১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না

সাংবাদিক তুহিন হত্যায় ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হবে: জিএমপি কমিশনার

গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান। এসময় তিনি, যথার্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারার কারণে তুহিন হত্যায় ব্যর্থতা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে নিহত তুহিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে মহানগরীর জিএমপির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি।

জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেছেন, সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না৷ আমাদের ব্যর্থতা ও জনবল স্বল্পতা রয়েছে। পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন করা সম্ভব হয় না। এখানে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হয়। অপরাধ দমনে তিনি পুলিশকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।

পুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনায় জানান, ঘটনার দিন এই ঘটনার প্রথম ভিকটিম বাদশা মিয়া স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলেন। বিষয়টি দেখে তাকে ফাঁসানোর জন্য গোলাপি বাদশাকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করেন। গোলাপির সাথে কথাবার্তার এক পর্যায়ে বাদশা মিয়া বিষয়টি বুঝতে পারেন, যে তাকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপর কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং বাদশা মিয়া গোলাপিকে ঘুসি মারেন। সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া বিষয়টিতে এটা দেখা যায়।

পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, গোলাপিকে ঘুসি মারার পরপরই আগে থেকে উৎপেতে থাকা গোলাপির সহযোগীরা ৫-৬ জন এগিয়ে এসে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। তখন বাদশা মিয়া সেখান থেকে পালিয়ে যাবার সময় এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। সাংবাদিক তুহিনের ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি আসামিরা দেখে ফেলে। তখন আসামীরা বুঝে যায় যে, এই ভিডিওর মাধ্যমে তাদের অপরাধ মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, তারপরে আসামিরা সাংবাদিক তুহিনের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি কেড়ে নেয়ার জন্য তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় এবং তাকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে সাংবাদিক তুহিন একটি চা স্টলে আশ্রয় নিলে তাকে সেখান থেকে ধরে এনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

কমিশনার আরো বলেন, ঘটনার পর পরই আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজ দেখে আমরা ৮ জনকে চিহ্নিত করেছি। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছি৷ বাকি একজনকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে পারব৷

সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার আসামীরা হলেন, জামালপুরের মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর এলাকার মোবারকের ছেলে মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫), তার স্ত্রী গোলাপী (২৫), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো: স্বাধীন (২৮), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতার হানিফের ছেলে আল আমিন (২১), কুমিল্লার হোমনা থানার আন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহজালাল (৩২), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল হাসান (২৩) এবং সুমন নামের একজন।

তিনি আরো জানান, হত্যার প্রধান আসামি কেটু মিজানের নামে ১৫টি মামলা রয়েছে। কেটু মিজানের স্ত্রী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপি, যিনি হানি ট্র্যাপ কার্যক্রমে জড়িত। অপর আসামী আল আমিনের ২টি মামলা, আসামী স্বাধীনের নামে ২টি মামলা, আসামী শাহজালালের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা, আসামী ফয়সাল হাসানের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ে তাদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সাজার সংস্কৃতি নিশ্চিত করা গেলে ক্রাইম দমন করা যাবে।

এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ এখনো তাদের মনোবল ফিরে পায়নি। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে ক্রাইম বেড়ে যায়। এটা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। এছাড়াও আগের রেজিম এই জেলায় শক্তিশালী। সেই দলটি চায় না গাজীপুর স্থিতিশিল হোক। তারা গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে। এই নজরদারি করতে গিয়ে অন্যান্য অপরাধে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। তবে, মানুষের স্বস্তি ফেরাতে কাজ করছে জিএমপি।

প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা দিকে একটি মার্কেটের ভিতর প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে তিনি। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

 

ডিএস./

ট্যাগ :

সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না

সাংবাদিক তুহিন হত্যায় ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেয়া হবে: জিএমপি কমিশনার

প্রকাশিত : ০৪:৫২:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান। এসময় তিনি, যথার্থ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারার কারণে তুহিন হত্যায় ব্যর্থতা নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে নিহত তুহিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। শনিবার দুপুরে মহানগরীর জিএমপির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন তিনি।

জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেছেন, সাংবাদিক হত্যার দায় আমরা এড়াতে পারি না৷ আমাদের ব্যর্থতা ও জনবল স্বল্পতা রয়েছে। পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন করা সম্ভব হয় না। এখানে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হয়। অপরাধ দমনে তিনি পুলিশকে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।

পুলিশ কমিশনার ঘটনার বর্ণনায় জানান, ঘটনার দিন এই ঘটনার প্রথম ভিকটিম বাদশা মিয়া স্থানীয় একটি এটিএম বুথ থেকে ২৫ হাজার টাকা তোলেন। বিষয়টি দেখে তাকে ফাঁসানোর জন্য গোলাপি বাদশাকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করেন। গোলাপির সাথে কথাবার্তার এক পর্যায়ে বাদশা মিয়া বিষয়টি বুঝতে পারেন, যে তাকে হানি ট্র্যাপে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারপর কথাবার্তার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় এবং বাদশা মিয়া গোলাপিকে ঘুসি মারেন। সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া বিষয়টিতে এটা দেখা যায়।

পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, গোলাপিকে ঘুসি মারার পরপরই আগে থেকে উৎপেতে থাকা গোলাপির সহযোগীরা ৫-৬ জন এগিয়ে এসে চাপাতি দিয়ে বাদশা মিয়াকে এলোপাতাড়ি কোপাতে শুরু করে। তখন বাদশা মিয়া সেখান থেকে পালিয়ে যাবার সময় এই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। সাংবাদিক তুহিনের ভিডিও ধারণ করার বিষয়টি আসামিরা দেখে ফেলে। তখন আসামীরা বুঝে যায় যে, এই ভিডিওর মাধ্যমে তাদের অপরাধ মানুষের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, তারপরে আসামিরা সাংবাদিক তুহিনের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি কেড়ে নেয়ার জন্য তার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় এবং তাকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে সাংবাদিক তুহিন একটি চা স্টলে আশ্রয় নিলে তাকে সেখান থেকে ধরে এনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

কমিশনার আরো বলেন, ঘটনার পর পরই আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। ফুটেজ দেখে আমরা ৮ জনকে চিহ্নিত করেছি। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছি৷ বাকি একজনকেও দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে পারব৷

সাংবাদিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার আসামীরা হলেন, জামালপুরের মেলান্দহ থানার মাহমুদপুর এলাকার মোবারকের ছেলে মিজান ওরফে কেটু মিজান (৩৫), তার স্ত্রী গোলাপী (২৫), পাবনার ফরিদপুর উপজেলার সোনাহারা গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে মো: স্বাধীন (২৮), খুলনার সোনাডাঙ্গা উপজেলার ময়লাপোতার হানিফের ছেলে আল আমিন (২১), কুমিল্লার হোমনা থানার আন্তপুর গ্রামের হানিফ ভূঁইয়ার ছেলে শাহজালাল (৩২), পাবনার চাটমোহর থানার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের কিয়ামুদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল হাসান (২৩) এবং সুমন নামের একজন।

তিনি আরো জানান, হত্যার প্রধান আসামি কেটু মিজানের নামে ১৫টি মামলা রয়েছে। কেটু মিজানের স্ত্রী পারুল আক্তার ওরফে গোলাপি, যিনি হানি ট্র্যাপ কার্যক্রমে জড়িত। অপর আসামী আল আমিনের ২টি মামলা, আসামী স্বাধীনের নামে ২টি মামলা, আসামী শাহজালালের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা, আসামী ফয়সাল হাসানের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ে তাদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সাজার সংস্কৃতি নিশ্চিত করা গেলে ক্রাইম দমন করা যাবে।

এবিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ এখনো তাদের মনোবল ফিরে পায়নি। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেলে ক্রাইম বেড়ে যায়। এটা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি। এছাড়াও আগের রেজিম এই জেলায় শক্তিশালী। সেই দলটি চায় না গাজীপুর স্থিতিশিল হোক। তারা গাজীপুরকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সেটিও নজরদারি করা হচ্ছে। এই নজরদারি করতে গিয়ে অন্যান্য অপরাধে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। তবে, মানুষের স্বস্তি ফেরাতে কাজ করছে জিএমপি।

প্রসঙ্গত, গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত ৮টা দিকে একটি মার্কেটের ভিতর প্রকাশ্যে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে তিনি। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।

 

ডিএস./