০১:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

২৭জানুয়ারী ১৯৬৯ গনঅভূত্থানে গৌরীপুরে শহীদ হারুন দিবস আজ

আজ ২৭ জানুয়ারী গৌরীপুরে শহীদ হারুন দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে ছাত্রদের ১১দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের গৌরীপুর শহরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন গৌরীপুর কলেজের মেধাবী ছাত্র আজিজুল হক হারুন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও হারুনকে রাষ্ট্রীয়ভারে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। শুধু শহীদ হারুনের নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১দফা আন্দোলনের সময় ২৪জানুয়ারী ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট এর ছাত্র মতিউর রহমান পুলিশের গুলিতে শহীদ হলে সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনের নতুন মাত্রার যোগ হয়। আর এই বিক্ষোভের জের ধরেই ১৯৬৯ সালের এই দিনে (২৭ জানুয়ারী) গৌরীপুর শহরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গৌরীপুর কলেজ থেকে ছাত্ররা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের মধ্যবাজারে আসা মাত্রই তৎকালীন মহকুমার প্রশাসক এম,এ সামাদের নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালানো হয়। ওই সময় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মেধাবী ছাত্র হারুন। এরপর থেকেই প্রতিবছর গৌরীপুরে ২৭ জানুয়ারী শহীদ হারুন দিবস পালিত হয়ে আসছে। গৌরীপুরে এই দিনে শহীদ হারুন স্মৃতি পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ভোরে প্রভাতফেরী, হারুণ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পন, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা।

শহীদ হারুনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ছামারুল¬াহ্ গ্রামে। মিয়া বক্স সরকারের পুত্র হারুনদের ৬ ভাই, ৩ বোন। নান্দাইল-আঠারবাড়ি সড়কের পাশেই ৬৯এ গণ-আন্দেলনে শহীদ আব্দুল আজিজ হারুন চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন। জরাজীর্ণ কবরটি এলাকার লোকজনের সহায়তায় কিছু ইট দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হলেও এখন আর কেউ স্মরণ করে না। হারুনদের ৬ ভাইয়ের মধ্যে জীবিত তিন জন হলেন, মোঃ আব্দুল হামিদ, আব্দুর রাশিদ ও শফিকুল আলম চাঁন মিয়া। মৃত দুইজন হলেন, আব্দুল মাজিদ ও আব্দুল গনি। তিন বোনের মধ্যে আনোয়ারা খাতুন নামে একজন জীবিত ও অপর দুই বোন আমেনা খাতুন ও আছিয়া মারা গেছেন।

ছোট ভাই শফিকুল আলম চাঁন মিয়া জানান, সে সময় তিনি স্থানীয় স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গৌরীপুর গেলেও কোন পরিচয় না দিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে পুলিশ লাশ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। পরে তিনদিন পর ময়মনসিংহ থেকে মুচিলেখা দিয়ে ভাইয়ের লাশ নিয়ে নান্দাইলে আসে এবং পুলিশি প্রহরায় লাশ দাফন করা হয়।
হারুনের আরেক ভাই আব্দুর রাশিদ বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পরদিন ঢাকায় আসাদসহ আরো কয়েকজন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। কিন্তু জাতীয়ভাবে আসাদের মৃত্যুর ঘটনাটি স্থান পেলেও আমার ভাইয়ের খবর কেউ রাখেনি।

গৌরীপুর কলেজে পড়া অবস্থায় হারুনর সহপাঠি নান্দাইলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইছহাক আকন্দ (৭৫) জানান, হারুণ ও তিনি গৌরীপুর উপজেলার ২নং ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালিন চেয়ারম্যান মোঃ গুঞ্জর আলীর সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে বসবাস করতেন। হঠাৎ অন্দোলন শুরু হলে হারুন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে কলেজের শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেয়। ২৭ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। গৌরীপুর উপজেলায় প্রতিবছর ২৭ জানুয়ারি হারুনের মৃত্যুর দিনটিকে “হারুন দিবস” হিসাবে পালন করলেও কেউ তার পরিবার ও গ্রামের বাড়ির খবর নেয় না।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

২৭জানুয়ারী ১৯৬৯ গনঅভূত্থানে গৌরীপুরে শহীদ হারুন দিবস আজ

প্রকাশিত : ০১:৫২:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৩

আজ ২৭ জানুয়ারী গৌরীপুরে শহীদ হারুন দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে ছাত্রদের ১১দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ময়মনসিংহের গৌরীপুর শহরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন গৌরীপুর কলেজের মেধাবী ছাত্র আজিজুল হক হারুন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও হারুনকে রাষ্ট্রীয়ভারে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। শুধু শহীদ হারুনের নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১দফা আন্দোলনের সময় ২৪জানুয়ারী ঢাকা নবকুমার ইনস্টিটিউট এর ছাত্র মতিউর রহমান পুলিশের গুলিতে শহীদ হলে সারা দেশে ছাত্র আন্দোলনের নতুন মাত্রার যোগ হয়। আর এই বিক্ষোভের জের ধরেই ১৯৬৯ সালের এই দিনে (২৭ জানুয়ারী) গৌরীপুর শহরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গৌরীপুর কলেজ থেকে ছাত্ররা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের মধ্যবাজারে আসা মাত্রই তৎকালীন মহকুমার প্রশাসক এম,এ সামাদের নির্দেশে আন্দোলনরত ছাত্র মিছিলের উপর পুলিশ গুলি চালানো হয়। ওই সময় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মেধাবী ছাত্র হারুন। এরপর থেকেই প্রতিবছর গৌরীপুরে ২৭ জানুয়ারী শহীদ হারুন দিবস পালিত হয়ে আসছে। গৌরীপুরে এই দিনে শহীদ হারুন স্মৃতি পরিষদ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ভোরে প্রভাতফেরী, হারুণ স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পমাল্য অর্পন, মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা।

শহীদ হারুনের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ছামারুল¬াহ্ গ্রামে। মিয়া বক্স সরকারের পুত্র হারুনদের ৬ ভাই, ৩ বোন। নান্দাইল-আঠারবাড়ি সড়কের পাশেই ৬৯এ গণ-আন্দেলনে শহীদ আব্দুল আজিজ হারুন চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন। জরাজীর্ণ কবরটি এলাকার লোকজনের সহায়তায় কিছু ইট দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হলেও এখন আর কেউ স্মরণ করে না। হারুনদের ৬ ভাইয়ের মধ্যে জীবিত তিন জন হলেন, মোঃ আব্দুল হামিদ, আব্দুর রাশিদ ও শফিকুল আলম চাঁন মিয়া। মৃত দুইজন হলেন, আব্দুল মাজিদ ও আব্দুল গনি। তিন বোনের মধ্যে আনোয়ারা খাতুন নামে একজন জীবিত ও অপর দুই বোন আমেনা খাতুন ও আছিয়া মারা গেছেন।

ছোট ভাই শফিকুল আলম চাঁন মিয়া জানান, সে সময় তিনি স্থানীয় স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র ছিলেন। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে গৌরীপুর গেলেও কোন পরিচয় না দিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে পুলিশ লাশ অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে। পরে তিনদিন পর ময়মনসিংহ থেকে মুচিলেখা দিয়ে ভাইয়ের লাশ নিয়ে নান্দাইলে আসে এবং পুলিশি প্রহরায় লাশ দাফন করা হয়।
হারুনের আরেক ভাই আব্দুর রাশিদ বলেন, আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পরদিন ঢাকায় আসাদসহ আরো কয়েকজন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। কিন্তু জাতীয়ভাবে আসাদের মৃত্যুর ঘটনাটি স্থান পেলেও আমার ভাইয়ের খবর কেউ রাখেনি।

গৌরীপুর কলেজে পড়া অবস্থায় হারুনর সহপাঠি নান্দাইলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইছহাক আকন্দ (৭৫) জানান, হারুণ ও তিনি গৌরীপুর উপজেলার ২নং ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালিন চেয়ারম্যান মোঃ গুঞ্জর আলীর সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে বসবাস করতেন। হঠাৎ অন্দোলন শুরু হলে হারুন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে কলেজের শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেয়। ২৭ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। গৌরীপুর উপজেলায় প্রতিবছর ২৭ জানুয়ারি হারুনের মৃত্যুর দিনটিকে “হারুন দিবস” হিসাবে পালন করলেও কেউ তার পরিবার ও গ্রামের বাড়ির খবর নেয় না।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব