০৯:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

বিপর্যয়ে পৃথিবীর ‘ফুসফুস’

ব্রাজিলের আমাজন নদী অববাহিকার রেইনফরেস্ট গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি হারে উজাড় হয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা গেছে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত আমাজন রেইন ফরেস্ট বা চিরহরিৎ বনের প্রায় ৭ হাজার ৯০০ বর্গমাইল এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এলাকাটি লন্ডন শহরের চেয়েও অন্তত ৫ গুণ বড়।

অবৈধভাবে গাছ কাটাকেই এর অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন ব্রাজিলের পরিবেশ মন্ত্রী অ্যাডসন ডুয়ার্ট। দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারোর কিছু নীতির কারণেই বনাঞ্চল হ্রাসের হার উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও বিচিত্র গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় চিরহরিৎ বনাঞ্চল। এর বিস্তৃতি সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এ কারণে এই অঞ্চলকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস।

এই সুনিবিড় বনভূমিতে এখনো এমন সব উদ্ভিদ আর প্রাণীর প্রজাতি আছে যা রয়েছে মানুষের জানাশোনার বাইরে। গবেষকরা প্রতিনিয়তই নতুন কোনো জীব খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

আর এই রেইনফরেস্টের বেশিরভাগই বা লাখ লাখ বর্গকিলোমিটার অংশ ব্রাজিলের অভ্যন্তরে। যেখানে এখনো ১৯৬৫ সালের আইন প্রচলিত। যার অধীনে ভূমির মালিকেরা তাদের জমির কিছু অংশে বনায়ন করতে বাধ্য।

২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় বোলসোনারো বনাঞ্চলের ক্ষতির জন্যে জরিমানা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর সেই সাথে পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে করেছিলেন সীমিত।

প্রেসিডেন্টের পক্ষে তার সহকারী এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়কে একীভূত করা হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন এই নিবিড় বনভূমি এসব কারণেই বিপন্ন।

সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য মতে, দেশটির মাতো গ্রসো ও পারা রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বনভূমি ধ্বংসের মুখোমুখি। আর এই হ্রাসের হার গত বছরের তুলনায় ১৩.৭ শতাংশ বেশি। মাতো গ্রসো হলো ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চল। আর সমালোচকদের মতে, এ কারণেই এ অঞ্চলের রেইনফরেস্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডুয়ার্ট দোষারোপ করেছেন অবৈধভাবে গাছ কাটার একটি সংঘবদ্ধ চক্রের উত্থানকে। আর সেই সাথে মনে করেন দেশটির উচিৎ পরিবেশগত সীমা লঙ্ঘন পরিহার এবং জৈববৈচিত্র টিকিয়ে রাখার টেকসই সমাধানে যাবার।

বনভূমি উজাড় পর্যবেক্ষণ প্রকল্প প্রোডাস স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য থেকে তারা বার্ষিক জরিপ করেছে। এতে দেখা গেছে, বনভূমি হ্রাসের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এই বনাঞ্চল হ্রাসের হার তার আগের ১২ মাসের তুলনায় ১৬শতাংশ কমেছিল। ২০০৪ সালে এই হার কমেছিল ৭২ শতাংশ, সেসময় ব্রাজিলের ফেডারেল সরকার বন ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

তখন মধ্য আমেরিকান দেশ হাইতির সমপরিমাণ বনাঞ্চল, যার আয়তন ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি- ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।

বিবি/জেজে

ট্যাগ :

বরিশালে পেশাদার সাংবাদিকদের ৩৫ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময়

বিপর্যয়ে পৃথিবীর ‘ফুসফুস’

প্রকাশিত : ১২:২০:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

ব্রাজিলের আমাজন নদী অববাহিকার রেইনফরেস্ট গত এক দশকে সবচেয়ে বেশি হারে উজাড় হয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক তথ্যে জানা গেছে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত আমাজন রেইন ফরেস্ট বা চিরহরিৎ বনের প্রায় ৭ হাজার ৯০০ বর্গমাইল এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এলাকাটি লন্ডন শহরের চেয়েও অন্তত ৫ গুণ বড়।

অবৈধভাবে গাছ কাটাকেই এর অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছেন ব্রাজিলের পরিবেশ মন্ত্রী অ্যাডসন ডুয়ার্ট। দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারোর কিছু নীতির কারণেই বনাঞ্চল হ্রাসের হার উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।

দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও বিচিত্র গ্রীষ্ম মণ্ডলীয় চিরহরিৎ বনাঞ্চল। এর বিস্তৃতি সাড়ে পাঁচ লাখ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এ কারণে এই অঞ্চলকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস।

এই সুনিবিড় বনভূমিতে এখনো এমন সব উদ্ভিদ আর প্রাণীর প্রজাতি আছে যা রয়েছে মানুষের জানাশোনার বাইরে। গবেষকরা প্রতিনিয়তই নতুন কোনো জীব খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।

আর এই রেইনফরেস্টের বেশিরভাগই বা লাখ লাখ বর্গকিলোমিটার অংশ ব্রাজিলের অভ্যন্তরে। যেখানে এখনো ১৯৬৫ সালের আইন প্রচলিত। যার অধীনে ভূমির মালিকেরা তাদের জমির কিছু অংশে বনায়ন করতে বাধ্য।

২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় বোলসোনারো বনাঞ্চলের ক্ষতির জন্যে জরিমানা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর সেই সাথে পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে করেছিলেন সীমিত।

প্রেসিডেন্টের পক্ষে তার সহকারী এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন যে, কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়কে একীভূত করা হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন এই নিবিড় বনভূমি এসব কারণেই বিপন্ন।

সাম্প্রতিক সরকারি তথ্য মতে, দেশটির মাতো গ্রসো ও পারা রাজ্যেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বনভূমি ধ্বংসের মুখোমুখি। আর এই হ্রাসের হার গত বছরের তুলনায় ১৩.৭ শতাংশ বেশি। মাতো গ্রসো হলো ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি শস্য উৎপাদনকারী অঞ্চল। আর সমালোচকদের মতে, এ কারণেই এ অঞ্চলের রেইনফরেস্ট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডুয়ার্ট দোষারোপ করেছেন অবৈধভাবে গাছ কাটার একটি সংঘবদ্ধ চক্রের উত্থানকে। আর সেই সাথে মনে করেন দেশটির উচিৎ পরিবেশগত সীমা লঙ্ঘন পরিহার এবং জৈববৈচিত্র টিকিয়ে রাখার টেকসই সমাধানে যাবার।

বনভূমি উজাড় পর্যবেক্ষণ প্রকল্প প্রোডাস স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য থেকে তারা বার্ষিক জরিপ করেছে। এতে দেখা গেছে, বনভূমি হ্রাসের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। এই বনাঞ্চল হ্রাসের হার তার আগের ১২ মাসের তুলনায় ১৬শতাংশ কমেছিল। ২০০৪ সালে এই হার কমেছিল ৭২ শতাংশ, সেসময় ব্রাজিলের ফেডারেল সরকার বন ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

তখন মধ্য আমেরিকান দেশ হাইতির সমপরিমাণ বনাঞ্চল, যার আয়তন ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটারেরও বেশি- ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল।

বিবি/জেজে