০৩:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

একই গন্ডিতে ধারাবাহিক নাটক

জোয়ার যায়, ভাটা আসে। সকালের সোনা রোদ এক সময় রূপান্তিত হয়ে রাত নামে। সময়ের সঙ্গে রদ-বদল ঘটে অনেক কিছুর। আমাদের দেশীয় শোবিজেও অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছে বিগত কয়েক বছরে। সিনেমায় একটা সময় দেখা যেত, যখন যে জোয়ার আসত, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের সেই জোয়ারেই গা ভাসাতে। কখনো ভরপুর অ্যাকশন, কখনো অশ্লীলতা, কখনো আবার ফোক ছবির জোয়ার। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে এবং নতুন ও মেধাবী নির্মাতারা চলচ্চিত্রে এগিয়ে আসায় অনেকটা পরিবর্তন এসেছে সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে। ভালো কিংবা মন্দ- যাই হোক না কেন, গানের ক্ষেত্রেও বেশ একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মঞ্চেও শোভা পাচ্ছে বেশকিছু নতুন নাটক।
কিন্তু সবকিছুর রদবদল ঘটলেও পালাবদল ঘটেনি টিভি নাটকের প্রেক্ষপটের। বরং ধারাবাহিক আর একক নাটক যেমন ভাগ হয়ে গেছে, তেমনি অভিনয় শিল্পীরাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একক নাটকের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই দেখা যায় হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পীর উপস্থিতি। যারা চলমান সময়ের সবচেয়ে শীর্ষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পী। রোমান্টিক একক নাটকের ক্ষেত্রেই এসব পাত্র-পাত্রীকে দেখা যায়। এসব নাটকে অনেকটা ভিন্নতার ছোঁয়াও লক্ষ্য করা যায়। রোমান্টিক নাটকের বেশিরভাগই আধুনিক ও শহরকেন্দ্রিক।
অন্যদিকে ধারাবাহিক নাটকের ক্ষেত্রে চিত্রটা পুরোটাই উল্টা। একটুও যেন বদলায়নি ধারাবাহিক নাটকের ধারা। আগের মতো সেই কমেডির নামে ভাড়ামি, বিকৃত ভাষার ব্যবহার আর গ্রামীণ প্রেক্ষাপট থেকে মুক্ত হতে পারছে না এসব ধারাবাহিক নাটক। অভিনয়শিল্পীর ক্ষেত্রেও দেখা যায় ঘুরেফিরে সেই একই মুখ। যা আমাদের সমৃদ্ধ নাটক ইন্ডাস্ট্রির জন্য একেবারেই হতাশাজনক। শৈল্পিক নাটক যেমন নগণ্য, তেমনি সুপারহিট নাটকের ও তেমন এখনো দেখা মিলছে না। টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন অসংখ্য ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নাটকই জনপ্রিয়তা কিংবা আহামরি আলোচনায় আসতে পারছে না। একটা সময় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মেজবাউর রহমান রেদোয়ান রনি, ইফতেখার আহমেদ ফাহমিরা যাও দুয়েকটা কমেডি নাটক বানাতেন, ইদানীং তারা চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যস্ত হওয়ায় সেসব নাটকও এখন অনুপস্থিত। কিছু কিছু নির্মাতার নাটক নির্মাণের হিড়িক দেখলে মনে হয় নাটকের ইন্ডাস্ট্রি বুঝি ভালোই আছে। অন্যদিকে যখন প্রতিষ্ঠিত গুণী নির্মাতাদের নানা সমস্যা নিয়ে আক্ষেপ শোনা যায়, তখন বোঝা যায় নাটক ইন্ডাস্ট্রি দিন দিন ম্লান হচ্ছে। একটা সময় নাটকে দর্শকদের হাসানোর জন্য বিশেষ কিছু কমেডি দৃশ্য রাখা হতো। দর্শক সেটা লুফেও নিতেন। কিন্তু দর্শকের রুচি দীর্ঘদিন এক রকম থাকে না- আমাদের নির্মাতারা হয়তো সেটা টের পাচ্ছেন না, নয়তো চ্যানেল কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে যেতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে নির্মাতাদের মেধা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ধারাবাহিকের লিখিত কোনো চিত্রনাট্য থাকে না। তারপরও কিছু পেশাদার শিল্পী পেটের দায়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিয়মিত কাজ করছেন এসব নামসর্বস্ব নাটকে। বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যেসব ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে, তাদের প্রায় সবগুলো নাটকই তথাকথিত কমেডি নাটক। যা দেখে মনে হয়, দর্শকের ভিন্ন কিছু উপহার দেওয়ার জন্য নয়, কেবলমাত্র চ্যানেলগুলোর খোরাক যোগানের জন্যই এসব নাটক নির্মিত হচ্ছে এমনকি অহেতুক সামনের দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে। এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে টানা কয়েক বছর ধরে।
বর্তমানে যেসব ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হচ্ছে, তার মধ্যে চ্যানেল আইতে ভালোবাসার যৌথ খামার, আম্মা, রুপালি জোৎস্নায়, প্রিয় দিন প্রিয় রাত, এটিএন বাংলায় জলে ভেজা রঙ, স্মৃতির আল্পনা আঁকি, পরিবার, এনটিভিতে পরের মেয়ে, আরটিভিতে ভিলেজ হট্টগোল, চিটিং মাস্টার, হুলস্থুল টিভি, তোলপাড়, বাংলাভিশনে ফরেন ভিলেজ, হিট, বৈশাখী টিভিতে আমাদের হাটখোলা, চাপাবাজ, বউ-শাশুড়ি, মাছরাঙা টিভিতে একশ-তে ১০০, ফুল এইচ ডি, চাঁন বিরিয়ানি এবং নাগরিক টিভিতে চাঁদের হাট নাটকগুলো উল্লেখযোগ্য। এসব নাটকের বেশিরভাগই কমেডি নির্ভর। কোনো কোনো দর্শক সস্তা কমেডি বলেও মন্তব্য করেছেন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

একই গন্ডিতে ধারাবাহিক নাটক

প্রকাশিত : ১২:০০:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

জোয়ার যায়, ভাটা আসে। সকালের সোনা রোদ এক সময় রূপান্তিত হয়ে রাত নামে। সময়ের সঙ্গে রদ-বদল ঘটে অনেক কিছুর। আমাদের দেশীয় শোবিজেও অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছে বিগত কয়েক বছরে। সিনেমায় একটা সময় দেখা যেত, যখন যে জোয়ার আসত, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের সেই জোয়ারেই গা ভাসাতে। কখনো ভরপুর অ্যাকশন, কখনো অশ্লীলতা, কখনো আবার ফোক ছবির জোয়ার। কিন্তু বিশ্বায়নের যুগে এবং নতুন ও মেধাবী নির্মাতারা চলচ্চিত্রে এগিয়ে আসায় অনেকটা পরিবর্তন এসেছে সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে। ভালো কিংবা মন্দ- যাই হোক না কেন, গানের ক্ষেত্রেও বেশ একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মঞ্চেও শোভা পাচ্ছে বেশকিছু নতুন নাটক।
কিন্তু সবকিছুর রদবদল ঘটলেও পালাবদল ঘটেনি টিভি নাটকের প্রেক্ষপটের। বরং ধারাবাহিক আর একক নাটক যেমন ভাগ হয়ে গেছে, তেমনি অভিনয় শিল্পীরাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। একক নাটকের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই দেখা যায় হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পীর উপস্থিতি। যারা চলমান সময়ের সবচেয়ে শীর্ষ চাহিদাসম্পন্ন শিল্পী। রোমান্টিক একক নাটকের ক্ষেত্রেই এসব পাত্র-পাত্রীকে দেখা যায়। এসব নাটকে অনেকটা ভিন্নতার ছোঁয়াও লক্ষ্য করা যায়। রোমান্টিক নাটকের বেশিরভাগই আধুনিক ও শহরকেন্দ্রিক।
অন্যদিকে ধারাবাহিক নাটকের ক্ষেত্রে চিত্রটা পুরোটাই উল্টা। একটুও যেন বদলায়নি ধারাবাহিক নাটকের ধারা। আগের মতো সেই কমেডির নামে ভাড়ামি, বিকৃত ভাষার ব্যবহার আর গ্রামীণ প্রেক্ষাপট থেকে মুক্ত হতে পারছে না এসব ধারাবাহিক নাটক। অভিনয়শিল্পীর ক্ষেত্রেও দেখা যায় ঘুরেফিরে সেই একই মুখ। যা আমাদের সমৃদ্ধ নাটক ইন্ডাস্ট্রির জন্য একেবারেই হতাশাজনক। শৈল্পিক নাটক যেমন নগণ্য, তেমনি সুপারহিট নাটকের ও তেমন এখনো দেখা মিলছে না। টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন অসংখ্য ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো নাটকই জনপ্রিয়তা কিংবা আহামরি আলোচনায় আসতে পারছে না। একটা সময় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মেজবাউর