০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

পেনশনের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান অর্থনীতিবিদদের

বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা। প্রথম অবস্থায় চার ক্যাটাগরিতে চালু করা হয়েছে এই স্কিম।
অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন পুঁজিবাজারসহ বিশেষ কোম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ রেখে সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় যেন হয়রানির শিকার হতে না হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেন।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় সেই ধরনের জনবল প্রয়োজন। যারা ফান্ড ম্যানেজমেন্টে দড়্গও পারদর্শী। তারা এটাকে দক্ষতার সঙ্গে ম্যানেজমেন্ট করবে যাতে ঝুঁকিটা একেবারে কমে যায়। এখানে দুটো বিষয় আছে প্রথমত আপনি সেখান থেকে রিটার্নটা কত পাবেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে ঝুঁকিটা কত। এখানে যদি এমনভাবে ফান্ডটা গঠন করা হয় যেখানে একটাতে রিটার্ন যদি কমে যায় আরেকটা রিটার্ন বেড়ে যাবে তাহলে একটা সমতা হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, দেশের মানুষ যে বিভিন্ন স্ক্রীমে টাকা জমা দেবে, সেখানে বিনিয়োগের সঠিক দিকনির্দেশনা বা সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। তবে তাদের সামনে কমপক্ষে আরও ১০ বছর সময় আছে। ১০ বছরের আগে তো আর কেউ পেনশন পাচ্ছেন না। সে জন্য সরকারকে নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে আরও স্পষ্ট করতে হবে। সবচেয়ে স্বচ্ছতার দাবি রাখে সমতা স্কিম। কারণ, এখানে সরকার সরসারি কন্ট্রিবিউট করবে। তাই প্রকৃত গরিব মানুষ যাতে সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।’

পেনশন স্কিমে জমা হওয়া চাঁদা কোথায় বিনিয়োগ করা যেতে পারে এবিষয়ে জানতে চাইলে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের স্টক মার্কেট খুবই আন্ডার ডেভলপ, খুবই করাপশন। তবু বলা যায় অল্প কিছু স্টক আছে, যেগুলো রিলায়েবল। স্টক মার্কেটে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ রাখা উচিত। এটা পৃথিবীর সব দেশেই রাখে। তবে এই বিনিয়োগ শুধু ট্রিপল ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিতে করার সুযোগ রাখা যেতে পারে, তার বাইরে না।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ দেশের সকল ¯ত্মরের জনমানুষকে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বলয়ে অšত্মর্ভূক্তিকরণে কার্যকর ও সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ, তিনি বিশ্বাস করেন, এটি সরকারের একটি জনবান্ধব উদ্যোগ, যা দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। এদিকে পেনশন স্কিম চালুর প্রথম দিন থেকেই ভালো সাড়া মিলেছে।
পেনশনের নিবন্ধন থেকে শুরম্ন করে চাঁদা পরিশোধের বিবরণ অনলাইনে প্রতি ঘণ্টায় করে যাওয়ায় আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই স্কিমের আওতায় বেসরকারি কর্মীরা মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। চাঁদার ৫০ শতাংশ দেবেন কর্মীরা, আর বাকি ৫০ শতাংশ কোম্পানি পরিশোধ করবে। বেসরকারি কোনও কর্মী যদি ১৮ বছর বয়সে এ স্কিমে যোগ দেন এবং এরপর ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা জমা দেন, তবে ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর তিনি প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা করে পেনশন পাবেন। একই মেয়াদে ৩ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা করে মাসিক পেনশন পাবেন। আর ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর তিনি আমৃত্যু ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা মাসিক পেনশন পাবেন। অর্থাৎ এই স্কিমে ৪২ বছর ধরে ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দেওয়া হলে ন্যূনতম ৭৫ বছর পর্যন্ত সময়ে পেনশন হিসাবে মোট পাওয়া যাবে ৩ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা মোট চাঁদার প্রায় ১২ দশমিক ৩১ গুণ। তবে এ স্কিমে ১০ বছর ধরে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা করে চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মাসে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৬০ টাকা। এ ক্ষেত্রেও মোট চাঁদার তুলনায় ২ দশমিক ৩০ গুণ বেশি পেনশন পাওয়া যাবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/এনআই

নতুন কর্মসূচি ঘোষণা ‍দিয়েছে কোটা আন্দোলনকারীরা

পেনশনের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আহ্বান অর্থনীতিবিদদের

