০৬:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

কৃষিতে বাংলাদেশ

  • কামরুল হাসান
  • প্রকাশিত : ১২:০০:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 13

দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার নিমিত্তে দুনিয়াজোড়া সবুজ বিপ্লবের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সম্পৃক্ত করছিলেন দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনা। এর জন্য দরকার পড়ে উচ্চফলনশীল জাতের ফসল, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সেচব্যবস্থার। এসব উপাদানকে সহজলভ্য করার জন্য তিনি সরকারি আদলে গড়ে তুললেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন-৭৩-এর ১০নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। ধান ছাড়া অন্যান্য ফসলের গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে। পুনর্গঠন করা হয় হর্টিকালচার বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, সিড সার্টিফিকেশন এজেন্সি, রাবার উন্নয়ন কার্যক্রম, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ গবেষণা সমন্বয়ের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল। বাংলার সোনালি আঁশের সম্ভাবনার দ্বার বিস্তৃত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় পাট মন্ত্রণালয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভূস্বামীদের হাত থেকে বাংলার ভূমিহীন কৃষকদের রক্ষার্থে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে পরিবারপ্রতি জমির মালিকানা ৩৭৫ বিঘা থেকে কমিয়ে ১০০ বিঘায় নামিয়ে আনেন এবং ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-১৩৫ এ বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার ও কৃষক দরদি মনোভাবের আরো কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। এই আদেশে বলা হয়েছে, নদী কিংবা সাগরগর্ভে জেগে ওঠা চরের জমির মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে নিয়ে দরিদ্র্যতর কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা। মহাজন ও ভূমিদস্যুদের হাত থেকে গরিব কৃষকদের রক্ষাই উদ্দেশ্য ছিল তার। সে কারণে হাটবাজারে ইজারা প্রথার বিলোপ করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কৃষিজ পণ্যের খুদে বিক্রেতাদের শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
তার আমলে দেশে প্রবর্তন করা হয় কৃষিঋণ ব্যবস্থার এবং ৭৩-এর ৭নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় কৃষি ব্যাংক; গঠন করা হয় কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার তহবিল। ১৯৬৮-৬৯ সালে কৃষিকাজের জন্য সারাদেশে ১১ হাজার শক্তিচালিত পাম্প ছিল। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ’৭৪-৭৫ সালে পাম্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬ হাজারে। ফলে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে ৩৬ লাখ একরে উন্নীত হয়।
বিজ্ঞানভিত্তিক চাষের গুরুত্ব তিনি উপলব্ধি করেছিলেন তাই তো কৃষিবিদদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আলোকিত দিন। কারণ এই দিনে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে। তৎকালীন বাকসুর সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী, বরেণ্য কৃষিবিদ ড. আবদুর রাজ্জাক, কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির সম্মান দেওয়ার বিষয় বঙ্গবন্ধুর কাছে উত্থাপন করার পরিপ্রেক্ষিতে, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির সম্মান দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি শিক্ষায় উৎসাহিত করেছিলেন। তার প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন, ‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। সবুজ বিপ্লবের কথা আমরা বলছি। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের যে অবস্থা, সত্য কথা বলতে কী বাংলার মাটি, এ উর্বর জমি বারবার দেশ-বিদেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ও শোষকদের টেনে এনেছে এই বাংলার মাটিতে। এই উর্বর এত সোনার দেশ যদি বাংলাদেশ না হতো, তবে এতকাল আমাদের থাকতে হতো না। যেখানে মধু থাকে, সেখানে মক্ষিকা উড়ে আসে। সোনার বাংলা নাম আজকের সোনার বাংলা নয়। বহু দিনের সোনার বাংলা। বাংলার মাটির মতো মাটি দুনিয়ায় দেখা যায় না। বাংলার মানুষের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলার সম্পদের মতো সম্পদ দুনিয়ায় পাওয়া যায় না।’
আদতে বাংলার দুঃখী মানুষের কথা ভেবে, তাদের মুখে খাদ্যের জোগান নিশ্চিতকরণে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ পরিকল্পনায় বাংলাদেশে আধুনিক কৃষির ভিত্তি প্রোথিত ছিল। প্রতিনিয়ত কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, ক্রমেই বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীরা। রাত-দিন গবেষণার মাধ্যমে কৃষিবিজ্ঞানীরা আবহাওয়া উপযোগী উচ্চফলনশীল ফসলের জাত উপহার দিচ্ছেন, মাঠপর্যায়ে কৃষিবিদদের মাধ্যমে যা কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, কৃষিবিদদের শ্রমঘাম, ত্যাগে খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অভূতপূর্ব উন্নয়নের স্রোতধারা আন্তর্জাতিকভাবে স্থান করে নিয়েছে। ধান উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আলু উৎপাদনে ৭ম, আম উৎপাদনে ৭ম, পাট রপ্তানিতে ১ম, কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে ৩য়, ছাগল উৎপাদনে ৪র্থ, ফল উৎপাদনে ১০ম, বিশ্বে মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তৃতীয় বিশ্বের একটি ছোট্ট দেশের এসব সাফল্য দেখে এ পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে কৃষিবিদদের গুরুত্বের রূপরেখা আরও প্রস্ফুটিত হয়েছে সাম্প্রতিক মহামারীর সময়ে। বিশ্ব মোড়লরা যখন খাদ্য ঘাটতির চিন্তার ঘেরাটোপে আচ্ছন্ন ছিল তখনো বাংলাদেশের কৃষি আপন মহিমায় অবরুদ্ধ অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছিল। বিশ্বের অনেক দেশের কাছে বাংলাদেশের কৃষি আজ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কৃষির এই আধুনিকায়ন এসেছে কৃষিবিদদের মাধ্যমে। কৃষি আজ শিল্পে পরিণত হচ্ছে, বিকাশমান বাণিজ্যিক কৃষির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শত শত তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাকে পথ দেখাচ্ছে কৃষিবিদরা। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া কৃষিবিদ ক্লাস ওয়ান মর্যাদা আজ সার্থক হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদ দিবসের মাধ্যমে সারাদেশের কৃষিবিদ সমাজ প্রাণের স্পন্দনে আনন্দে উদ্বেলিত হয়। সত্যিকার অর্থে কৃষিবিদরা খুব কাছ থেকে বুঝতে পারে মাটির টান, বুঝতে পারে কৃষকের অনুভব। মাটির কাব্যের প্রতিটি পরতে পরতে কৃষকের প্রাণের সঙ্গে প্রাণ মিলিয়ে আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কৃষিবিদরা।
লেখক : কামরুল হাসান কামু কৃষি সম্প্রসারণ কমকর্তা
ফুলপুর, ময়মনসিংহ

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

কৃষিতে বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ১২:০০:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১

দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার নিমিত্তে দুনিয়াজোড়া সবুজ বিপ্লবের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সম্পৃক্ত করছিলেন দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনা। এর জন্য দরকার পড়ে উচ্চফলনশীল জাতের ফসল, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সেচব্যবস্থার। এসব উপাদানকে সহজলভ্য করার জন্য তিনি সরকারি আদলে গড়ে তুললেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন-৭৩-এর ১০নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। ধান ছাড়া অন্যান্য ফসলের গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে। পুনর্গঠন করা হয় হর্টিকালচার বোর্ড, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, সিড সার্টিফিকেশন এজেন্সি, রাবার উন্নয়ন কার্যক্রম, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ গবেষণা সমন্বয়ের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল। বাংলার সোনালি আঁশের সম্ভাবনার দ্বার বিস্তৃত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় পাট মন্ত্রণালয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভূস্বামীদের হাত থেকে বাংলার ভূমিহীন কৃষকদের রক্ষার্থে ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে পরিবারপ্রতি জমির মালিকানা ৩৭৫ বিঘা থেকে কমিয়ে ১০০ বিঘায় নামিয়ে আনেন এবং ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-১৩৫ এ বঙ্গবন্ধুর কৃষি সংস্কার ও কৃষক দরদি মনোভাবের আরো কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। এই আদেশে বলা হয়েছে, নদী কিংবা সাগরগর্ভে জেগে ওঠা চরের জমির মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে নিয়ে দরিদ্র্যতর কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করা। মহাজন ও ভূমিদস্যুদের হাত থেকে গরিব কৃষকদের রক্ষাই উদ্দেশ্য ছিল তার। সে কারণে হাটবাজারে ইজারা প্রথার বিলোপ করেন। এ ক্ষেত্রে তিনি কৃষিজ পণ্যের খুদে বিক্রেতাদের শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
তার আমলে দেশে প্রবর্তন করা হয় কৃষিঋণ ব্যবস্থার এবং ৭৩-এর ৭নং অ্যাক্টের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় কৃষি ব্যাংক; গঠন করা হয় কৃষিতে জাতীয় পুরস্কার তহবিল। ১৯৬৮-৬৯ সালে কৃষিকাজের জন্য সারাদেশে ১১ হাজার শক্তিচালিত পাম্প ছিল। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ’৭৪-৭৫ সালে পাম্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬ হাজারে। ফলে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে ৩৬ লাখ একরে উন্নীত হয়।
বিজ্ঞানভিত্তিক চাষের গুরুত্ব তিনি উপলব্ধি করেছিলেন তাই তো কৃষিবিদদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আলোকিত দিন। কারণ এই দিনে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে। তৎকালীন বাকসুর সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী, বরেণ্য কৃষিবিদ ড. আবদুর রাজ্জাক, কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির সম্মান দেওয়ার বিষয় বঙ্গবন্ধুর কাছে উত্থাপন করার পরিপ্রেক্ষিতে, বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির সম্মান দিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি শিক্ষায় উৎসাহিত করেছিলেন। তার প্রদত্ত ভাষণে বলেছিলেন, ‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। সবুজ বিপ্লবের কথা আমরা বলছি। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের যে অবস্থা, সত্য কথা বলতে কী বাংলার মাটি, এ উর্বর জমি বারবার দেশ-বিদেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ও শোষকদের টেনে এনেছে এই বাংলার মাটিতে। এই উর্বর এত সোনার দেশ যদি বাংলাদেশ না হতো, তবে এতকাল আমাদের থাকতে হতো না। যেখানে মধু থাকে, সেখানে মক্ষিকা উড়ে আসে। সোনার বাংলা নাম আজকের সোনার বাংলা নয়। বহু দিনের সোনার বাংলা। বাংলার মাটির মতো মাটি দুনিয়ায় দেখা যায় না। বাংলার মানুষের মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। বাংলার সম্পদের মতো সম্পদ দুনিয়ায় পাওয়া যায় না।’
আদতে বাংলার দুঃখী মানুষের কথা ভেবে, তাদের মুখে খাদ্যের জোগান নিশ্চিতকরণে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুদীর্ঘ পরিকল্পনায় বাংলাদেশে আধুনিক কৃষির ভিত্তি প্রোথিত ছিল। প্রতিনিয়ত কৃষিজমির পরিমাণ কমছে, ক্রমেই বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে কৃষক, কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীরা। রাত-দিন গবেষণার মাধ্যমে কৃষিবিজ্ঞানীরা আবহাওয়া উপযোগী উচ্চফলনশীল ফসলের জাত উপহার দিচ্ছেন, মাঠপর্যায়ে কৃষিবিদদের মাধ্যমে যা কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, কৃষিবিদদের শ্রমঘাম, ত্যাগে খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অভূতপূর্ব উন্নয়নের স্রোতধারা আন্তর্জাতিকভাবে স্থান করে নিয়েছে। ধান উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আলু উৎপাদনে ৭ম, আম উৎপাদনে ৭ম, পাট রপ্তানিতে ১ম, কাঁঠাল উৎপাদনে ২য়, স্বাদুপানির মাছ উৎপাদনে ৩য়, ছাগল উৎপাদনে ৪র্থ, ফল উৎপাদনে ১০ম, বিশ্বে মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তৃতীয় বিশ্বের একটি ছোট্ট দেশের এসব সাফল্য দেখে এ পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে কৃষিবিদদের গুরুত্বের রূপরেখা আরও প্রস্ফুটিত হয়েছে সাম্প্রতিক মহামারীর সময়ে। বিশ্ব মোড়লরা যখন খাদ্য ঘাটতির চিন্তার ঘেরাটোপে আচ্ছন্ন ছিল তখনো বাংলাদেশের কৃষি আপন মহিমায় অবরুদ্ধ অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছিল। বিশ্বের অনেক দেশের কাছে বাংলাদেশের কৃষি আজ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। কৃষির এই আধুনিকায়ন এসেছে কৃষিবিদদের মাধ্যমে। কৃষি আজ শিল্পে পরিণত হচ্ছে, বিকাশমান বাণিজ্যিক কৃষির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শত শত তরুণ কৃষি উদ্যোক্তাকে পথ দেখাচ্ছে কৃষিবিদরা। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া কৃষিবিদ ক্লাস ওয়ান মর্যাদা আজ সার্থক হয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদ দিবসের মাধ্যমে সারাদেশের কৃষিবিদ সমাজ প্রাণের স্পন্দনে আনন্দে উদ্বেলিত হয়। সত্যিকার অর্থে কৃষিবিদরা খুব কাছ থেকে বুঝতে পারে মাটির টান, বুঝতে পারে কৃষকের অনুভব। মাটির কাব্যের প্রতিটি পরতে পরতে কৃষকের প্রাণের সঙ্গে প্রাণ মিলিয়ে আগামীর বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কৃষিবিদরা।
লেখক : কামরুল হাসান কামু কৃষি সম্প্রসারণ কমকর্তা
ফুলপুর, ময়মনসিংহ