১০:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

দশ কোটি টাকার সম্পদ লুটের অভিযোগ-আতংকে জনশূন্য গ্রাম

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর গ্রামে জমি বন্ধকের টাকা চাওয়াকে কেন্দ্রকরে দুপক্ষের সংঘর্ষে আব্দুর রাজ্জাক (৪২) নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গত ২ ফেব্রুয়ারী। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে ওই দিন ২১ জনকে আসামী করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে এলাকার একটি তৃতীয় পক্ষ তাদের পূর্ব শত্রæতার জের ধরে এলাকার হাজীপাড়ার নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের প্রায় ৫০টি পাকা, সেমি পাকা বসতবাড়ী, ঘরের খাট, সোফা, টিভি, ফ্রিজ, ট্রাক্টর, আসবাব পত্র, স্বর্ণালংকার, মাঠের সরিষা, পিঁয়াজ, কলাবাগান, খেসারী, ইরি ধানের চারা, প্রায় ৮৫ টি বড় ষাড় ও গাভী গরু, ৯০টি ছাগল, ১ শত ৫০ টি ভেড়া লুট এবং আসবাবপত্র ভাংচুর, বসত ঘরে ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়াসহ মাত্র ১০ দিনে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ লুট ও বিনষ্ট করেছে।

এমন প্রাগৈতিহাসিক ঘটনায় হামলাকারীদের হাত থেকে নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, যুবতীরাও রেহাই পাচ্ছে না। তাদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে সকলে। জনশুন্য শুনশান এলাকাতে পরিণত হয়েছে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর, হাজীপাড়াসহ আশপাশের এলাকা। এ সব বিষয়ে আইনশৃংখলাবাহিনীর কাছে কয়েক দফা নিরাপত্তা চেয়েও কোন লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের সদস্যরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতা মেম্বার প্রার্থী ছিলেন একই এলাকার আবুল কাশেম। তার নানা অপকর্মের কারণে তাকে পরাজিত করে এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তি এলাকার কৃষক মকবুল বিশ্বাসের পুত্র সজিব বিশ্বাস ওরফে সবুজ জনধারণের ভোটে বিজয়ী হয়। এ ঘটনায় পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ও সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম প্রামাণিক প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে ওঠে এবং চরজগন্নাথপুরের হাজী পাড়া ও পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে সবুজ মেম্বার ও তার জ্ঞাতী গোষ্ঠিকে নিঃশেষ করতে মনে মনে ফন্দি আটেন।

এদিকে পাওনা টাকা নিয়ে ঘটনার দিন ২ ফেব্রæয়ারি ২০২৩, দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ে উভয়পক্ষ (জাবেদ আলী মেম্বার বনাম জহুরুল)। এসময় উভয় পক্ষই দেশীয় ধারালো অস্ত্র, হাসুয়া, ফালা, সড়কি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সংঘর্ষে পড়ে গিয়ে ফালার আঘাতে ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক নিহত হয়। নিহতের চাচা জাবেদ মেম্বার আহত হয়। এদিকে সংঘর্ষের দিন দুই পক্ষকে এমন প্রাণঘাতি সংঘর্ষ এড়াতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বয়োবৃদ্ধ ইদ্রিস আলী বিশ্বাস, মসজিদের ইমাম ও খামার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম, মকবুল হোসেন বিশ্বাস, আনিসসহ এলাকার কয়েকজন শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের অনুরোধ জানায়। হত্যার পরে গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।

সেই সুযোগে সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম প্রামাণিক পূর্ব শত্রæার জেরে পরিকল্পিতভাবে লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানান সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ড অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। তার নেতৃত্বে এলাকার বিশ^াস ( একাংশ) ও প্রামানিক গোষ্ঠী প্রায় ১শ হামলাকারীরা গত ১০ দিন যাবত হাজী পাড়ার আকরাম বিশ্বাস, মকবুল বিশ্বাস , মৃত রমজান আলী বিশ্বাস, ইদ্রিস আলী বিশ্বাস,সবুজ বিশ্বাস প্রমুখ সহ আরো প্রায় ৫০টি পরিবারের বসত ঘর, গবাদি পশু, পাকা ঘর, মাঠের ফসলের উপর দফায় দফায় হামলা করে তাদের প্রায় ১০ কোটি বা তার ও বেশি টাকার সম্পদ লুট ও বিনষ্ট করেছে। তাদের ভয়ে উক্ত এলাকার শতাধিক পরিবারের পুরুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর এখন ঘর ছাড়া হওয়ায় এলাকাটি জনশুন্যে পরিণত হয়েছে। রাতের আধাঁরে হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশ ও হামলাকারীদের এলাকায় এখন অবাধ বিচরণ।

এ অবস্থায় নিরাপত্তা চেয়ে আক্কাচ আলী বিশ্বাসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ্য করে কুমারখালী থানায় ক্ষতিগ্রস্থ্য মকবুল বিশ্বাস একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এদিকে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মহসীন হুসাইনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখানে তৃতীয় একটি পক্ষ এসব অপকর্ম করছে। ঘটনার সময় যারা এখন অভিযোগ করছে তাদেরকে আমরা বলেছিলাম আপনাদের বাড়ী, গবাদি পশু, মাঠের ফসলের কি নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রতি উত্তরে তারা বলেছিল আমরা সময়মত সরিয়ে ফেলবো। হাতে গোনা কয়েকজন ফোর্স নিয়ে এলাকায় মুভ করাটা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও বিষয়টি আমরা গুরুত্বর সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেব। এলাকায় যাতে কোন প্রকার বিশৃংখলা না হয় সে বিষয়টিও নজরে রাখবো বলে তিনি জানান।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

দশ কোটি টাকার সম্পদ লুটের অভিযোগ-আতংকে জনশূন্য গ্রাম

প্রকাশিত : ০৩:০৭:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর গ্রামে জমি বন্ধকের টাকা চাওয়াকে কেন্দ্রকরে দুপক্ষের সংঘর্ষে আব্দুর রাজ্জাক (৪২) নামে এক ওষুধ ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গত ২ ফেব্রুয়ারী। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে ওই দিন ২১ জনকে আসামী করে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিকে এ হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে এলাকার একটি তৃতীয় পক্ষ তাদের পূর্ব শত্রæতার জের ধরে এলাকার হাজীপাড়ার নিরীহ, নিরপরাধ মানুষের প্রায় ৫০টি পাকা, সেমি পাকা বসতবাড়ী, ঘরের খাট, সোফা, টিভি, ফ্রিজ, ট্রাক্টর, আসবাব পত্র, স্বর্ণালংকার, মাঠের সরিষা, পিঁয়াজ, কলাবাগান, খেসারী, ইরি ধানের চারা, প্রায় ৮৫ টি বড় ষাড় ও গাভী গরু, ৯০টি ছাগল, ১ শত ৫০ টি ভেড়া লুট এবং আসবাবপত্র ভাংচুর, বসত ঘরে ভেঙ্গে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়াসহ মাত্র ১০ দিনে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ লুট ও বিনষ্ট করেছে।

এমন প্রাগৈতিহাসিক ঘটনায় হামলাকারীদের হাত থেকে নারী, পুরুষ, শিশু, যুবক, যুবতীরাও রেহাই পাচ্ছে না। তাদের ভয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে সকলে। জনশুন্য শুনশান এলাকাতে পরিণত হয়েছে জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর জগন্নাথপুর, হাজীপাড়াসহ আশপাশের এলাকা। এ সব বিষয়ে আইনশৃংখলাবাহিনীর কাছে কয়েক দফা নিরাপত্তা চেয়েও কোন লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবারের সদস্যরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতা মেম্বার প্রার্থী ছিলেন একই এলাকার আবুল কাশেম। তার নানা অপকর্মের কারণে তাকে পরাজিত করে এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তি এলাকার কৃষক মকবুল বিশ্বাসের পুত্র সজিব বিশ্বাস ওরফে সবুজ জনধারণের ভোটে বিজয়ী হয়। এ ঘটনায় পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ও সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম প্রামাণিক প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে ওঠে এবং চরজগন্নাথপুরের হাজী পাড়া ও পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে সবুজ মেম্বার ও তার জ্ঞাতী গোষ্ঠিকে নিঃশেষ করতে মনে মনে ফন্দি আটেন।

