০২:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি এবং সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের কারণে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বর্তমানে তেমন সাড়া-শব্দ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহায়তা অনুদানের পরিমাণও কমছে। যা স্বভাবতই বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর। তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরি ও জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গমন নিত্যকার ঘটনা। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা থাকছে সেসব দেশে। বিভিন্ন দেশে আইন ভঙ্গ ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িয়ে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিপন্ন হয়ে পড়ার পেছনে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের অপকর্ম অনেকাংশে দায়ী। নিজ বাসভূমি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শুরু থেকেই বাংলাদেশের জন্য মূর্তিমান সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো- এ সংকট তিন বছর পেরিয়ে চতুর্থ বছরে পদার্পণ করলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনোরকম অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না; বরং আশ্রয় শিবিরগুলোকে তারা বিভিন্ন অপরাধের আখড়ায় পরিণত করেছে। জানা গেছে, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩৪টি আশ্রয় শিবির নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তত ৩২টি সন্ত্রাসী দল ও উপদল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গত এক বছরে নিহত হয়েছে ৪৬ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। ২০১৭ সালে মামলা হয়েছে ৭৬টি, যেখানে আসামির সংখ্যা ছিল কয়েকশ। ২০১৮ সালে ২০৮টি মামলায় আসামি করা হয় ৪১৪ জনকে। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা ছিল ২৬৩ আর আসামি ৬৪৯ জন। ২০২০ সালে ২০০-এরও বেশি মামলা হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হলে সংখ্যালঘু এ মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে কয়েক দশকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থ-সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বাসস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা যেহেতু অবৈধভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে সেসব দেশে গেছে সেহেতু তাদের দায় অস্বীকার করাও বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের প্যারালাল হিসেবে অফিস গড়ে ওঠার যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে তা বিস্ময়কর বললে কম বলা হবে। পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস- লাগোয়া জাতিসংঘ পার্কের পাশের ভবনে একটি বিল্ডিংয়ে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’। এ অফিসে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা দিলেই কয়েক দিনের ব্যবধানে রোহিঙ্গারা পেয়ে যায় পাসপোর্ট। এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি পাসপোর্ট দালালি করতে গিয়ে একাধিকবার আটক হয়েছেন। তিন সহযোগীর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরিতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করেন। প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করা হয়। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে জাতীয়তা, জন্মনিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবই সরবরাহ করে দালালচক্রের সদস্যরা। পাসপোর্ট অফিসের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য, তারা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। পাসপোর্ট অফিসের কাছে জালিয়াত চক্রের প্যারালাল পাসপোর্ট অফিস প্রমাণ করে তারা ঠিক কথা বলছেন না। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে এমনটিই প্রত্যাশিত। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি এবং সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের কারণে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বর্তমানে তেমন সাড়া-শব্দ নেই বললেই চলে। তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরি ও জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।

ট্যাগ :

৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে 

মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা

প্রকাশিত : ১২:০০:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি এবং সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের কারণে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বর্তমানে তেমন সাড়া-শব্দ নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য-সহায়তা অনুদানের পরিমাণও কমছে। যা স্বভাবতই বাড়তি চাপ সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর। তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরি ও জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গাদের সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গমন নিত্যকার ঘটনা। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা থাকছে সেসব দেশে। বিভিন্ন দেশে আইন ভঙ্গ ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িয়ে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট করছে। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বিপন্ন হয়ে পড়ার পেছনে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের অপকর্ম অনেকাংশে দায়ী। নিজ বাসভূমি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শুরু থেকেই বাংলাদেশের জন্য মূর্তিমান সমস্যা হিসেবে বিরাজ করছে। দুশ্চিন্তার বিষয় হলো- এ সংকট তিন বছর পেরিয়ে চতুর্থ বছরে পদার্পণ করলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনোরকম অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না; বরং আশ্রয় শিবিরগুলোকে তারা বিভিন্ন অপরাধের আখড়ায় পরিণত করেছে। জানা গেছে, প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ৩৪টি আশ্রয় শিবির নিয়ন্ত্রণ করছে অন্তত ৩২টি সন্ত্রাসী দল ও উপদল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গত এক বছরে নিহত হয়েছে ৪৬ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। ২০১৭ সালে মামলা হয়েছে ৭৬টি, যেখানে আসামির সংখ্যা ছিল কয়েকশ। ২০১৮ সালে ২০৮টি মামলায় আসামি করা হয় ৪১৪ জনকে। ২০১৯ সালে মামলার সংখ্যা ছিল ২৬৩ আর আসামি ৬৪৯ জন। ২০২০ সালে ২০০-এরও বেশি মামলা হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান শুরু হলে সংখ্যালঘু এ মুসলিম জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে কয়েক দশকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থ-সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার বাসস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরব বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা যেহেতু অবৈধভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে সেসব দেশে গেছে সেহেতু তাদের দায় অস্বীকার করাও বাংলাদেশের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের প্যারালাল হিসেবে অফিস গড়ে ওঠার যে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে তা বিস্ময়কর বললে কম বলা হবে। পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস- লাগোয়া জাতিসংঘ পার্কের পাশের ভবনে একটি বিল্ডিংয়ে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’। এ অফিসে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা দিলেই কয়েক দিনের ব্যবধানে রোহিঙ্গারা পেয়ে যায় পাসপোর্ট। এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি পাসপোর্ট দালালি করতে গিয়ে একাধিকবার আটক হয়েছেন। তিন সহযোগীর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরিতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করেন। প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করা হয়। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট আবেদনের সঙ্গে জাতীয়তা, জন্মনিবন্ধনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবই সরবরাহ করে দালালচক্রের সদস্যরা। পাসপোর্ট অফিসের কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্য, তারা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। পাসপোর্ট অফিসের কাছে জালিয়াত চক্রের প্যারালাল পাসপোর্ট অফিস প্রমাণ করে তারা ঠিক কথা বলছেন না। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে এমনটিই প্রত্যাশিত। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি এবং সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের কারণে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বর্তমানে তেমন সাড়া-শব্দ নেই বললেই চলে। তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরি ও জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে।