০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

করোনার থাবা গোলাপে

পৃথিবী ব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। করোনার থাবা থেকে রক্ষা পায়নি প্রিয় গোলাপ। করোনার কারণে গোলাপের উৎপাদন এবং চাহিদায় পড়েছে ভাটা। সম্প্রতি সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের গোলাপ চাষিসহ দেশের অন্যান্য স্থানের ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সারাবছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কমবেশি গোলাপ ফুলের চাহিদা থাকলেও, গোলাপসহ অন্যান্য ফুলের সব থেকে বেশি চাহিদা থাকে ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে। গোলাপ চাষিরা জানান, করোনায় লকডাউনের সময়ে কাজের লোকের অভাবে তারা ঠিকমত বাগানের পরিচর্যা করতে পারেননি। পাশাপাশি সে সময় সবকিছু বন্ধ থাকায় গোলাপ ফুলের চাহিদাও ছিল না। এ সময় অনেক বাগানে ফুল ফুটে আবার গাছেই পচে গিয়েছে। এতে বাগানে গোলাপ গাছের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে অন্যান্য বছরের তুলনায় গোলাপের উৎপাদন কম। চাষিরা আরও জানান, সারাবছরের মধ্যে গোলাপের চাহিদা সব থেকে বেশি থাকে ভালোবাসা দিবসে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হলেই ব্যবসায়ীরা গোলাপ চাষিদের ফুল কেনার জন্য আগাম অর্ডার দিতেন। অনেক সময় ফুল কেনার জন্য অগ্রিম টাকাও দিতেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ব্যবসায়ীদের ফুল কেনায় আগ্রহের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় ২৫ বছর থেকে গোলাপ চাষের সঙ্গে জড়িত সাভার বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের শাহাজাহান মিয়া। তিনি বলেন, করোনায় কাজের লোকের অভাবে গোলাপের বাগান ঠিক মত যত্ম নিতে পারিনি। যত্মের অভাবে গোলাপের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তাই এবছর গোলাপের উৎপাদন কম। অন্যান্য বছর ভালোবাসা দিবসের আগেই গোলাপের অনেক ব্যাপারী আমাদের কাছ থেকে গোলাপ কেনার জন্য তোষামোদ করতেন। কিন্তু এবছর ব্যাপারীরা আমাদের কাছে এখনও গোলাপ কেনার জন্য আসছে না। তিনি বলেন, এবছর গোলাপের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য বছর ভালোবাসা দিবসের সময়ে গোলাপের দাম অনেক বেশি থাকতো। এবার চাহিদা না থাকায় গোলাপের দামও অনেক কমে গেছে। সামনে আর মাত্র দুই একদিন বাকি আছে, এরমধ্যে গোলাপের দাম না বাড়লে আমাদের অনেক লোকসান হবে। শ্যামপুর গ্রামের গোলাপ চাষি আবুল হোসেন জানান, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবছর গোলাপের উৎপাদন কম। করোনার কারণে গোলাপের বাজারে গ্রাহকও কম, তাই গোলাপের দামও কম। ভালোবাসা দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে যদি গোলাপের দাম আর না বাড়ে তাহলে এবছর আমাদের অনেক টাকা লোকসান হবে। আর যদি গোলাপের দাম বাড়ে তাহলে হয়তো কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পাবো। শ্যামপুর গ্রামের আরেকজন গোলাপ চাষি মনির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি স্থানীয় গোলাপের বাজারে আট হাজার টাকার গোলাপ বিক্রি করেছেন। এবছর গোলাপের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বাজারে তিনশত পিসে এক বান্ডিল গোলাপ এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা (তিনশত পিস) দামে বিক্রি হইছে। গতবছর ভালোবাসা দিবসের আগে তিন হাজার টাকায় এক বান্ডিল গোলাপ বিক্রি হয়েছিল বলেও জানান তিনি। গোলাপ চাষিরা আশা করছেন শিগগিরই দেশ থেকে করোনা বিদায় হবে। সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং স্কুল-কলেজ আবারও শুরু হলে গোলাপের চাহিদাও বাড়বে, চাহিদার সঙ্গে বাড়বে গোলাপের দামও।

ট্যাগ :

৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে 

করোনার থাবা গোলাপে

প্রকাশিত : ১২:০১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১

পৃথিবী ব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে স্থবিরতা। করোনার থাবা থেকে রক্ষা পায়নি প্রিয় গোলাপ। করোনার কারণে গোলাপের উৎপাদন এবং চাহিদায় পড়েছে ভাটা। সম্প্রতি সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের গোলাপ চাষিসহ দেশের অন্যান্য স্থানের ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সারাবছর বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কমবেশি গোলাপ ফুলের চাহিদা থাকলেও, গোলাপসহ অন্যান্য ফুলের সব থেকে বেশি চাহিদা থাকে ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ, বিজয় দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসে। গোলাপ চাষিরা জানান, করোনায় লকডাউনের সময়ে কাজের লোকের অভাবে তারা ঠিকমত বাগানের পরিচর্যা করতে পারেননি। পাশাপাশি সে সময় সবকিছু বন্ধ থাকায় গোলাপ ফুলের চাহিদাও ছিল না। এ সময় অনেক বাগানে ফুল ফুটে আবার গাছেই পচে গিয়েছে। এতে বাগানে গোলাপ গাছের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এ কারণে বর্তমানে অন্যান্য বছরের তুলনায় গোলাপের উৎপাদন কম। চাষিরা আরও জানান, সারাবছরের মধ্যে গোলাপের চাহিদা সব থেকে বেশি থাকে ভালোবাসা দিবসে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হলেই ব্যবসায়ীরা গোলাপ চাষিদের ফুল কেনার জন্য আগাম অর্ডার দিতেন। অনেক সময় ফুল কেনার জন্য অগ্রিম টাকাও দিতেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ব্যবসায়ীদের ফুল কেনায় আগ্রহের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। প্রায় ২৫ বছর থেকে গোলাপ চাষের সঙ্গে জড়িত সাভার বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর গ্রামের শাহাজাহান মিয়া। তিনি বলেন, করোনায় কাজের লোকের অভাবে গোলাপের বাগান ঠিক মত যত্ম নিতে পারিনি। যত্মের অভাবে গোলাপের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তাই এবছর গোলাপের উৎপাদন কম। অন্যান্য বছর ভালোবাসা দিবসের আগেই গোলাপের অনেক ব্যাপারী আমাদের কাছ থেকে গোলাপ কেনার জন্য তোষামোদ করতেন। কিন্তু এবছর ব্যাপারীরা আমাদের কাছে এখনও গোলাপ কেনার জন্য আসছে না। তিনি বলেন, এবছর গোলাপের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যান্য বছর ভালোবাসা দিবসের সময়ে গোলাপের দাম অনেক বেশি থাকতো। এবার চাহিদা না থাকায় গোলাপের দামও অনেক কমে গেছে। সামনে আর মাত্র দুই একদিন বাকি আছে, এরমধ্যে গোলাপের দাম না বাড়লে আমাদের অনেক লোকসান হবে। শ্যামপুর গ্রামের গোলাপ চাষি আবুল হোসেন জানান, ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এবছর গোলাপের উৎপাদন কম। করোনার কারণে গোলাপের বাজারে গ্রাহকও কম, তাই গোলাপের দামও কম। ভালোবাসা দিবস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে যদি গোলাপের দাম আর না বাড়ে তাহলে এবছর আমাদের অনেক টাকা লোকসান হবে। আর যদি গোলাপের দাম বাড়ে তাহলে হয়তো কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পাবো। শ্যামপুর গ্রামের আরেকজন গোলাপ চাষি মনির হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি স্থানীয় গোলাপের বাজারে আট হাজার টাকার গোলাপ বিক্রি করেছেন। এবছর গোলাপের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বাজারে তিনশত পিসে এক বান্ডিল গোলাপ এক হাজার ৭০০ টাকা থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা (তিনশত পিস) দামে বিক্রি হইছে। গতবছর ভালোবাসা দিবসের আগে তিন হাজার টাকায় এক বান্ডিল গোলাপ বিক্রি হয়েছিল বলেও জানান তিনি। গোলাপ চাষিরা আশা করছেন শিগগিরই দেশ থেকে করোনা বিদায় হবে। সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং স্কুল-কলেজ আবারও শুরু হলে গোলাপের চাহিদাও বাড়বে, চাহিদার সঙ্গে বাড়বে গোলাপের দামও।