রহমান রেদোয়ান রনি, ইফতেখার আহমেদ ফাহমিরা যাও দুয়েকটা কমেডি নাটক বানাতেন, ইদানীং তারা চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্যস্ত হওয়ায় সেসব নাটকও এখন অনুপস্থিত। কিছু কিছু নির্মাতার নাটক নির্মাণের হিড়িক দেখলে মনে হয় নাটকের ইন্ডাস্ট্রি বুঝি ভালোই আছে। অন্যদিকে যখন প্রতিষ্ঠিত গুণী নির্মাতাদের নানা সমস্যা নিয়ে আক্ষেপ শোনা যায়, তখন বোঝা যায় নাটক ইন্ডাস্ট্রি দিন দিন ম্লান হচ্ছে। একটা সময় নাটকে দর্শকদের হাসানোর জন্য বিশেষ কিছু কমেডি দৃশ্য রাখা হতো। দর্শক সেটা লুফেও নিতেন। কিন্তু দর্শকের রুচি দীর্ঘদিন এক রকম থাকে না- আমাদের নির্মাতারা হয়তো সেটা টের পাচ্ছেন না, নয়তো চ্যানেল কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া নিয়মের বাইরে যেতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে নির্মাতাদের মেধা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব ধারাবাহিকের লিখিত কোনো চিত্রনাট্য থাকে না। তারপরও কিছু পেশাদার শিল্পী পেটের দায়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিয়মিত কাজ করছেন এসব নামসর্বস্ব নাটকে। বর্তমানে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যেসব ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে, তাদের প্রায় সবগুলো নাটকই তথাকথিত কমেডি নাটক। যা দেখে মনে হয়, দর্শকের ভিন্ন কিছু উপহার দেওয়ার জন্য নয়, কেবলমাত্র চ্যানেলগুলোর খোরাক যোগানের জন্যই এসব নাটক নির্মিত হচ্ছে এমনকি অহেতুক সামনের দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে। এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে টানা কয়েক বছর ধরে।
বর্তমানে যেসব ধারাবাহিক নাটক প্রচারিত হচ্ছে, তার মধ্যে চ্যানেল আইতে ভালোবাসার যৌথ খামার, আম্মা, রুপালি জোৎস্নায়, প্রিয় দিন প্রিয় রাত, এটিএন বাংলায় জলে ভেজা রঙ, স্মৃতির আল্পনা আঁকি, পরিবার, এনটিভিতে পরের মেয়ে, আরটিভিতে ভিলেজ হট্টগোল, চিটিং মাস্টার, হুলস্থুল টিভি, তোলপাড়, বাংলাভিশনে ফরেন ভিলেজ, হিট, বৈশাখী টিভিতে আমাদের হাটখোলা, চাপাবাজ, বউ-শাশুড়ি, মাছরাঙা টিভিতে একশ-তে ১০০, ফুল এইচ ডি, চাঁন বিরিয়ানি এবং নাগরিক টিভিতে চাঁদের হাট নাটকগুলো উল্লেখযোগ্য। এসব নাটকের বেশিরভাগই কমেডি নির্ভর। কোনো কোনো দর্শক সস্তা কমেডি বলেও মন্তব্য করেছেন।