দিনাজপুর সদরে গৌরীপুর এলাকায় ক্ষরা মৌসুমে সম্পুরক সেচ প্রদানের লক্ষ্যে পূনর্ভবা নদীর উপর সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়। প্রকল্প সম্পন্ন হলে দিনাজপুর সদর ও বিরল দুই উপজেলা এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।জানা গেছে, দিনাজপুর শহরের পশ্চিমে পূনর্ভবা নদী পূর্বে আত্রাই নদী হতে বের হয়ে আসা গর্ভেশ্বরী নদী এবং উত্তরে প্রবাহিত হয়েছে ঢেপা নদী। পরবর্তীতে ঢেপা নদী সদর উপজেলার রাজাপাড়া ঘাট এলাকায় পূনর্ভবা নদীর সাথে মিলিত হয়ে পূনর্ভবা নাম ধারণ করে শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুন্দরা এলাকা দিয়ে ভারতে মল্লিকপুরে প্রবেশ করেছে।
শীতকালের শুস্ক মৌসুমে পুনর্ভবা নদীর পানি একেবারে শুকিয়ে যায়। ফলে নদীর বাস্ততন্ত্র ও জীব বৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়ে। শুস্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এতটাই নিচে নেমে যায় যে, নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার নলকুপকুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ে। শুস্ক মৌসুমে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। ফলে পৌর এলাকার আংশিক, সদরের ৬ ও ৯ নং ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী বিরল উপজেলার ৫, ৬, ৮ ও ১১ নং ইউনিয়নে পানি শূন্যতার কারণে কৃষকরা জমিতে চাষাবাদ করতে পারে না। এই পানি শূন্যতার কারনে ঐ এলাকার নলকূপ গুলোতে পানি পাওয়া যায় না। সেচের কাজে ব্যবহৃত নলকুপসমূহ ১৫ থেকে ২০ ফিট মাটির গভীরে স্থাপন করে পানি তুলতে হয়। সমন্বিত পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ, নদীর তীর সংরক্ষণ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে উজানে নদীতে সারাবছর পানি জমে রাখার ফলে একদিকে কৃষকরা ভূপরিস্থ পানি এলাকায় খালের মাধ্যমে সেচের কাজে ব্যবহার করবে। ফলে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে ভূগর্ভস্থ পানির পুনঃভরনের মাধ্যমে পানির সমতল বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্প এলাকায় গ্রস ৪ হাজার ২শ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে সদর উপজেলার প্রায় ৩ হাজার ৬শ হেক্টর জমি চাষের আওতায় এনে শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি হবে। প্রকল্প এলাকায় ওয়াটার টেবল এর উচ্চতা বৃদ্ধি করে সুপেয় পানি এবং গভীর নলকুপগুলোতে সেচের পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে। পানির উচ্চতার তারতম্য হ্রাস করে আর্সেনিকের আবির্ভাব/প্রাদুর্ভাব প্রতিহত হবে। ব্রীজ নির্মাণের মাধ্যমে দিনাজপুরের সাথে বিরল উপজেলার প্রায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা দৈর্ঘ্য হ্রাস পাবে ফলে সদরসহ বিরল দু’উপজেলার জনসাধারণের দীর্ঘদিনের কাঙ্খীত স্বপ্ন পূরণ হবে। বিভিন্ন এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দিনাজপুর পৌর এলাকাসহ দুই উপজেলার ৬টি ইউয়নের অনাকাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ হবে। এ ব্যাপারে বিরল উপজেলার ৮নং ধর্মপুর ইউনিয়নের আব্দুল মজিদ, আফজাল হোসেন, ১১ নং দক্ষিণ পলাশ ইউনিয়নের মিজান ও আব্দুল জব্বার, ৭নং বিজোড়া ইউনিয়নের সাদেকুল, দিনাজপুর সদরের ৬নং আউলিয়াপুর ইউনিয়নের সাহেব আলী, ৯নং আস্করপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়াসহ অনেকে জানান জাতীয় সংসদের হুইফ ইকবালুর রহিম এমপি’র পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে। এই প্রকল্পের ফলে অত্র এলাকায় জেলেরা মাছ চাষ করবে, কৃষকরা জমিতে অধিক ফসল ফলাবে, গ্রাম গুলোতে নলকূপের সুপেয় পানি পাবে, পাশাপাশি ব্রীজ নির্মানের কারণে বিরল ও সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসান জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২০ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু দেশের ভয়াবহ কোভিড – ১৯ ও আগাম বর্ষার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২১ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ জুন ২০২১ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি আরও জানান কাজ সম্পন্ন হলে দিনাজপুর সদর ও বিরল দু’ উপজেলার কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে ৪২০০ হেক্টর জমিতে সেচের মাধ্যমে অধিক ফসল উৎপাদন করার পাশাপাশি মাছ চাষ ও নলকূপ গুলোতে পানির সমস্যা দূরীকরন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। সর্বপরি পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষা হবে।