০২:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জীববৈচিত্র্য-পরিবেশ সুরক্ষায় আইনের প্রয়োগ চায় টিআইবি

বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন তথা সার্বিকভাবে প্রাণ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য-পরিবেশের সুরক্ষার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা, বিশেষ করে পরিবেশ আইনের কার্যকর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস সামনে রেখে সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আজ বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ আহ্বান জানায়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইনি কাঠামোর যথাযথ প্রয়োগে ঘাটতির কারণে জীববৈচিত্র্য যেমন লোপ পাচ্ছে, তেমনি পরিবেশ দূষণ আশংকাজনকভাবে বাড়ছে।

তিনি বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি, বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের প্রভাবনির্ভর সিদ্ধান্ত, দুর্বল তদারকি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়েছে। বন ও জলাশয় দখল বেড়েছে; প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ক্রামাগত চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি জবরদখলের শিকার।

‘ক্রমবর্ধমান ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে বন্যপ্রাণীর ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ আরো প্রায় ৩০টি প্রজাতির অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে রয়েছে। বনকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য যা অশনিসংকেত।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরামর্শ এবং প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সন্নিকটে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অন্যতম নিয়ামক এ প্রাকৃতিক রক্ষাকবচকে স্থায়ীভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে। অথচ সুন্দরবন যেমন সমৃদ্ধ জীবজগতকে ধারণ করে প্রাণ ও প্রকৃতির রসদ যোগাচ্ছে, তেমনি সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ফনীসহ সবশেষ আম্ফানের তাণ্ডব থেকে উপকূলের অজস্র মানুষের জীবন ও জীবিকাকে সুরক্ষা দিয়েছে।

আমাদের একটাই সুন্দরবন; এই সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে- উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা- বিশেষ করে সুন্দরবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার কারণে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সুন্দরবনসহ অন্য পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও নির্মাণাধীনসহ সব শিল্প-কারখানা বন্ধ করার দাবি করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষা প্রদানকারী বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পরিবেশ আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিজনেস বাংলাদেশ/ শেখ

জনপ্রিয়

ঢাকা কলেজের পুকুরে গোসল করতে নেমে মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু

জীববৈচিত্র্য-পরিবেশ সুরক্ষায় আইনের প্রয়োগ চায় টিআইবি

প্রকাশিত : ০৯:০৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ জুন ২০২০

বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবন তথা সার্বিকভাবে প্রাণ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য-পরিবেশের সুরক্ষার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা, বিশেষ করে পরিবেশ আইনের কার্যকর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস সামনে রেখে সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আজ বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি এ আহ্বান জানায়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষায় বিদ্যমান আইনি কাঠামোর যথাযথ প্রয়োগে ঘাটতির কারণে জীববৈচিত্র্য যেমন লোপ পাচ্ছে, তেমনি পরিবেশ দূষণ আশংকাজনকভাবে বাড়ছে।

তিনি বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি, বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের প্রভাবনির্ভর সিদ্ধান্ত, দুর্বল তদারকি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়েছে। বন ও জলাশয় দখল বেড়েছে; প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর ক্রামাগত চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি, পানি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ১৬ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। যার মধ্যে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১ হেক্টর বনভূমি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২ লাখ ৬৮ হাজার ২৫৬ একর বনভূমি জবরদখলের শিকার।

‘ক্রমবর্ধমান ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বনভূমি ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে বন্যপ্রাণীর ৩৯টি প্রজাতি বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ আরো প্রায় ৩০টি প্রজাতির অস্তিত্ব মারাত্মক সংকটে রয়েছে। বনকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও বাস্তুসংস্থানের জন্য যা অশনিসংকেত।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরামর্শ এবং প্রতিবাদ উপেক্ষা করে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সন্নিকটে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অন্যতম নিয়ামক এ প্রাকৃতিক রক্ষাকবচকে স্থায়ীভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে। অথচ সুন্দরবন যেমন সমৃদ্ধ জীবজগতকে ধারণ করে প্রাণ ও প্রকৃতির রসদ যোগাচ্ছে, তেমনি সাম্প্রতিককালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ফনীসহ সবশেষ আম্ফানের তাণ্ডব থেকে উপকূলের অজস্র মানুষের জীবন ও জীবিকাকে সুরক্ষা দিয়েছে।

আমাদের একটাই সুন্দরবন; এই সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে- উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা- বিশেষ করে সুন্দরবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলার কারণে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বড় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সুন্দরবনসহ অন্য পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও নির্মাণাধীনসহ সব শিল্প-কারখানা বন্ধ করার দাবি করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষা প্রদানকারী বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে পরিবেশ আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিজনেস বাংলাদেশ/ শেখ