এদিকে পাওনা টাকা নিয়ে ঘটনার দিন ২ ফেব্রæয়ারি ২০২৩, দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ে উভয়পক্ষ (জাবেদ আলী মেম্বার বনাম জহুরুল)। এসময় উভয় পক্ষই দেশীয় ধারালো অস্ত্র, হাসুয়া, ফালা, সড়কি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সংঘর্ষে পড়ে গিয়ে ফালার আঘাতে ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক নিহত হয়। নিহতের চাচা জাবেদ মেম্বার আহত হয়। এদিকে সংঘর্ষের দিন দুই পক্ষকে এমন প্রাণঘাতি সংঘর্ষ এড়াতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বয়োবৃদ্ধ ইদ্রিস আলী বিশ্বাস, মসজিদের ইমাম ও খামার ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম, মকবুল হোসেন বিশ্বাস, আনিসসহ এলাকার কয়েকজন শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের অনুরোধ জানায়। হত্যার পরে গ্রেফতার আতঙ্কে পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।

সেই সুযোগে সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম প্রামাণিক পূর্ব শত্রæার জেরে পরিকল্পিতভাবে লুটপাট, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানান সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ড অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। তার নেতৃত্বে এলাকার বিশ^াস ( একাংশ) ও প্রামানিক গোষ্ঠী প্রায় ১শ হামলাকারীরা গত ১০ দিন যাবত হাজী পাড়ার আকরাম বিশ্বাস, মকবুল বিশ্বাস , মৃত রমজান আলী বিশ্বাস, ইদ্রিস আলী বিশ্বাস,সবুজ বিশ্বাস প্রমুখ সহ আরো প্রায় ৫০টি পরিবারের বসত ঘর, গবাদি পশু, পাকা ঘর, মাঠের ফসলের উপর দফায় দফায় হামলা করে তাদের প্রায় ১০ কোটি বা তার ও বেশি টাকার সম্পদ লুট ও বিনষ্ট করেছে। তাদের ভয়ে উক্ত এলাকার শতাধিক পরিবারের পুরুষ, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর এখন ঘর ছাড়া হওয়ায় এলাকাটি জনশুন্যে পরিণত হয়েছে। রাতের আধাঁরে হাতে গোনা কয়েকজন পুলিশ ও হামলাকারীদের এলাকায় এখন অবাধ বিচরণ।

এ অবস্থায় নিরাপত্তা চেয়ে আক্কাচ আলী বিশ্বাসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখ্য করে কুমারখালী থানায় ক্ষতিগ্রস্থ্য মকবুল বিশ্বাস একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এদিকে কুমারখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মহসীন হুসাইনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখানে তৃতীয় একটি পক্ষ এসব অপকর্ম করছে। ঘটনার সময় যারা এখন অভিযোগ করছে তাদেরকে আমরা বলেছিলাম আপনাদের বাড়ী, গবাদি পশু, মাঠের ফসলের কি নিরাপত্তা দিতে হবে। প্রতি উত্তরে তারা বলেছিল আমরা সময়মত সরিয়ে ফেলবো। হাতে গোনা কয়েকজন ফোর্স নিয়ে এলাকায় মুভ করাটা অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও বিষয়টি আমরা গুরুত্বর সাথে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেব। এলাকায় যাতে কোন প্রকার বিশৃংখলা না হয় সে বিষয়টিও নজরে রাখবো বলে তিনি জানান।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব