০৫:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

পাঁচ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল

স্মরণকালের (২০১০ সালের) ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। তিন বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে পাঁচ লাখের বেশি বিও অ্যাকাউন্ট। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার তথ্য সংরক্ষণকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সে সঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালের জুনে মোট বিওর সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ চার হাজার ৬০২টি। ২০১৬-এর জুনে এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪১টিতে। সর্বশেষ ২০১৭-এর জুনে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৬৯ হাজার ৭৬৫টিতে। ২০১৮তে যা নেমে আসে ২৭ লাখ ১৪ হাজার ১৪টিতে। মূলত পুঁজিবাজারে আইপিও প্রবাহ কমে যাওয়ায় বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। তথ্যমতে, যেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে, এর উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই প্রাইমারি মার্কেট বা আইপিওতে আবেদনধারী। এছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেটে সুবিধা করতে না পেরে পুঁজিবাজার ছেড়ে গেছেন অনেকেই। স্বল্পসংখ্যক শেয়ারধারী অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন।

শুধু এ বছরই বিও ফি না দেওয়ায় ৭৪ হাজার বিও হিসাব বাতিল হয়েছে। সূত্র জানায়, বাতিল হওয়া বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা আরও বাড়ছে। কারণ এখনও সব হাউজ থেকে বাতিল অ্যাকাউন্টের হিসাব পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর প্রধানত দুই কারণে অসংখ্য বিও বাতিল হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি; অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া। তবে এ বছর বিও বাতিল হওয়ার জন্য প্রাইমারি মার্কেটের নাজুক পরিস্থিতিকেই দায়ী করেন তারা। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, যেসব অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়েছে, তার বেশিরভাগই প্রাইমারি মার্কেটে আবেদনের জন্য খোলা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আইপিওতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে; সে জন্য অনেকে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা প্রতি বছরই হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। নিয়ম অনুযায়ী জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব বন্ধ হয় না।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

প্রতি বছরের মতো এবারও বিও নবায়নের শেষ সময় ছিল ৩০ জুন। সর্বশেষ দেশের পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ১৪ হাজার ১৪টি। বর্তমানে সচল বিও’র মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী ২৫ লাখ ৩০ হাজার ১৭৭টি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক লাখ ৫৯ হাজার ২৩৬টি এবং বিভিন্ন কোম্পানির ১২ হাজার একটি। এদিকে সচল বিও’র মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫৫ এবং নারীদের বিও রয়েছে সাত লাখ ১৫ হাজার ৭৫৮টি।

ট্যাগ :

বরিশালে পেশাদার সাংবাদিকদের ৩৫ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

পাঁচ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট বাতিল

প্রকাশিত : ১০:১৯:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ জুলাই ২০১৮

স্মরণকালের (২০১০ সালের) ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। তিন বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে পাঁচ লাখের বেশি বিও অ্যাকাউন্ট। ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার তথ্য সংরক্ষণকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা পরিস্থিতি, সে সঙ্গে আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালের জুনে মোট বিওর সংখ্যা ছিল ৩২ লাখ চার হাজার ৬০২টি। ২০১৬-এর জুনে এসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪১টিতে। সর্বশেষ ২০১৭-এর জুনে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখ ৬৯ হাজার ৭৬৫টিতে। ২০১৮তে যা নেমে আসে ২৭ লাখ ১৪ হাজার ১৪টিতে। মূলত পুঁজিবাজারে আইপিও প্রবাহ কমে যাওয়ায় বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। তথ্যমতে, যেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে, এর উল্লেখযোগ্যসংখ্যকই প্রাইমারি মার্কেট বা আইপিওতে আবেদনধারী। এছাড়া সেকেন্ডারি মার্কেটে সুবিধা করতে না পেরে পুঁজিবাজার ছেড়ে গেছেন অনেকেই। স্বল্পসংখ্যক শেয়ারধারী অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন।

শুধু এ বছরই বিও ফি না দেওয়ায় ৭৪ হাজার বিও হিসাব বাতিল হয়েছে। সূত্র জানায়, বাতিল হওয়া বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা আরও বাড়ছে। কারণ এখনও সব হাউজ থেকে বাতিল অ্যাকাউন্টের হিসাব পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতি বছর প্রধানত দুই কারণে অসংখ্য বিও বাতিল হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি; অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া। তবে এ বছর বিও বাতিল হওয়ার জন্য প্রাইমারি মার্কেটের নাজুক পরিস্থিতিকেই দায়ী করেন তারা। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট রকিবুর রহমান বলেন, যেসব অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়েছে, তার বেশিরভাগই প্রাইমারি মার্কেটে আবেদনের জন্য খোলা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আইপিওতে প্রতিযোগিতা বেড়েছে; সে জন্য অনেকে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন। এটা প্রতি বছরই হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। নিয়ম অনুযায়ী জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব বন্ধ হয় না।

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময় নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।

প্রতি বছরের মতো এবারও বিও নবায়নের শেষ সময় ছিল ৩০ জুন। সর্বশেষ দেশের পুঁজিবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ১৪ হাজার ১৪টি। বর্তমানে সচল বিও’র মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারী ২৫ লাখ ৩০ হাজার ১৭৭টি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক লাখ ৫৯ হাজার ২৩৬টি এবং বিভিন্ন কোম্পানির ১২ হাজার একটি। এদিকে সচল বিও’র মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫৫ এবং নারীদের বিও রয়েছে সাত লাখ ১৫ হাজার ৭৫৮টি।