প্রকাশিত : ০৭:০৪:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। দেশের চার শ্রেণির প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে চালু করা হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থা। প্রথম অবস্থায় চার ক্যাটাগরিতে চালু করা হয়েছে এই স্কিম।
অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনরা প্রাথমিকভাবে স্বাগত জানিয়ে তারা বলেন পুঁজিবাজারসহ বিশেষ কোম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ রেখে সর্বজনীন পেনশন সুবিধায় যেন হয়রানির শিকার হতে না হয় সে বিষয়ে পরামর্শ দেন।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় সেই ধরনের জনবল প্রয়োজন। যারা ফান্ড ম্যানেজমেন্টে দড়্গও পারদর্শী। তারা এটাকে দক্ষতার সঙ্গে ম্যানেজমেন্ট করবে যাতে ঝুঁকিটা একেবারে কমে যায়। এখানে দুটো বিষয় আছে প্রথমত আপনি সেখান থেকে রিটার্নটা কত পাবেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে ঝুঁকিটা কত। এখানে যদি এমনভাবে ফান্ডটা গঠন করা হয় যেখানে একটাতে রিটার্ন যদি কমে যায় আরেকটা রিটার্ন বেড়ে যাবে তাহলে একটা সমতা হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, দেশের মানুষ যে বিভিন্ন স্ক্রীমে টাকা জমা দেবে, সেখানে বিনিয়োগের সঠিক দিকনির্দেশনা বা সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। তবে তাদের সামনে কমপক্ষে আরও ১০ বছর সময় আছে। ১০ বছরের আগে তো আর কেউ পেনশন পাচ্ছেন না। সে জন্য সরকারকে নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে আরও স্পষ্ট করতে হবে। সবচেয়ে স্বচ্ছতার দাবি রাখে সমতা স্কিম। কারণ, এখানে সরকার সরসারি কন্ট্রিবিউট করবে। তাই প্রকৃত গরিব মানুষ যাতে সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।’

পেনশন স্কিমে জমা হওয়া চাঁদা কোথায় বিনিয়োগ করা যেতে পারে এবিষয়ে জানতে চাইলে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ। আমাদের স্টক মার্কেট খুবই আন্ডার ডেভলপ, খুবই করাপশন। তবু বলা যায় অল্প কিছু স্টক আছে, যেগুলো রিলায়েবল। স্টক মার্কেটে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ রাখা উচিত। এটা পৃথিবীর সব দেশেই রাখে। তবে এই বিনিয়োগ শুধু ট্রিপল ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানিতে করার সুযোগ রাখা যেতে পারে, তার বাইরে না।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ দেশের সকল ¯ত্মরের জনমানুষকে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বলয়ে অšত্মর্ভূক্তিকরণে কার্যকর ও সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ, তিনি বিশ্বাস করেন, এটি সরকারের একটি জনবান্ধব উদ্যোগ, যা দেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। এদিকে পেনশন স্কিম চালুর প্রথম দিন থেকেই ভালো সাড়া মিলেছে।
পেনশনের নিবন্ধন থেকে শুরম্ন করে চাঁদা পরিশোধের বিবরণ অনলাইনে প্রতি ঘণ্টায় করে যাওয়ায় আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই স্কিমের আওতায় বেসরকারি কর্মীরা মাসিক ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। চাঁদার ৫০ শতাংশ দেবেন কর্মীরা, আর বাকি ৫০ শতাংশ কোম্পানি পরিশোধ করবে। বেসরকারি কোনও কর্মী যদি ১৮ বছর বয়সে এ স্কিমে যোগ দেন এবং এরপর ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা জমা দেন, তবে ৬০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর তিনি প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা করে পেনশন পাবেন। একই মেয়াদে ৩ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে তিনি ১ লাখ ৩ হাজার ৩৯৬ টাকা করে মাসিক পেনশন পাবেন। আর ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর তিনি আমৃত্যু ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা মাসিক পেনশন পাবেন। অর্থাৎ এই স্কিমে ৪২ বছর ধরে ৫ হাজার টাকা করে মাসিক চাঁদা দেওয়া হলে ন্যূনতম ৭৫ বছর পর্যন্ত সময়ে পেনশন হিসাবে মোট পাওয়া যাবে ৩ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা মোট চাঁদার প্রায় ১২ দশমিক ৩১ গুণ। তবে এ স্কিমে ১০ বছর ধরে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা করে চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মাসে পাওয়া যাবে ৩ হাজার ৬০ টাকা। এ ক্ষেত্রেও মোট চাঁদার তুলনায় ২ দশমিক ৩০ গুণ বেশি পেনশন পাওয়া যাবে।

বিজনেস বাংলাদেশ/এনআই