০৬:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

রাখে আল্লাহ মারে কে

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। শুধু ঢাকাতেই শেখ হাসিনার ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয় সাতবার। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যায়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে আরও অন্তত পাঁচ বার। শেখ হাসিনার ওপর এসব হামলার ঘটনায় অন্তত ৬৬ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার হিসাব আছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এইচ এম এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুটি, ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে চারটি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে চারটি, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে একটি ও আওয়ামী লীগের আমলে চারটি হত্যাচেষ্টার কথা জানা যায়। নিচে তুলে ধরা হল শেখ হাসিনার উপর চালানো সেসব বর্বোরোচিত ঘটনার সংক্ষেপ বর্ণনা

১. চট্টগ্রামে গুলিবর্ষণ
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। সেদিন চট্টগ্রামে ৮ দলীয় জোটের মিছিলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পুলিশ ও বিডিআর’র গুলিতে ৭ জন নিহত ও ৩০০ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ৫৪ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আটদলীয় জোট দাবি করে সেদিনের গুলিতে ১১ জন নিহত হয়েছে। শেখ হাসিনা বেলা ২টায় পতেঙ্গা বিমান বন্দর থেকে মিছিল লিয়ে লালদীঘি ময়দানের কাছে এসে পৌঁছলে মেট্রোপলিটন পুলিশের দাঙ্গা দমন বাহিনী ও বিডিআর টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ ও গুলি ছুড়তে থাকে। ঘটনাস্থলেই একজন মারা যায়।

২. ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলা
১৯৮৯-এর ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ফ্রিডম পার্টির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বরের বাসভবনে হামলা চালায়। শেখ হাসিনা তখন বাসভবনে ছিলেন। হামলাকারীরা ৭ থেকে ৮ মিনিট ধরে বঙ্গবন্ধু ভবন লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একইসঙ্গে গ্রেনেড নিক্ষেপ করলেও গ্রেনেডটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি।

৩. ১৯৯১-এ ভোটের মাঠে গুলি
১৯৯১-সালের ১১ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটায় ঢাকার গ্রীন রোডের কাছে ধানমন্ডি স্কুলে উপনির্বাচনের ভোট দেন শেখ হাসিনা। তারপর তিনি গ্রীন রোডে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যান। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই একদল সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। একইসঙ্গে বোমাও বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু সে যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

৪. ১৯৯৪ সালে বোমা হামলা
যশোর, দর্শনা, কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী, নাটোর ও সান্তাহারে জনসভা করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ৯৪ এর ২৩ সেপ্টেম্বর যখন তিনি ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশ মুখে পৌঁছান তখন তাকে বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। তাকে প্রাণে মেরে ফেলার অপচেষ্টা এবারও ব্যর্থ হয়।

৫. রাসেল স্কোয়ারের কাছে গুলি বর্ষণ
১৯৯৫-এর ৭ ডিসেম্বর। এই দিনে শেখ রাসেল স্কোয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু অতর্কিতে তার উপর হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া হয়। সে যাত্রায় কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ফেরেন সভানেত্রী।

৬. বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হামলা
১৯৯৬-এর ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষ করেন। আকস্মাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ শুরু করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।

৭. হত্যা পরিকল্পনা ফাঁস
শেখ হাসিনা ও তার ছেলেমেয়েসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণার ই-মেইলটির প্রেরক ইন্টার এশিয়া টিভি মালিক শোয়েব চৌধুরী। শেখ হাসিনাকে হত্যা, গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং বিদ্বেষ সৃষ্টিই মূলত লক্ষ্য ছিল। এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলে ই-মেইল প্রেরণের অভিযোগে শোয়েব চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

৮. ৭৬ কেজি ওজনের বোমা
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা চালায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি)। ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলের কাছে যেখানে হেলিকপ্টার নামবে তার কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখেছিল। এই বোমা গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে।

৯. রূপসায় বোমা ফাঁদ
২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু সেখানেও বোমা ফাঁদ পেতে রাখে জঙ্গি সংগঠন হুজি। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পেতে রাখা সেই ফাঁদও ধরা পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।

১০. সিলেটে হুজির বোমা বিস্ফোরণ
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট গিয়েছিলেন। সেখানে আলীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে হুজির পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। সেদিন রাত ৮টার দিকে জনসভাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।

১১. নওগাঁয় হত্যার চেষ্টা
নওগাঁতেও শেখ হাসিনার ওপর চালানো হয় হামলা। ২০০২-সালের ৪ মার্চ বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালায়।

১২. সাতক্ষীরায় গাড়িবহরে হামলা
২০০২ সালের আগস্টে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ধর্ষিতার ঘটনা ঘটে। তাকে দেখতে ২৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে এল হামলার শিকার হন তিনি। রাস্তার ওপর জেলা বিএনপির সভাপতি ও তৎকালীন সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা একটি যাত্রীবাহী বাস রেখে সড়কে বেরিকেড দিয়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। ওই হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে একডজন দলীয় নেতাকর্মী আহত হন।

১৩. বরিশালে হামলা
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে জামাত-বিএনপির ঘাতক চক্র।

১৪. ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ স্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েক নেতা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও আকস্মিক এই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ আরও ২৩ জন নেতাকর্মী নিহত হন। এ ছাড়াও এই হামলায় আরও ৪০০ জন আহত হন।

১৫. জেলের খাবারে পয়জন
শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিনা ওয়ারেন্টে সেনাবাহিনী সমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আটক করেছিল। আটকের পর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় শেখ হাসিনার খাবারে ক্রমাগত পয়জন দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। স্লো পয়জনিং-এর কারণে সেখানে আটক থাকাকালে শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পান।

১৬. সুইসাইড স্কোয়াডের পরিকল্পনা
২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য। তারা চুক্তি সম্পন্ন করে এবং সেই সুইসাইড স্কোয়াডকে আগাম পেমেন্টও প্রদান করে। কিন্তু দুষ্টু পরিকল্পনা বেশিরভাগ সময় লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনা। পন্ড হয় তাদেও পরিকল্পনা। আততায়ীদের সেই টিম গাড়ি করে কলকাতা বিমান বন্দরে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।

১৭. হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস
২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনায় আরও ছিল সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো। কিন্তু পওে সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। উইকিলিকস প্রকাশিত সৌদি আরবের এক গোপন বার্তায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি লে. ক. শরিফুল হক ডালিম এ অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিন দেশে বসে এ অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনা চলছিল।

১৮. নারী জঙ্গি দ্বারা মানববোমা
২০১৪ সালের শেষ দিকে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গি দ্বারা মানববোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা এই ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার জঙ্গি শাহানুর আলম ওরফে ডাক্তার। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার গোয়েন্দাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির এই নেতা আদ্যোপান্ত স্বীকার করেন।

১৯. কারওয়ান বাজার এলাকায় বোমা
২০১৫-সালের ৭ মার্চ শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাচ্ছিলেন। এমন সময়ে কারওয়ান বাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশে (জেএমবি)। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে কারওয়ান বাজার এলাকায় পরপর কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ হয়। জেএমবির জঙ্গিরাই প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে এই বোমা হামলা চালায়। সূত্র : মেহেদী হাসান বাবু, শেখ হাসিনা ও সাফল্যের দশ বছর।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে হিজবুল্লাহর ড্রোন, আহত ১৮

রাখে আল্লাহ মারে কে

প্রকাশিত : ১২:০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ মে ২০২১

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত ১৯ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। শুধু ঢাকাতেই শেখ হাসিনার ওপর সশস্ত্র হামলা চালানো হয় সাতবার। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যায়ে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছে আরও অন্তত পাঁচ বার। শেখ হাসিনার ওপর এসব হামলার ঘটনায় অন্তত ৬৬ জন দলীয় নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার হিসাব আছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। এইচ এম এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুটি, ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে চারটি, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারটি, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকার আমলে চারটি, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে একটি ও আওয়ামী লীগের আমলে চারটি হত্যাচেষ্টার কথা জানা যায়। নিচে তুলে ধরা হল শেখ হাসিনার উপর চালানো সেসব বর্বোরোচিত ঘটনার সংক্ষেপ বর্ণনা

