০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের কোলে বাস করছে টিপরা সম্প্রদায়

প্রকৃতিতে পা রেখেছে বর্ষা। তাতেই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সাতছড়ি টিপরা পল্লিতে নেমে এসেছে ভয়। টানা বর্ষণে ভূমিধসের শঙ্কা থাকায় টিপড়া পল্লীতে বসবাসকারী আদিবাসীদের মনে ভর করছে আতঙ্ক। তবু থেমে নেই পাহাড়ের কোলে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস।

চুনারুঘাট উপজেলা প্রশসনের তথ্য বলছে, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ের ঢাল ও চূড়ায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ২৪টি টিপরা পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে চারটি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারীদের দাবি, নিরুপায় হয়েই এমন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তাঁরা।

শনিবার (১৯ জুন) সকালে সাতছড়ি ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে টিপরা পল্লিতে ব্যাপক ধস দেখা দিয়েছে। এতে ১০০ বছরের ঐতিহ্য সাতছড়ি টিপরা পল্লিতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ সম্প্রদায়ের মানুষ।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এখানে বহু টিপরা পরিবার আটকা পড়েন। তিন-চার বছর ধরে পাহাড় ভাঙনের কারণে অনেকেই এখান থেকে অন্যত্র গিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে। সবশেষ ২৪টি পরিবারের মধ্যে ইদানিং পাহাড়ি ঢলে চারটি বসতবাড়ি পাহাড়ি ছড়ায় বিলীন হয়ে গেছে। তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

এ বছর প্রবল বর্ষণ আসলেই ভেঙে যেতে পারে আরো তিনটি বসতবাড়ি। এ ছাড়া এখানে প্রতিবছরই পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এর পরও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এখনই জরুরি ভিত্তিতে গাইডওয়াল নির্মাণ না করলে টিপরা সম্প্রদায় তাদের বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি হারিয়ে পথে বসবে। প্রকৃতি থেকে বিলীন হয়ে যাবে একটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী।

পল্লীর বাসিন্দা চিত্ত রঞ্জন দেবর্বমন বলেন, ‘ভাঙা অংশটি গতবছর কিছু দূরে ছিল। এবারের বৃষ্টিতে ভাঙন বাড়ির উটানে চলে এসছে। যে অবস্থা দুই-এক দিনের মধ্যে আরো তিনটি বাড়ি পাহাড়ি ছড়ায় বিলীন হয়ে যাবে। আমরা বার বার নেতা, সরকারি লোকের কাছে গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য অনুরোধ করছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বছর বছর টিপরা পল্লি বিলীন হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি ছড়ায় (পানি প্রভাহের রাস্তা)।

সাথছড়ি ফরেস্টের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘টিপরা পল্লির পাশাপাশি সাথছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন পাহাড়ি টিলার অংশ ভেঙে পড়ছে। উদ্যানের ভেতর ব্রিজ ভেঙে পড়ারও উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।’

চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, ‘এখানে বসবাসকারী অধিকাংশ আদিবাসী অতি দরিদ্র। তাদের সবার পক্ষে নিজ উদ্যোগে নিরাপদে সরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী লোকদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। আবার অনেকেই নিজের বাপ-দাদার বিটে ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাচ্ছে না।’

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ বলেন, ‘টিপরা পল্লি আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নজরে এনেছি বর্ষার আগেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন এলাকায় জড়িপ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, আশা করি এর একটি স্থায়ী সমাধান হবে।’

ট্যাগ :

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের কোলে বাস করছে টিপরা সম্প্রদায়

প্রকাশিত : ১২:০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুন ২০২১

প্রকৃতিতে পা রেখেছে বর্ষা। তাতেই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট সাতছড়ি টিপরা পল্লিতে নেমে এসেছে ভয়। টানা বর্ষণে ভূমিধসের শঙ্কা থাকায় টিপড়া পল্লীতে বসবাসকারী আদিবাসীদের মনে ভর করছে আতঙ্ক। তবু থেমে নেই পাহাড়ের কোলে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস।

চুনারুঘাট উপজেলা প্রশসনের তথ্য বলছে, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ের ঢাল ও চূড়ায় ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ২৪টি টিপরা পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে চারটি পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারীদের দাবি, নিরুপায় হয়েই এমন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তাঁরা।

শনিবার (১৯ জুন) সকালে সাতছড়ি ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে টিপরা পল্লিতে ব্যাপক ধস দেখা দিয়েছে। এতে ১০০ বছরের ঐতিহ্য সাতছড়ি টিপরা পল্লিতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এ সম্প্রদায়ের মানুষ।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর এখানে বহু টিপরা পরিবার আটকা পড়েন। তিন-চার বছর ধরে পাহাড় ভাঙনের কারণে অনেকেই এখান থেকে অন্যত্র গিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে। সবশেষ ২৪টি পরিবারের মধ্যে ইদানিং পাহাড়ি ঢলে চারটি বসতবাড়ি পাহাড়ি ছড়ায় বিলীন হয়ে গেছে। তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

এ বছর প্রবল বর্ষণ আসলেই ভেঙে যেতে পারে আরো তিনটি বসতবাড়ি। এ ছাড়া এখানে প্রতিবছরই পাহাড়ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এর পরও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এখনই জরুরি ভিত্তিতে গাইডওয়াল নির্মাণ না করলে টিপরা সম্প্রদায় তাদের বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি হারিয়ে পথে বসবে। প্রকৃতি থেকে বিলীন হয়ে যাবে একটি নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী।

পল্লীর বাসিন্দা চিত্ত রঞ্জন দেবর্বমন বলেন, ‘ভাঙা অংশটি গতবছর কিছু দূরে ছিল। এবারের বৃষ্টিতে ভাঙন বাড়ির উটানে চলে এসছে। যে অবস্থা দুই-এক দিনের মধ্যে আরো তিনটি বাড়ি পাহাড়ি ছড়ায় বিলীন হয়ে যাবে। আমরা বার বার নেতা, সরকারি লোকের কাছে গাইডওয়াল নির্মাণের জন্য অনুরোধ করছি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বছর বছর টিপরা পল্লি বিলীন হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি ছড়ায় (পানি প্রভাহের রাস্তা)।

সাথছড়ি ফরেস্টের রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘টিপরা পল্লির পাশাপাশি সাথছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন পাহাড়ি টিলার অংশ ভেঙে পড়ছে। উদ্যানের ভেতর ব্রিজ ভেঙে পড়ারও উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া ওয়াচ টাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।’

চুনারুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল কাদির লস্কর বলেন, ‘এখানে বসবাসকারী অধিকাংশ আদিবাসী অতি দরিদ্র। তাদের সবার পক্ষে নিজ উদ্যোগে নিরাপদে সরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী লোকদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। আবার অনেকেই নিজের বাপ-দাদার বিটে ছেড়ে অন্যত্র যেতে চাচ্ছে না।’

চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ বলেন, ‘টিপরা পল্লি আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নজরে এনেছি বর্ষার আগেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন এলাকায় জড়িপ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, আশা করি এর একটি স্থায়ী সমাধান হবে।’