০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রফতানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ অর্জন

  • সাইফুল ইসলাম
  • প্রকাশিত : ১২:০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 25

জানুয়ারি মাসে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৪৩ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম। অর্থাৎ, করোনা সংকটেও লক্ষ্যমাত্রার ৯০ ভাগ অর্জন করতে পেরেছে দেশের রফতানি খাত। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে রফতানি আয় প্রায় ৫ শতাংশ পিছিয়ে আছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে অচলাবস্থা বিরাজ করায় পণ্যের ক্রয় আদেশ কমে গেছে বলে রফতানিকারকরা বলে আসছিলেন।
গত ডিসেম্বর মাসেও রফতানি আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ওই মাসে পণ্য রফতানি থেকে ৩৩১ কোটি ডলার আয় হয়েছিল, যা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ কম এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ কম।
রফতানি আয়ে ধারাবাহিক ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে অর্থবছরের সার্বিক রফতানির উপরেও। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৩৪৭ কোটি ডলার, অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ২৬৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ পিছিয়ে আয়ে রফতানি আয়। আগের বছর একই সময়ের তুলনায় পিছিয়ে আছে এক দশমিক ০৯ শতাংশ; ওই সময়ে আয় হয়েছিল ২ হাজার ২৯১ কোটি ডলার।
ইপিবির গত ডিসেম্বর পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সার্বিক রফতানি কমেছে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে যে খারাপ পরিস্থিতি ছিল; জানুয়ারি মাসে এসে সেই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই গেছে।
রফতানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাওয়া। পোশাকখাতে নিট পণ্য ভালো অবস্থান (৪.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) ধরে রাখলেও উভেন খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক ও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি মাস শেষে এক হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের পোশাকপণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ৯০৬ কোটি ডলার। এরমধ্যে নিটপণ্য রয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার আর উভেন পণ্য ৮৪০ কোটি ডলার। আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ পিছিয়ে আছে উভেন পণ্য।
টাকার অঙ্কে কম হলেও এই সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে হোম টেক্সটাইল খাত। আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে হোম টেক্সটাইল খাতে। ৫৪৯ মিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রফতানি হয়েছে ৬৩৮ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মোট রফতানির কাছাকাছি। ওই বছর রফতানি হয়েছিল ৭৫৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। একইভাবে পাট ও পাটজাত পণ্যেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৭৬ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।
তবে মহামারীর ধাক্কায় বরাবরের মতোই সুখবর নেই রফতানির অন্যতম অংশীদার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে। জানুয়ারি মাস শেষে প্রায় ছয় শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। জানুয়ারি শেষে রফতানি হয়েছে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য। জানুয়ারি মাসে রফতানি হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ডলার সমমূল্যের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।
রফতানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের পরিসংখ্যানসহ চলতি অর্থবছরে টানা চতুর্থ মাস পোশাক খাত ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকলো। জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মধ্যে পড়েছে পোশাক খাত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটছে বাংলাদেশে রফতানি খাতে, বিশেষ করে পোশাক খাতে। আমাদের রফতানির প্রধান বাজারগুলোতে মহামারী প্রকটভাবে বেড়েছে। জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোতে কড়া লকডাউন দেওয়া হয়েছে। তবে টিকা এসে যাওয়ায় শীত কাটিয়ে ওঠার পর বছরের মাঝামাঝিতে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’ ##

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

রফতানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রার ৯০ শতাংশ অর্জন

প্রকাশিত : ১২:০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

জানুয়ারি মাসে পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩৪৩ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম। অর্থাৎ, করোনা সংকটেও লক্ষ্যমাত্রার ৯০ ভাগ অর্জন করতে পেরেছে দেশের রফতানি খাত। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে রফতানি আয় প্রায় ৫ শতাংশ পিছিয়ে আছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে অচলাবস্থা বিরাজ করায় পণ্যের ক্রয় আদেশ কমে গেছে বলে রফতানিকারকরা বলে আসছিলেন।
গত ডিসেম্বর মাসেও রফতানি আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ওই মাসে পণ্য রফতানি থেকে ৩৩১ কোটি ডলার আয় হয়েছিল, যা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ৬ দশমিক ১১ শতাংশ কম এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ কম।
রফতানি আয়ে ধারাবাহিক ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে অর্থবছরের সার্বিক রফতানির উপরেও। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৩৪৭ কোটি ডলার, অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ২৬৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ পিছিয়ে আয়ে রফতানি আয়। আগের বছর একই সময়ের তুলনায় পিছিয়ে আছে এক দশমিক ০৯ শতাংশ; ওই সময়ে আয় হয়েছিল ২ হাজার ২৯১ কোটি ডলার।
ইপিবির গত ডিসেম্বর পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছিল, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সার্বিক রফতানি কমেছে শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমে ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে যে খারাপ পরিস্থিতি ছিল; জানুয়ারি মাসে এসে সেই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই গেছে।
রফতানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ হচ্ছে প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক রফতানি কমে যাওয়া। পোশাকখাতে নিট পণ্য ভালো অবস্থান (৪.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি) ধরে রাখলেও উভেন খাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ শতাংশ ঋণাত্মক ও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি মাস শেষে এক হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের পোশাকপণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল এক হাজার ৯০৬ কোটি ডলার। এরমধ্যে নিটপণ্য রয়েছে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার আর উভেন পণ্য ৮৪০ কোটি ডলার। আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ পিছিয়ে আছে উভেন পণ্য।
টাকার অঙ্কে কম হলেও এই সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে হোম টেক্সটাইল খাত। আর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে হোম টেক্সটাইল খাতে। ৫৪৯ মিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও রফতানি হয়েছে ৬৩৮ মিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মোট রফতানির কাছাকাছি। ওই বছর রফতানি হয়েছিল ৭৫৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। একইভাবে পাট ও পাটজাত পণ্যেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৭৬ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।
তবে মহামারীর ধাক্কায় বরাবরের মতোই সুখবর নেই রফতানির অন্যতম অংশীদার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে। জানুয়ারি মাস শেষে প্রায় ছয় শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। জানুয়ারি শেষে রফতানি হয়েছে মাত্র ৫২ কোটি ডলারের পণ্য। জানুয়ারি মাসে রফতানি হয়েছে মাত্র ৮ কোটি ডলার সমমূল্যের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।
রফতানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের পরিসংখ্যানসহ চলতি অর্থবছরে টানা চতুর্থ মাস পোশাক খাত ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকলো। জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির মধ্যে পড়েছে পোশাক খাত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির প্রতিফলন ঘটছে বাংলাদেশে রফতানি খাতে, বিশেষ করে পোশাক খাতে। আমাদের রফতানির প্রধান বাজারগুলোতে মহামারী প্রকটভাবে বেড়েছে। জার্মানি, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোতে কড়া লকডাউন দেওয়া হয়েছে। তবে টিকা এসে যাওয়ায় শীত কাটিয়ে ওঠার পর বছরের মাঝামাঝিতে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।’ ##