১. চট্টগ্রামে গুলিবর্ষণ
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। সেদিন চট্টগ্রামে ৮ দলীয় জোটের মিছিলে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পুলিশ ও বিডিআর’র গুলিতে ৭ জন নিহত ও ৩০০ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ৫৪ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আটদলীয় জোট দাবি করে সেদিনের গুলিতে ১১ জন নিহত হয়েছে। শেখ হাসিনা বেলা ২টায় পতেঙ্গা বিমান বন্দর থেকে মিছিল লিয়ে লালদীঘি ময়দানের কাছে এসে পৌঁছলে মেট্রোপলিটন পুলিশের দাঙ্গা দমন বাহিনী ও বিডিআর টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ ও গুলি ছুড়তে থাকে। ঘটনাস্থলেই একজন মারা যায়।

২. ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হামলা
১৯৮৯-এর ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ফ্রিডম পার্টির একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডিস্থ ৩২ নম্বরের বাসভবনে হামলা চালায়। শেখ হাসিনা তখন বাসভবনে ছিলেন। হামলাকারীরা ৭ থেকে ৮ মিনিট ধরে বঙ্গবন্ধু ভবন লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একইসঙ্গে গ্রেনেড নিক্ষেপ করলেও গ্রেনেডটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেনি।

৩. ১৯৯১-এ ভোটের মাঠে গুলি
১৯৯১-সালের ১১ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটায় ঢাকার গ্রীন রোডের কাছে ধানমন্ডি স্কুলে উপনির্বাচনের ভোট দেন শেখ হাসিনা। তারপর তিনি গ্রীন রোডে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে ভোটের পরিস্থিতি দেখতে যান। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই একদল সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। একইসঙ্গে বোমাও বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু সে যাত্রায় প্রাণে রক্ষা পান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

৪. ১৯৯৪ সালে বোমা হামলা
যশোর, দর্শনা, কুষ্টিয়া ঈশ্বরদী, নাটোর ও সান্তাহারে জনসভা করেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ৯৪ এর ২৩ সেপ্টেম্বর যখন তিনি ঈশ্বরদী ও নাটোর রেল স্টেশনে প্রবেশ মুখে পৌঁছান তখন তাকে বহনকারী রেলগাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়। তাকে প্রাণে মেরে ফেলার অপচেষ্টা এবারও ব্যর্থ হয়।

৫. রাসেল স্কোয়ারের কাছে গুলি বর্ষণ
১৯৯৫-এর ৭ ডিসেম্বর। এই দিনে শেখ রাসেল স্কোয়ারের কাছে সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু অতর্কিতে তার উপর হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া হয়। সে যাত্রায় কোনোমতে প্রাণ নিয়ে ফেরেন সভানেত্রী।

৬. বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হামলা
১৯৯৬-এর ৭ মার্চ সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষ করেন। আকস্মাৎ একটি মাইক্রোবাস থেকে সভামঞ্চ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ শুরু করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।

৭. হত্যা পরিকল্পনা ফাঁস
শেখ হাসিনা ও তার ছেলেমেয়েসহ ৩১ জনকে হত্যার জন্য পুরস্কার ঘোষণার ই-মেইলটির প্রেরক ইন্টার এশিয়া টিভি মালিক শোয়েব চৌধুরী। শেখ হাসিনাকে হত্যা, গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত এবং বিদ্বেষ সৃষ্টিই মূলত লক্ষ্য ছিল। এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলে ই-মেইল প্রেরণের অভিযোগে শোয়েব চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

৮. ৭৬ কেজি ওজনের বোমা
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা চালায় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি)। ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলের কাছে যেখানে হেলিকপ্টার নামবে তার কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখেছিল। এই বোমা গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে।

৯. রূপসায় বোমা ফাঁদ
২০০১ সালের ২৯ মে খুলনার রূপসা সেতুর কাজ উদ্বোধন করতে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু সেখানেও বোমা ফাঁদ পেতে রাখে জঙ্গি সংগঠন হুজি। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পেতে রাখা সেই ফাঁদও ধরা পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।

