রাজধানীর ফরচুন শপিং মলে স্বর্ণের দোকানে চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনায় প্রায় ১৯০ ভরি স্বর্ণ, ৯৩.৫ গ্রাম রুপা, নগদ ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃতরা হলো- শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিন (৪৬) অনিতা রায় (৩১) মোঃ নূরুল ইসলাম (৩৩) ও উত্তম চন্দ্র সুর (৪৯)।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, গত (৮ অক্টোবর ২০২৫) দিবাগত রাতে মালিবাগের ফরচুন শপিং মলে অবস্থিত শম্পা জুয়েলার্সে একটি দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা সংঘটিত হয়।
এ ঘটনায় রমনা থানায় চুরির মামলা রুজু করা হয়। ঘটনার পরপরই ডিবি ডিএমপির একটি বিশেষ দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্ত করা হয়।
আসামীরা গত তিন মাস ধরে ফরচুন শপিং মলের স্বর্ণালংকার চুরির পরিকল্পনা করে সে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বেশ কয়েকবার রেকি করে। চুরির উদ্দেশ্যে তারা হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আগে থেকেই মার্কেটের পেছনে টিনের চালের নিচে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার দিন দিনের বেলায় আসামি সুমন মার্কেটে প্রবেশ করে বাথরুমের জানালার গ্রিলে সুতার মাধ্যমে ‘ইউ’ লুপ তৈরি মাটি পর্যন্ত নামিয়ে বেঁধে রাখে এবং চুরির সময় নিজেদের মুখ ঢেকে রাখার জন্য বাথরুমে বোরকা রেখে আসে। রাত আনুমানিক ১:৩০ থেকে ১:৩৫ ঘটিকায় আসামিরা গণপূর্ত কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে মার্কেটের পেছনে পৌঁছে। পূর্বে বাঁধা সুতার সঙ্গে দড়ি বেঁধে তারা ছাদে উঠে গ্রিল কেটে বাথরুমের ভিতরে প্রবেশ করে এবং বোরকা পরিহিত অবস্থায় বাথরুমের দরজা ভেঙে শপিং মলে প্রবেশ করে এবং শম্পা জুয়েলার্সে চুরি করে রাত আনুমানিক ৪:২৫ থেকে ৪:৩০ ঘটিকায় একই পথে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় তারা ব্যবহৃত বোরকা ও সরঞ্জাম গণপূর্ত কোয়ার্টারের টয়লেটের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে যায়।
উক্ত ঘটনায় ধারাবাহিক অভিযানে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিনকে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর আনুমানিক ১২:৩০ ঘটিকায় গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। শাহিনের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাড়ির গোয়ালঘর থেকে প্রায় ১২১.০৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। একই দিন বরিশালের উজিরপুর থানার পূর্ব হারতা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে পলাতক আসামি শৈশব রায় সুমনের স্ত্রী অনিতা রায়ের হেফাজত থেকে ৫২.৮১ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় এবং বিকাল আনুমানিক ০৫:২০ ঘটিকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
অপর এক অভিযানে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাত আনুমানিক ০১:১০ ঘটিকায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে মো. নূরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে প্রায় দুই ভরি স্বর্ণ, একটি মোটরসাইকেল এবং ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
একই দিন অর্থ সরবরাহকারী ও রেকিতে অংশগ্রহণকারী উত্তম চন্দ্র সুরকে ভোর আনুমানিক ০৪:৪০ ঘটিকায় শাখারী বাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এবং তার কাছ থেকে ১৩.৬৭ ভরি স্বর্ণ এবং ৯৩.৫ গ্রাম রৌপ্য উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় মোট ৪ জন আসামী গ্রেফতারের পাশাপাশি প্রায় ১৯০ ভরি স্বর্ণ, ৯৩.৫ গ্রাম রৌপ্য এবং ১লক্ষ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা নগদ এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযানের মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলো।গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
ডিএস./