বহির্বিশ্বের অর্থনীতি গতিশীল না হওয়ায় দেশের রফতানি কিছুটা কমেছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে প্রায় পূর্ণ গতি ফেরায় আমদানি বাণিজ্য পূর্বের অবস্থায় ফিরেছে। যে কারণে বেড়ে গেছে বাণিজ্য ঘাটতি।করোনা মহামারির প্রকোপে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। ইউরোপ-অ্যামেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অর্থনীতি এখনও বেসামাল। যে কারণে এসব বাজারে চাহিদা সৃষ্টি না হওয়ায় রফতানি আয় কমেছে বাংলাদেশের। কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ভিন্ন অবস্থা। প্রায় করোনাপূর্ব চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে। যে কারণে আমদানি বাণিজ্য ফিরেছে প্রায় পূর্বের অবস্থায়। রফতানি বাণিজ্য কিছুটা কমে আমদানি বাণিজ্যে গতি ফেরায় চাপে পড়েছে দেশের চলতি হিসাবের ভারসাম্য বা ব্যালেন্স অব পেমেন্ট। বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৯৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ প্রায় ৮৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ের বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে দুই হাজার ২১৩ কোটি ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৩ হাজার ১৯২ কোটি ডলার। সে হিসেবে সাত মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯৭৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ প্রায় ৮৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
এ সময়ে বাংলাদেশের রফতানি আয় পূর্বের অর্থবছরের প্রাথম সাত মাসের তুলনায় ১ দশমিক ০২ শতাংশ কমেছে। বিপরীতে পণ্য আমদানির ব্যয় আগের বছরের চেয়ে শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ, আমদানি ব্যয় প্রায় করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। মূলত, দেশের অভ্যন্তরিণ চাহিদা করোনাপূর্ব অবস্থায় ফেরায় আমদানিতে গতি এসেছে। আমদানি পূর্বের অবস্থায় ফিরলেও রফতানি আয় পূর্বের অবস্থায় না ফেরায় ঘাটতি বেড়েছে। তবে দেশের প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রথম সাত মাসে ৩৫ শতাংশ বাড়ায় সার্বিক বাণিজ্য ঘাটতি কম হয়েছে।
চলতি হিসাবে ভারসাম্য: করোনার মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির অবস্থা যখন নাজুক তখনও দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্ত বাড়ছে। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসেবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে চলতি হিসাবে ২২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল প্রায় ১৮০ কোটি ডলার। এদিকে সার্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার কারণে সার্বিক ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) ৬৪০ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ কোটি ২০ লাখ ডলার।
আলোচ্য সময়ে এক হাজার ৪৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছর একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ১০৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।