১০. সিলেটে হুজির বোমা বিস্ফোরণ
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেট গিয়েছিলেন। সেখানে আলীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন স্থানে হুজির পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। সেদিন রাত ৮টার দিকে জনসভাস্থল থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে বোমা বিস্ফোরিত হলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।

১১. নওগাঁয় হত্যার চেষ্টা
নওগাঁতেও শেখ হাসিনার ওপর চালানো হয় হামলা। ২০০২-সালের ৪ মার্চ বিএমসি সরকারি মহিলা কলেজের সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে দুর্বৃত্তরা এই হামলা চালায়।

১২. সাতক্ষীরায় গাড়িবহরে হামলা
২০০২ সালের আগস্টে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ধর্ষিতার ঘটনা ঘটে। তাকে দেখতে ২৯ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন শেখ হাসিনা। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে এল হামলার শিকার হন তিনি। রাস্তার ওপর জেলা বিএনপির সভাপতি ও তৎকালীন সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা একটি যাত্রীবাহী বাস রেখে সড়কে বেরিকেড দিয়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। ওই হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে একডজন দলীয় নেতাকর্মী আহত হন।

১৩. বরিশালে হামলা
২০০৪ সালের ২ এপ্রিল বরিশালের গৌরনদীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণ করে জামাত-বিএনপির ঘাতক চক্র।

১৪. ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ স্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েক নেতা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও আকস্মিক এই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ আরও ২৩ জন নেতাকর্মী নিহত হন। এ ছাড়াও এই হামলায় আরও ৪০০ জন আহত হন।

১৫. জেলের খাবারে পয়জন
শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বিনা ওয়ারেন্টে সেনাবাহিনী সমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আটক করেছিল। আটকের পর জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব-জেলে তাকে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় শেখ হাসিনার খাবারে ক্রমাগত পয়জন দিয়ে তাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। স্লো পয়জনিং-এর কারণে সেখানে আটক থাকাকালে শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে তিনি আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পান।

১৬. সুইসাইড স্কোয়াডের পরিকল্পনা
২০১১ সালে শ্রীলংকার একটি সন্ত্রাসবাদী গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের শত্রু রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য। তারা চুক্তি সম্পন্ন করে এবং সেই সুইসাইড স্কোয়াডকে আগাম পেমেন্টও প্রদান করে। কিন্তু দুষ্টু পরিকল্পনা বেশিরভাগ সময় লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনা। পন্ড হয় তাদেও পরিকল্পনা। আততায়ীদের সেই টিম গাড়ি করে কলকাতা বিমান বন্দরে যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়।

১৭. হত্যার পরিকল্পনা ফাঁস
২০১১ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনায় আরও ছিল সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো। কিন্তু পওে সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। উইকিলিকস প্রকাশিত সৌদি আরবের এক গোপন বার্তায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি লে. ক. শরিফুল হক ডালিম এ অভ্যুত্থান পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তিন দেশে বসে এ অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনা চলছিল।

১৮. নারী জঙ্গি দ্বারা মানববোমা
২০১৪ সালের শেষ দিকে প্রশিক্ষিত নারী জঙ্গি দ্বারা মানববোমায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। পরবর্তীতে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে করা এই ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুত্থানের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেফতার জঙ্গি শাহানুর আলম ওরফে ডাক্তার। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার গোয়েন্দাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির এই নেতা আদ্যোপান্ত স্বীকার করেন।

১৯. কারওয়ান বাজার এলাকায় বোমা
২০১৫-সালের ৭ মার্চ শেখ হাসিনা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাচ্ছিলেন। এমন সময়ে কারওয়ান বাজারে তার গাড়িবহরে বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা চালায় জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশে (জেএমবি)। শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে কারওয়ান বাজার এলাকায় পরপর কয়েকটি বোমার বিস্ফোরণ হয়। জেএমবির জঙ্গিরাই প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহরে এই বোমা হামলা চালায়। সূত্র : মেহেদী হাসান বাবু, শেখ হাসিনা ও সাফল্যের দশ বছর।