১১:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন র‍্যাব

  • মাসুদ রানা
  • প্রকাশিত : ০৭:৪৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • 9

র‍্যাব-৩ গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় এবং নিলয়কে র্যাব ফোর্সেসের ডি-র্যাপিডক্যালাইজেশন সেলের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিলয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে গত ৫ অক্টোবর ২০২২ ইং কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া রিফাতসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন এর ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়,যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে দেশে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় যার নাম “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া”। দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ফোর্স এর আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন র্যাব ফোর্সেস গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন গত সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে অদ্যবধি বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ জন তরুণের মধ্যে ৪ জনসহ নুতন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৩৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সক্রিয় সদস্য এবং ২০২১ সাল থেকে এই জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা প্রদান এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ এর ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনটির আমীর মোঃ আনিসুর রহমান মাহমুদ নামক ব্যক্তি যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা যায়। এছাড়াও উগ্রবাদী এই সংগঠনে ৬ জন শূরা সদস্য রয়েছে যারা দাওয়াতী, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে। শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতী শাখার প্রধান, গ্রেফতারকৃত মাসুকুর রহমান রনবীর সামরিক শাখার প্রধান, ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার ২য় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন রাকিব অর্থ ও গনমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্তাবধানে এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছে। এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম এবং অপর আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লেঃ কর্নেল লালজং মুই মাওয়াইয়া এবং কথিত লেঃ কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল চির চির ময় এর সরাসরি তত্তাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এই তথ্য প্রাপ্তির পর বিভিন্ন সরকারী সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় র্যাব ফোর্সেস নব্য জঙ্গি সংগঠনের পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত জঙ্গি সদস্য এবং তাদের প্রশ্রয় প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান ও নজরদারি চলমান রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ ভোর ৫ ঘটিকায় র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৩ এবং র্যাব-১৫ এর যৌথ অভিযানে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ইয়াহিয়া গার্ডেন এর গহীন বনাঞ্চল এলাকা হতে উক্ত সংগঠনের সূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধানসহ ২ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মাসুকুর রহমান রনবীর মাসুদ (৪৪) ও মোঃ আবুল বাশার মৃধা আলম (৪৪)। উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১ টি বিদেশী পিস্তল, ৩ টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১টি ব্লা্ংক কার্টিজ, ০২টি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, ১ টি ব্লাংক কার্টিজ, ১০০ রাউন্ড .২২ বোরের গুলি, ১ টি মোবাইল, নগদ আড়াই লক্ষাধিক টাকা এবং পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও কন্টেন্ট। গত ২০ অক্টোবর ২০২২ তারিখে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পরিচালিত র্যাব অভিযানে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর সামরিক শাখার উপ-প্রধান মারুফ আহমেদ মানিকসহ ৭ জন জঙ্গি সদস্য ও ৩ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরবর্তীতে গত ২১ অক্টোবর ২০২২ তারিখে গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে মারুফসহ ৫ জনের রিমান্ড আবেদন করলে গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ বিজ্ঞ আদালত তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালীন জিজ্ঞাসাবাদে তারা সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান রনবীর এর কার্যক্রম ও বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। আভিযানিক ধারাবাহিকতায় র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান রনবীর মাসুদ এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মোঃ আবুল বাশার মৃধা আলম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-০৭ এর গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ ভোর ৫.ঘটিকা হতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৩ এবং র্যাব-১৫ এর যৌথ চিরুনী অভিযান শুরু করে। গ্রেফতারকৃত মাসুকুর রহমান রনবীর মাসুদ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর অন্যতম শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান। সে ২০০৭ সালের পূর্বে পোস্ট অফিসে চাকুরী করত এবং চাকুরীর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরবর্তীতে ডাকাতি মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করে। কারাগারে থাকাকালীন সময় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সাথে তার সাক্ষাত হয় এবং একপর্যায়ে সে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর সে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ২০১৭ সালে জামাতুল আনসার এর শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সাথে তার পরিচয় হয় এবং সে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করে। এছাড়াও, সে সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্তাবধান করত।এছাড়াও ২০২১ সালে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ সেন্টারের সাথে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চুক্তিপত্র স্বাক্ষরকালীন বৈঠকে রনবীরসহ অন্যান্য শূরা সদস্যরাও উপস্থিত ছিল এবং ঐ বৈঠকে গ্রেফতারকৃত রনবীর পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের রুপরেখা নির্ধারণ করে। তার সামরিক কার্যক্রমের দুটি শাখা ছিল, যার একটি পাহাড়ে এবং অপরটি সমতলে। সমতলে সামরিক শাখার কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হত। পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে সে সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করে এবং কিছুদিন পূর্বে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে। গ্রেফতারকৃত আবুল বাশার মৃধা আলম হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা হতে পড়াশোনা করে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত। তার সাংগঠনিক নাম আলম। নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকায় আবুল বাশার এর নাম রয়েছে। আবুল বাশার মৃধা দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি’র সাথে জড়িত ছিল। সে হুজি সংগঠনে থাকাকালীন সময়ে ঝালকাঠির নলসিটি এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের জন্য দায়েরকৃত নাশকতার মামলায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে। ২০১৬-১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারের আমীর মাহমুদের মাধ্যমে জামাতুল আনসারে যোগ দেয়। সে আইইডিসহ বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরিতে দক্ষ ছিল। সে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিকট হতে বোমা তৈরির বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। জামাতুল আনসারের পাহাড়ে প্রশিক্ষণার্থীদের সে বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করত। বয়সে বড় হওয়ার কারণে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী বৈঠকে যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত।উক্ত মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগ করে। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেঃকর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ফারজানা হক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) র্যাব-৩।

ট্যাগ :

পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন র‍্যাব

প্রকাশিত : ০৭:৪৫:৩০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৩

র‍্যাব-৩ গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় এবং নিলয়কে র্যাব ফোর্সেসের ডি-র্যাপিডক্যালাইজেশন সেলের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিলয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে গত ৫ অক্টোবর ২০২২ ইং কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া রিফাতসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন এর ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়,যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে দেশে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় যার নাম “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া”। দুপুরে কাওরানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ফোর্স এর আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন র্যাব ফোর্সেস গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন গত সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে অদ্যবধি বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৮ জন তরুণের মধ্যে ৪ জনসহ নুতন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৩৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সক্রিয় সদস্য এবং ২০২১ সাল থেকে এই জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা প্রদান এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ এর ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনটির আমীর মোঃ আনিসুর রহমান মাহমুদ নামক ব্যক্তি যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা যায়। এছাড়াও উগ্রবাদী এই সংগঠনে ৬ জন শূরা সদস্য রয়েছে যারা দাওয়াতী, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছে। শূরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতী শাখার প্রধান, গ্রেফতারকৃত মাসুকুর রহমান রনবীর সামরিক শাখার প্রধান, ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার ২য় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন রাকিব অর্থ ও গনমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্তাবধানে এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছে। এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ জন সদস্যকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম এবং অপর আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লেঃ কর্নেল লালজং মুই মাওয়াইয়া এবং কথিত লেঃ কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল চির চির ময় এর সরাসরি তত্তাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় দিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এই তথ্য প্রাপ্তির পর বিভিন্ন সরকারী সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় র্যাব ফোর্সেস নব্য জঙ্গি সংগঠনের পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত জঙ্গি সদস্য এবং তাদের প্রশ্রয় প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান ও নজরদারি চলমান রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ ভোর ৫ ঘটিকায় র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৩ এবং র্যাব-১৫ এর যৌথ অভিযানে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন ইয়াহিয়া গার্ডেন এর গহীন বনাঞ্চল এলাকা হতে উক্ত সংগঠনের সূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধানসহ ২ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন মাসুকুর রহমান রনবীর মাসুদ (৪৪) ও মোঃ আবুল বাশার মৃধা আলম (৪৪)। উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১ টি বিদেশী পিস্তল, ৩ টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ১টি ব্লা্ংক কার্টিজ, ০২টি একনলা বন্দুক, ১১টি ১২ বোরের কার্তুজ, ১ টি ব্লাংক কার্টিজ, ১০০ রাউন্ড .২২ বোরের গুলি, ১ টি মোবাইল, নগদ আড়াই লক্ষাধিক টাকা এবং পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও কন্টেন্ট। গত ২০ অক্টোবর ২০২২ তারিখে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে পরিচালিত র্যাব অভিযানে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর সামরিক শাখার উপ-প্রধান মারুফ আহমেদ মানিকসহ ৭ জন জঙ্গি সদস্য ও ৩ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। পরবর্তীতে গত ২১ অক্টোবর ২০২২ তারিখে গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ১২ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ বিজ্ঞ আদালতে মারুফসহ ৫ জনের রিমান্ড আবেদন করলে গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ বিজ্ঞ আদালত তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড চলাকালীন জিজ্ঞাসাবাদে তারা সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান রনবীর এর কার্যক্রম ও বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। আভিযানিক ধারাবাহিকতায় র্যাব গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, জঙ্গি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান রনবীর মাসুদ এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মোঃ আবুল বাশার মৃধা আলম কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-০৭ এর গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখ ভোর ৫.ঘটিকা হতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-২ ও র্যাব-৩ এবং র্যাব-১৫ এর যৌথ চিরুনী অভিযান শুরু করে। গ্রেফতারকৃত মাসুকুর রহমান রনবীর মাসুদ ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর অন্যতম শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান। সে ২০০৭ সালের পূর্বে পোস্ট অফিসে চাকুরী করত এবং চাকুরীর পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করত। পরবর্তীতে ডাকাতি মামলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করে। কারাগারে থাকাকালীন সময় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সাথে তার সাক্ষাত হয় এবং একপর্যায়ে সে জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর সে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ২০১৭ সালে জামাতুল আনসার এর শূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সাথে তার পরিচয় হয় এবং সে প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করে। এছাড়াও, সে সিলেট অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমসহ সামরিক শাখার সদস্য নির্বাচন কার্যক্রম তত্তাবধান করত।এছাড়াও ২০২১ সালে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণ সেন্টারের সাথে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র চুক্তিপত্র স্বাক্ষরকালীন বৈঠকে রনবীরসহ অন্যান্য শূরা সদস্যরাও উপস্থিত ছিল এবং ঐ বৈঠকে গ্রেফতারকৃত রনবীর পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের রুপরেখা নির্ধারণ করে। তার সামরিক কার্যক্রমের দুটি শাখা ছিল, যার একটি পাহাড়ে এবং অপরটি সমতলে। সমতলে সামরিক শাখার কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হত। পাহাড়ে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে সে সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আত্মগোপন করে এবং কিছুদিন পূর্বে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করে। গ্রেফতারকৃত আবুল বাশার মৃধা আলম হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা হতে পড়াশোনা করে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করত। তার সাংগঠনিক নাম আলম। নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকায় আবুল বাশার এর নাম রয়েছে। আবুল বাশার মৃধা দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজি’র সাথে জড়িত ছিল। সে হুজি সংগঠনে থাকাকালীন সময়ে ঝালকাঠির নলসিটি এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের জন্য দায়েরকৃত নাশকতার মামলায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে। ২০১৬-১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারের আমীর মাহমুদের মাধ্যমে জামাতুল আনসারে যোগ দেয়। সে আইইডিসহ বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরিতে দক্ষ ছিল। সে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিকট হতে বোমা তৈরির বিষয়ে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। জামাতুল আনসারের পাহাড়ে প্রশিক্ষণার্থীদের সে বিভিন্ন ধরণের বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করত। বয়সে বড় হওয়ার কারণে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী বৈঠকে যেকোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত।উক্ত মামলায় সে একাধিকবার কারাভোগ করে। আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেঃকর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ফারজানা হক সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) র্যাব-৩।