর্মহীন জীবন। অনলাইনে কয়েক জায়গায় কাজের সুযোগ চেয়ে সাড়া পাননি। শেষ পর্যন্ত নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন রান্না ঘরে। জানালেন, ‘রান্নাঘরে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছি আমি। হেড কুকের সঙ্গে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেছি।’

জার্মান কাউন্সিল অন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ইন্ট্রিগ্রেশন (বিজেডআই)-এর মেমেত কিলিচ মনে করেন করোনায় গ্রাস করা চলতি সময়ে জার্মানিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা নিঃসন্দেহে অবহেলিত। অনেকের মনেই ভয়, যে-কোনোদিন হয়ত তাদের ফেরত পাঠানো হবে দেশে। অভিবাসনের আবেদন করে বসে আছেন অনেকেই। কাজ এগোচ্ছে না।

আইনজীবী মেমেত কিলিচ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে কাজ করার উদ্দেশ্যেই বিজেডআই গড়েছিলেন ১৯৯৮ সালে। করোনাকালে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দুরবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তুরস্ক থেকে পালিয়ে আসা এক পুলিশ কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করলেন, ‘আমরা তার রাজনৈতিকি আশ্রয়ের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখনো শুনানির তারিখই পাইনি।’

মেমেত কিলিচের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্কট এখন অন্যদের চেয়ে দ্বিগুণ-একদিকে জার্মানিতে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়, অন্যদিকে হঠাৎ কর্তৃপক্ষ দেশেফেরত পাঠাতে পারে, সেই ভয়।

কিলিচ মনে করেন, মোটামুটি স্বস্তিতে জীবনযাপন নিশ্চিত করার জন্য অভিবাসনপ্রত্যাশীদের খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ বহাল থাকা উচিত। কিন্তু মিউনিখকেন্দ্রিক গবেষণা সংস্থা ইভোনে গিসিংয়ের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনাকালে অন্য দেশ থেকে আসা মানুষ, অর্থাৎ অভিবাসনপ্রত্যাশীরাই বেশি চাকরি হারিয়েছেন।

বেসরকারি সংস্থা প্রো আজিল-এর আইনজীবী ভিবকে জুডিথ মনে করেন, করোনা সঙ্কটের এই পর্যায়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জীবনে অতীতের একটা স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি ফিরে এসেছে। তার ভাষায়, ‘প্রত্যাবাসনের প্রশ্নে এখানে যেন স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। এখন আবার একেকটা গ্রুপে ভাগ করে করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে একটু বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি জুডিথ, ‘কর্তৃপক্ষ একদিকে সবাইকে বলছে ভ্রমণ এড়িয়ে চলতে, অন্যদিকে চালিয়ে যাচ্ছে জোর করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত পাঠানো। কী অদ্ভুত!