১১:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

পূর্ণ গতিতে অর্থনীতি

করোনা মহামারির ধাক্কা প্রায় সামলে উঠেছে দেশের অর্থনীতি। পূর্ণ গতি ফিরেছে অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকগুলোতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কর্মকৌশলের কারণে পরাস্ত হয়েছে করোনার অভিঘাত। অর্থনীতির অনেকগুলো সূচকই করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। অর্থনীতিবিদদের ধারনা, বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে শিগগিরই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছুটবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
মহামারীর প্রভাবে গত বছরের শেষ পর্যন্ত অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই ছিল নিম্নমুখী। বেড়েছে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য। রাজস্ব আয় কমে যায়। ব্যাংক খাতেও লেনদেনের মাত্রা নেমে আসে। নেতিবাচক ধারায় নেমে আসে ঋণ প্রবৃদ্ধি। তবে শেষ পর্যন্ত বড় মাত্রায় ধস এড়াতে সক্ষম হয় বাংলাদেশের অর্থনীতি। এর মূলে কাজ করেছে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকারের গ্রহীত কর্মকৌশল ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে করোনার অভিঘাত কেটে যাওয়ার আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বলছে, দেশের অর্থনীতি এখন করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরছে।
প্রকৃতপক্ষে ডিসেম্বর থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত বলছে, পুনরুদ্ধারের পথে অর্থনীতির চাকা এখন অনেক বেশি গতিশীল। শেয়ারবাজারেও এর প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে। করোনাপূর্ব অবস্থানে প্রত্যাবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বৈদেশিক শ্রমবাজারেও। এমনকি, বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ঋণের চাহিদাও। যে কারণে বাড়ছে কর্মসংস্থান। করোনাকালে চাকরি হারানোদের মধ্যে অনেকেই ফিরে পাচ্ছেন রুটি-রুজির নিশ্বয়তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বরে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে নভেম্বরের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ, করোনাপূর্ব অবস্থায় ঋণের যে চাহিদা ছিল তার চেয়েও প্রায় ১০ ভাগ বেশি চাহিদা বেড়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এর অর্থ হচ্ছে, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানেরও সুযোগ বাড়ছে।
নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে দেশের ব্যাংক খাতের লেনদেনে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। লেনদেন কমে গিয়েছিল চেক, ইএফটি, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ সব ডিজিটাল মাধ্যমেই। গত বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোয় চেকের মাধ্যমে লেনদেন কমে গিয়েছিল ৩০ শতাংশের বেশি। ওই প্রান্তিকে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। করোনার বিপর্যয় কাটিয়ে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোতে চেকের মাধ্যমে লেনদেন ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। চেকের মাধ্যমে হওয়া লেনদেনের এ পরিসংখ্যান ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়েও বেশি। ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা।
এছাড়া ইএফটি, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ ডিজিটাল ব্যাংকিং লেনদেন করোনার আগের অবস্থায় ফিরেছে। কিছু ক্ষেত্রে মহামারীপূর্ব অবস্থা থেকেও এ লেনদেনের সংখ্যা অনেক বেশি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
সংকটকালে বাংলাদেশের অর্থনীতির হাল ধরেছিলেন প্রবাসে অভিবাসী শ্রমিকরা। এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে রেকর্ড পরিমাণে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৬৬৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের এই উচ্চপ্রবৃদ্ধির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে দেশের প্রায় এক বছরের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব।
করোনাকালে আমদানিকারক দেশগুলো তাদের বাণিজ্য সচল রাখতে হিমশিম খাওয়ায় বাংলাদেশের রফতানি খাত বড় ধাক্কা খায়। ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রফতানি (ফ্রি অন বোর্ড) প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। তবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রফতানির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে মাত্র ১ শতাংশ। ফলে ধীরে হলেও গতি ফিরছে রফতানি খাতে। ব্যাংকগুলোয় আমদানি-রফতানির এলসি খোলার হার বাড়ছে। পোশাক শিল্প খাতের কারখানাগুলোও প্রায় পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করেছে। এ খাতের স্থগিত হওয়া অর্ডারগুলো ফিরে আসছে। রফতানি খাতের প্রবৃদ্ধি এখন নেতিবাচক হলেও তার মাত্রা আগের চেয়ে কমেছে। বর্তমান ক্রয়াদেশ ফিরতে শুরু করলেও মারাত্মক মূল্য চাপ মোকাবেলা করছেন শিল্পমালিকরা। গত ডিসেম্বরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে রফতানির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির হার নেমেছে ঋণাত্মক ৩ দশমিক ৯২ শতাংশে। রফতানির এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে আরো সহযোগিতা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব আহরণও বাড়ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা ঘাটতি থাকলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বেশি। সাত মাসে আহরণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। এক মাস হিসেবে গত জানুয়ারিতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।
বেড়েছে বিদেশে কর্মসংস্থানও। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ হাজার ৩১৪ জন বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে পেরেছেন, যা গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ বেশি।
অর্থনীতির বর্তমান গতিপ্রবাহ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমানে আমরা দেশের অর্থনীতির যে পরিসংখ্যান পাচ্ছি তা আমাদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের ব্যাংক খাতের সূচকগুলো করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। আমদানি ব্যয় পূর্বের অবস্থায় ফিরেছে। রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের রফতানি খাতও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অর্থনীতির সব সূচকই প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরাটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বড় অর্জন।
করোনা সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের ধারায় ফিরে আসা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় গুণগত বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে একটি শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড় করিয়েছেন। কভিডকালে বড় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে অর্থনীতির সূচকগুলো সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। ফলে মহামারী পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সূচকগুলো ভেঙে পড়েনি। এছাড়া প্রণোদনার অর্থ সরাসরি সুবিধাভোগীর ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়েছে। এতে অর্থের অপচয় কম হয়েছে। সরকারের সব সংস্থা ও কর্মকর্তারা টিম হিসেবে কাজ করার কারণেই অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।

