১২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গণতন্ত্র সূচকে আরও উন্নতি

গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিকাশে সাফল্য ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিচারে, ২০২০ সালে মহামারির মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্রের পরিসর সংকীর্ণ হলেও বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের তুলনায় এগিয়েছে। ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ এবার রয়েছে ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ৭৬তম অবস্থানে। গতবছর এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৮৮; আট ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছিল ৮০তম অবস্থানে। তার আগের বছর ৫ দশমিক ৫৭ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ তালিকার ৮৮তম অবস্থানে ছিল।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সাল থেকে এই সূচক প্রকাশ শুরু করে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে এই সূচক ছিল ৫ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। এর পর থেকে এ বছরই গণতন্ত্র সূচকে সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে ২০২০ সালে এই সূচকে পুরো বিশ্বের গড় স্কোর আগের বছরের ৫ দশমিক ৪৪ থেকে কমে ৫ দশমিক ৩৭ হয়েছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ২০০৬ সালে সূচক প্রকাশের পর থেকে এটাই সবচেয়ে বাজে স্কোর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের গণতন্ত্রের দশার এই অবনমনের পেছনে মহামারির মধ্যে দেশে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি বড় ভূমিকা রেখেছে।

২০২০ সালের এই সূচক বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক (৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ) এখন গণতন্ত্র অথবা আংশিক গণতন্ত্র ভোগ করছে। এর মধ্যে পূর্ণ গণতন্ত্র উপভোগ করছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ২০২০ সালেও বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ রয়ে গেছে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে, যার একটি বড় অংশ চীনের বাসিন্দা।

নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার- এই পাঁচ মানদণ্ডে একটি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১০ ভিত্তিক এই সূচক তৈরি করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে তাদের ভাষায় ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ ছিল মাত্র ২৩টি দেশে, যা আগের বছরের চেয়ে একটি বেশি। ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ রয়েছে এমন দেশের সংখ্যা আগের বছর থেকে দুটি কমে ৫২টি হয়েছে। আর ‘মিশ্র শাসনে’ আছে এমন দেশ ৩৭টি থেকে কমে ৩৫টি হয়েছে। তাদের বিচারে বর্তমান বিশ্বে ৫৭টি দেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীনে রয়েছে; এই সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে তিনটি বেশি।

এবারের সূচক বলছে, গণতন্ত্রের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভারত। ৬ দশমিক ৬১ স্কোর নিয়ে ভারত আছে তালিকার ৫৩ নম্বরে। এরপর ৬ দশমিক ১৪ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কা ৬৮ তম; ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ৭৬ তম; ৫ দশমিক ৭১ স্কোর নিয়ে ভুটান ৮৪ তম; ৫ দশমিক ২২ স্কোর নিয়ে নেপাল ৯২তম; ৪ দশমিক ৩১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১০৫তম; ৩ দশমিক ০৪ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ১৩৫তম এবং ২ দশমিক ৮৫ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে।

৯ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে এবারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। শীর্ষ দশে আরও আছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউ জিল্যান্ড, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য ও জার্মানি পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের স্থান হয়েছে গতবারের মতই ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায়। এই ভাগের ৫২ দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কা। তালিকার তলানিতে আছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়া ডিআর কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, সিরিয়া, চাদ, তুর্কমেনিস্তানকেও নিচের দিকে রাখা হয়েছে।

 

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৭

গণতন্ত্র সূচকে আরও উন্নতি

প্রকাশিত : ১২:০১:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিকাশে সাফল্য ধরে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বিচারে, ২০২০ সালে মহামারির মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে গণতন্ত্রের পরিসর সংকীর্ণ হলেও বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের তুলনায় এগিয়েছে। ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ এবার রয়েছে ১৬৫টি দেশ ও দুটি অঞ্চলের মধ্যে ৭৬তম অবস্থানে। গতবছর এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৮৮; আট ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছিল ৮০তম অবস্থানে। তার আগের বছর ৫ দশমিক ৫৭ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ তালিকার ৮৮তম অবস্থানে ছিল।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ২০০৬ সাল থেকে এই সূচক প্রকাশ শুরু করে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে এই সূচক ছিল ৫ দশমিক ৫২ পয়েন্ট। এর পর থেকে এ বছরই গণতন্ত্র সূচকে সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে ২০২০ সালে এই সূচকে পুরো বিশ্বের গড় স্কোর আগের বছরের ৫ দশমিক ৪৪ থেকে কমে ৫ দশমিক ৩৭ হয়েছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ২০০৬ সালে সূচক প্রকাশের পর থেকে এটাই সবচেয়ে বাজে স্কোর। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের গণতন্ত্রের দশার এই অবনমনের পেছনে মহামারির মধ্যে দেশে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি বড় ভূমিকা রেখেছে।

২০২০ সালের এই সূচক বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক (৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ) এখন গণতন্ত্র অথবা আংশিক গণতন্ত্র ভোগ করছে। এর মধ্যে পূর্ণ গণতন্ত্র উপভোগ করছে মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ২০২০ সালেও বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ মানুষ রয়ে গেছে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে, যার একটি বড় অংশ চীনের বাসিন্দা।

নির্বাচনী ব্যবস্থা ও বহুদলীয় অবস্থান, সরকারে সক্রিয়তা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার- এই পাঁচ মানদণ্ডে একটি দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১০ ভিত্তিক এই সূচক তৈরি করে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে তাদের ভাষায় ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ ছিল মাত্র ২৩টি দেশে, যা আগের বছরের চেয়ে একটি বেশি। ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’ রয়েছে এমন দেশের সংখ্যা আগের বছর থেকে দুটি কমে ৫২টি হয়েছে। আর ‘মিশ্র শাসনে’ আছে এমন দেশ ৩৭টি থেকে কমে ৩৫টি হয়েছে। তাদের বিচারে বর্তমান বিশ্বে ৫৭টি দেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীনে রয়েছে; এই সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে তিনটি বেশি।

এবারের সূচক বলছে, গণতন্ত্রের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভারত। ৬ দশমিক ৬১ স্কোর নিয়ে ভারত আছে তালিকার ৫৩ নম্বরে। এরপর ৬ দশমিক ১৪ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কা ৬৮ তম; ৫ দশমিক ৯৯ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ৭৬ তম; ৫ দশমিক ৭১ স্কোর নিয়ে ভুটান ৮৪ তম; ৫ দশমিক ২২ স্কোর নিয়ে নেপাল ৯২তম; ৪ দশমিক ৩১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান ১০৫তম; ৩ দশমিক ০৪ স্কোর নিয়ে মিয়ানমার ১৩৫তম এবং ২ দশমিক ৮৫ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান ১৩৯তম অবস্থানে রয়েছে।

৯ দশমিক ৮১ স্কোর নিয়ে এবারের তালিকার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। শীর্ষ দশে আরও আছে আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউ জিল্যান্ড, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডস। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য ও জার্মানি পূর্ণ গণতন্ত্রের দেশের তালিকায় থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের স্থান হয়েছে গতবারের মতই ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের’ দেশের তালিকায়। এই ভাগের ৫২ দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কা। তালিকার তলানিতে আছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়া ডিআর কঙ্গো, সেন্ট্রাল আফ্রিকা, সিরিয়া, চাদ, তুর্কমেনিস্তানকেও নিচের দিকে রাখা হয়েছে।