কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক থাকা কালীন তিনি বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিগত ম্যানেজিং কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি এ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহীন মুরাদ এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।
বিধি লঙ্গন করে বিনা কারণে বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ের নামের ব্যাংকের চলিত হিসাব থেকে তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করে বিভিন্ন সময় অর্থ উত্তোলন করেছেন। যার কোনো প্রকার ভাউচার ও ব্যায়ের ব্যাখ্যা রেজুলেশন খাতায় উল্লেখ নেই। উত্তোলিত ও দৈনিক কালেকশনের এ অর্থ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত ব্যায়ের কোনো খাতও দেখান নাই বলেও জানান,ম্যানেজিং কমিটির অন্যতম হেভিয়েট সদস্য নুরুচ্ছাপা। এ ধরণের মোটা অংকের অর্থ উত্তোলন করে খরচের খাত না দেখিয়ে বছরের পর বছর অর্থ লোপাট করার তথ্য প্রমাণ বর্তমান কমিটির হাতে রয়েছে বলেও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জানালেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিদ্যালয়ের কালেকশনের টাকা প্রতিনিয়ত ব্যাংকে জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্রায় সময় অফিস সহকারীর কাছ থেকে দৈনিক কালেকশনের টাকা ব্যাংক একাউন্টে জমা না দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বাসায় ফেরার সময় নিয়ে যেত। এ ছাড়া ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ও শিক্ষার্থী থেকে কালেকশন করা আয়ের এ যাবৎ ২৭ লক্ষ টাকার হিসেব দিতে পারেনি। এ পর্যন্ত আয়কৃত প্রায় ৯৫ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৫৯ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা দেখালেও ২৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ের কোন হিসাব দেখাতে পারে নি। এ ছাড়াও বিভিন্ন খাত থেকে আয়ের ১৪ লক্ষ টাকা ভূঁয়া বাউচার বানিয়ে আত্মসাৎ করেছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪১ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করায় ম্যানেজিং কমিটির সিদ্দান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাহিন মুরাদ জানালেন।
জানা গেছে,চকরিয়ার বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছার ২০১২ সালে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর ২০২২ সালের সেপ্টম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিগত কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত অর্থ ও বিভিন্ন খাতের আয় জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
এদিকে, ঐতিহ্যবাহী বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান অব্যাহত রাখার জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকান্ড চালিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের পদে ভার প্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব বিধিমোতাবেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের উপর বর্তায়। যার ফলে যোগদানের প্রেক্ষিতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোসলে উদ্দিন মেহেরী। তারই প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মোহাম্মদ মোসলে উদ্দিন মহেরীকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিনিয়র শিক্ষক ছিদ্দিক আহাম্মদ জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হয় না। আসলেও দুপূরে আসে বিরতির পরপরই বিদ্যালয় ত্যাগ করে চলে যান। বিগত বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের অনেকের বকেয়া বেতন প্রধান শিক্ষক নিজেই শ্রেণি কক্ষে গিয়ে আদায় করে বিদ্যালয়ের রসিদমূলে জমা দেয় নাই। এভাবে বছরের পর বছর অনিয়মভাবে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে নিলেও কোনো শিক্ষক মুখ খুলতে পারেনি তৎতকালীন ম্যানেজিং কমিটির ভয়ে। এবার বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির ন্যায় ও বলিষ্ট ভূমিকার জন্য বিদ্যালয়টি ঐতিহ্য ফিরে পাবে বলে আশা করছি।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক নুরুল আবছারের সাথে মুটো ফোনে যোগাযোগ করলে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ


