ট্যাগ :

দুদকের ২ উপপরিচালক বরখাস্ত

পূর্ণ গতিতে অর্থনীতি

প্রকাশিত : ১২:০০:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ ২০২১

করোনা মহামারির ধাক্কা প্রায় সামলে উঠেছে দেশের অর্থনীতি। পূর্ণ গতি ফিরেছে অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকগুলোতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের কর্মকৌশলের কারণে পরাস্ত হয়েছে করোনার অভিঘাত। অর্থনীতির অনেকগুলো সূচকই করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। অর্থনীতিবিদদের ধারনা, বর্তমান গতিতে চলতে থাকলে শিগগিরই ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছুটবে বাংলাদেশের অর্থনীতি।
মহামারীর প্রভাবে গত বছরের শেষ পর্যন্ত অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই ছিল নিম্নমুখী। বেড়েছে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য। রাজস্ব আয় কমে যায়। ব্যাংক খাতেও লেনদেনের মাত্রা নেমে আসে। নেতিবাচক ধারায় নেমে আসে ঋণ প্রবৃদ্ধি। তবে শেষ পর্যন্ত বড় মাত্রায় ধস এড়াতে সক্ষম হয় বাংলাদেশের অর্থনীতি। এর মূলে কাজ করেছে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে সরকারের গ্রহীত কর্মকৌশল ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে করোনার অভিঘাত কেটে যাওয়ার আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান বলছে, দেশের অর্থনীতি এখন করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরছে।
প্রকৃতপক্ষে ডিসেম্বর থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোর হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত বলছে, পুনরুদ্ধারের পথে অর্থনীতির চাকা এখন অনেক বেশি গতিশীল। শেয়ারবাজারেও এর প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে। করোনাপূর্ব অবস্থানে প্রত্যাবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বৈদেশিক শ্রমবাজারেও। এমনকি, বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে ঋণের চাহিদাও। যে কারণে বাড়ছে কর্মসংস্থান। করোনাকালে চাকরি হারানোদের মধ্যে অনেকেই ফিরে পাচ্ছেন রুটি-রুজির নিশ্বয়তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বরে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে নভেম্বরের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় এ বৃদ্ধির হার ছিল ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। অর্থাৎ, করোনাপূর্ব অবস্থায় ঋণের যে চাহিদা ছিল তার চেয়েও প্রায় ১০ ভাগ বেশি চাহিদা বেড়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এর অর্থ হচ্ছে, দেশে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানেরও সুযোগ বাড়ছে।
নভেল করোনাভাইরাসের আঘাতে দেশের ব্যাংক খাতের লেনদেনে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। লেনদেন কমে গিয়েছিল চেক, ইএফটি, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ সব ডিজিটাল মাধ্যমেই। গত বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোয় চেকের মাধ্যমে লেনদেন কমে গিয়েছিল ৩০ শতাংশের বেশি। ওই প্রান্তিকে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৪ লাখ ৭ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। করোনার বিপর্যয় কাটিয়ে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোতে চেকের মাধ্যমে লেনদেন ৬ লাখ ৬ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। চেকের মাধ্যমে হওয়া লেনদেনের এ পরিসংখ্যান ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের চেয়েও বেশি। ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে চেকের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছিল ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা।
এছাড়া ইএফটি, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডসহ ডিজিটাল ব্যাংকিং লেনদেন করোনার আগের অবস্থায় ফিরেছে। কিছু ক্ষেত্রে মহামারীপূর্ব অবস্থা থেকেও এ লেনদেনের সংখ্যা অনেক বেশি বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।
