০৩:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৯৫ হেক্টর জমিতে নাগা মরিচ চাষ

মাঝারি আকৃতির গাছে ঝুলছে চ্যাপ্টানো মরিচ। কোনোটা সবুজ কোনোটা টকটকে লাল। দেখতে সত্যি সুন্দর। নাম নাগামরিচ। তীব্র ঝালের জন্য বিখ্যাত। এর ঝাল এতটাই তীব্র যে সাধারণ মানুষ না জেনে মুখে দিলে পড়তে পারেন বিপদে। পরিমাণ বুঝে খেতে হয় এ মরিচ। তবে নাগাপ্রেমীদের কথা অবশ্য ভিন্ন। তাদের আবার নিজের খাবার থালে এক টুকরো নাগা থাকা চাই! তাতেই সফল হয় তাদের ভোজ। নাগামরিচ তীব্র ঝালযুক্ত হলেও এর ঘ্রাণে রয়েছে সুগন্ধী। আন্তর্জাতিকভাবেও এর ঝালের তীব্রতার কারণে এ ফসলটি তার আপন সম্মাননা অর্জন করেছে। ২০০৭ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ সাধারণ মরিচের চেয়ে বহুগুণ বেশি ঝাল প্রমাণিত হওয়ায় নাগা মরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সিলেট অঞ্চলে এটিকে নাগামরিচ বলে। তবে অঞ্চল ভেদে নাগা মরিচের ভিন্ন নামও রয়েছে। সেই নামগুলো হলো- বোম্বাই মরিচ, ফোটকা মরিচ। বর্তমানে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এই ফসলটি অধিক পরিমাণে উৎপাদন করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিরা অন্য ফসলের পাশাপাশি ব্যস্ত রয়েছে নাগামরিচ চাষে। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় ছোট-বড় অনেক চাষি এখন নাগামরিচের চাষ করে। এই মরিচ বাণিজ্যিকভাবে এখন চাষ করা হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলাজুড়ে। ফলে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা নাগামরিচ চাষে হয়ে উঠেছেন আগ্রহী। উপজেলার দিলবরনগর, মোহাজেরাবাদ, বিষামনি, রাধানগর এবং ডলুছড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নাগামরিচ চাষে। রাধানগর এলাকার নাগামরিচ চাষি নূরুল ইসলাম বলেন, একটি লেবু গাছের পাশে একটি করে নাগামরিচসহ মোট জমিতে প্রায় তিন হাজার নাগামরিচ গাছ লাগিয়েছি। তবে কিছু গাছ পুরোপুরি কখনোই টেকে না। নানা কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। চারা বেশি নষ্ট হয় বৃষ্টিপাতের ফলে। আশা করছি আমার তিন হাজার গাছ থেকে অন্তত দুই হাজার গাছ টিকবে। এ কৃষক আরো বলেন, প্রতি পিস নাগার নাম একটাকা থেকে দেড় টাকা। আর বাজার ভালো থাকলে প্রতি পিস নাগার দাম পড়ে ২ থেকে ৩ টাকা। গাছগুলো ভালোভাবে পরিচর্যাসহ প্রযোজনীয় সার ও কীটনাশক দিলে একেকটি গাছে এক মৌসুমে প্রায় ২ থেকে ৪শ মরিচ ধরে। আর সাধারণভাবে অপেক্ষাকৃত যত্ন কম হলে এক মৌসুমে গাছপ্রতি ৫০ থেকে ৬০টি মরিচ ধরে। অনেক বেশি পরিচর্যা করতে হয়। ১০ কেয়ার (বিঘা) জমিতে রোপণ করা দুই হাজার নাগামরিচের গাছ থেকে এক মৌসুমে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান কৃষক নূরুল। শ্রীমঙ্গল উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শিপন মিয়া বলেন, নাগামরিচ এককভাবে জমিতে চাষ করা হয় না। এটি অন্য ফসলের সঙ্গে অবশিষ্ট জায়গায় চাষ করা হয় বলে এ ফসলটির নাম ‘সাথী ফসল’। লাগানোর তিন মাসের মধ্যে ফলন ধরে। বিশেষ করে লেবু গাছের নিচে এ ফসলের চাষ বেশি করা হয়। সমগ্র উপজেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা নাগামরিচ চাষ করছেন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

৯৫ হেক্টর জমিতে নাগা মরিচ চাষ

প্রকাশিত : ১২:০১:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

মাঝারি আকৃতির গাছে ঝুলছে চ্যাপ্টানো মরিচ। কোনোটা সবুজ কোনোটা টকটকে লাল। দেখতে সত্যি সুন্দর। নাম নাগামরিচ। তীব্র ঝালের জন্য বিখ্যাত। এর ঝাল এতটাই তীব্র যে সাধারণ মানুষ না জেনে মুখে দিলে পড়তে পারেন বিপদে। পরিমাণ বুঝে খেতে হয় এ মরিচ। তবে নাগাপ্রেমীদের কথা অবশ্য ভিন্ন। তাদের আবার নিজের খাবার থালে এক টুকরো নাগা থাকা চাই! তাতেই সফল হয় তাদের ভোজ। নাগামরিচ তীব্র ঝালযুক্ত হলেও এর ঘ্রাণে রয়েছে সুগন্ধী। আন্তর্জাতিকভাবেও এর ঝালের তীব্রতার কারণে এ ফসলটি তার আপন সম্মাননা অর্জন করেছে। ২০০৭ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ সাধারণ মরিচের চেয়ে বহুগুণ বেশি ঝাল প্রমাণিত হওয়ায় নাগা মরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সিলেট অঞ্চলে এটিকে নাগামরিচ বলে। তবে অঞ্চল ভেদে নাগা মরিচের ভিন্ন নামও রয়েছে। সেই নামগুলো হলো- বোম্বাই মরিচ, ফোটকা মরিচ। বর্তমানে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় এই ফসলটি অধিক পরিমাণে উৎপাদন করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলের চাষিরা অন্য ফসলের পাশাপাশি ব্যস্ত রয়েছে নাগামরিচ চাষে। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় ছোট-বড় অনেক চাষি এখন নাগামরিচের চাষ করে। এই মরিচ বাণিজ্যিকভাবে এখন চাষ করা হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলাজুড়ে। ফলে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন অঞ্চলের চাষিরা নাগামরিচ চাষে হয়ে উঠেছেন আগ্রহী। উপজেলার দিলবরনগর, মোহাজেরাবাদ, বিষামনি, রাধানগর এবং ডলুছড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নাগামরিচ চাষে। রাধানগর এলাকার নাগামরিচ চাষি নূরুল ইসলাম বলেন, একটি লেবু গাছের পাশে একটি করে নাগামরিচসহ মোট জমিতে প্রায় তিন হাজার নাগামরিচ গাছ লাগিয়েছি। তবে কিছু গাছ পুরোপুরি কখনোই টেকে না। নানা কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়ে যায়। চারা বেশি নষ্ট হয় বৃষ্টিপাতের ফলে। আশা করছি আমার তিন হাজার গাছ থেকে অন্তত দুই হাজার গাছ টিকবে। এ কৃষক আরো বলেন, প্রতি পিস নাগার নাম একটাকা থেকে দেড় টাকা। আর বাজার ভালো থাকলে প্রতি পিস নাগার দাম পড়ে ২ থেকে ৩ টাকা। গাছগুলো ভালোভাবে পরিচর্যাসহ প্রযোজনীয় সার ও কীটনাশক দিলে একেকটি গাছে এক মৌসুমে প্রায় ২ থেকে ৪শ মরিচ ধরে। আর সাধারণভাবে অপেক্ষাকৃত যত্ন কম হলে এক মৌসুমে গাছপ্রতি ৫০ থেকে ৬০টি মরিচ ধরে। অনেক বেশি পরিচর্যা করতে হয়। ১০ কেয়ার (বিঘা) জমিতে রোপণ করা দুই হাজার নাগামরিচের গাছ থেকে এক মৌসুমে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান কৃষক নূরুল। শ্রীমঙ্গল উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. শিপন মিয়া বলেন, নাগামরিচ এককভাবে জমিতে চাষ করা হয় না। এটি অন্য ফসলের সঙ্গে অবশিষ্ট জায়গায় চাষ করা হয় বলে এ ফসলটির নাম ‘সাথী ফসল’। লাগানোর তিন মাসের মধ্যে ফলন ধরে। বিশেষ করে লেবু গাছের নিচে এ ফসলের চাষ বেশি করা হয়। সমগ্র উপজেলায় ৯৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা নাগামরিচ চাষ করছেন।