সংকটকালে বাংলাদেশের অর্থনীতির হাল ধরেছিলেন প্রবাসে অভিবাসী শ্রমিকরা। এ সময়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে রেকর্ড পরিমাণে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৬৬৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের এই উচ্চপ্রবৃদ্ধির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে দেশের প্রায় এক বছরের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব।
করোনাকালে আমদানিকারক দেশগুলো তাদের বাণিজ্য সচল রাখতে হিমশিম খাওয়ায় বাংলাদেশের রফতানি খাত বড় ধাক্কা খায়। ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে রফতানি (ফ্রি অন বোর্ড) প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে। তবে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রফতানির পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে মাত্র ১ শতাংশ। ফলে ধীরে হলেও গতি ফিরছে রফতানি খাতে। ব্যাংকগুলোয় আমদানি-রফতানির এলসি খোলার হার বাড়ছে। পোশাক শিল্প খাতের কারখানাগুলোও প্রায় পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করেছে। এ খাতের স্থগিত হওয়া অর্ডারগুলো ফিরে আসছে। রফতানি খাতের প্রবৃদ্ধি এখন নেতিবাচক হলেও তার মাত্রা আগের চেয়ে কমেছে। বর্তমান ক্রয়াদেশ ফিরতে শুরু করলেও মারাত্মক মূল্য চাপ মোকাবেলা করছেন শিল্পমালিকরা। গত ডিসেম্বরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে রফতানির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির হার নেমেছে ঋণাত্মক ৩ দশমিক ৯২ শতাংশে। রফতানির এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে আরো সহযোগিতা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আমদানি-রফতানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব আহরণও বাড়ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কিছুটা ঘাটতি থাকলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব আহরণ হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা বেশি। সাত মাসে আহরণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আহরণ হয়েছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা। এক মাস হিসেবে গত জানুয়ারিতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।
বেড়েছে বিদেশে কর্মসংস্থানও। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ হাজার ৩১৪ জন বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যেতে পেরেছেন, যা গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ বেশি।
অর্থনীতির বর্তমান গতিপ্রবাহ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, বর্তমানে আমরা দেশের অর্থনীতির যে পরিসংখ্যান পাচ্ছি তা আমাদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। বিশেষ করে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের ব্যাংক খাতের সূচকগুলো করোনাপূর্ব অবস্থায় ফিরেছে। আমদানি ব্যয় পূর্বের অবস্থায় ফিরেছে। রেমিট্যান্সের উচ্চপ্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের রফতানি খাতও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অর্থনীতির সব সূচকই প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরাটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের বড় অর্জন।
করোনা সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আগের ধারায় ফিরে আসা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় গুণগত বিষয় হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে একটি শক্তিশালী কাঠামোর ওপর দাঁড় করিয়েছেন। কভিডকালে বড় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে অর্থনীতির সূচকগুলো সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। ফলে মহামারী পরিস্থিতিতে অর্থনীতির সূচকগুলো ভেঙে পড়েনি। এছাড়া প্রণোদনার অর্থ সরাসরি সুবিধাভোগীর ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়েছে। এতে অর্থের অপচয় কম হয়েছে। সরকারের সব সংস্থা ও কর্মকর্তারা টিম হিসেবে কাজ করার কারণেই অর্থনীতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে।