১১:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

মালয়েশিয়ায় পঞ্চগড়ের আলু

দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে পঞ্চগড়ের আলু। মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি নেপাল, ভূটানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও জেলার আলু রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর এতে ব্যস্ততা বেড়েছে জেলা বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ আলু চাষী ও আলু শ্রমিকদের। রপ্তানির জন্য আলু প্রক্রিয়াজাত করায় নানা ধাপে বেশ কিছু শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জমি থেকে আলু সংগ্রহের পর আলু বাছাই, গ্রেডিং, ওজন, প্যাকিং, ট্রাকে লোডসহ নানা কাজে দৈনিক ব্যস্ত জেলার আলু শ্রমিকেরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার আলুর বাম্পার ফলনে জেলার বাজারে আলুর দাম কিছুটা পড়ে যায়। কিন্তু বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ার পর আবার বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে হতাশ আলু চাষীরা আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন।

জেলা বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ২৮ মেট্রিক টন ডায়মন্ড জাতের আলু রপ্তানির মধ্যে দিয়ে জেলার আলু রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কেএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং মালেশিয়ার আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান সিনহুয়া ট্রেডিং কর্পোরেশনের মাধ্যেমে ওই দেশে জেলার আলু রপ্তানি করা হচ্ছে। সাড়ে ৮ কেজির প্রতি প্যাকেট আলু পঞ্চগড় থেকে কন্টেইনারে করে প্রথমে যায় চট্টগ্রাম বন্দরে। পরে তা কার্গো জাহাজে করে পৌঁছায় মালেশিয়ায়। এ বছর পঞ্চগড় থেকে ডায়মন্ড জাতের হালকা হলুদ রঙের আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রতিটি আলুর সাইজ ৯০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত।জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানুলা, টিপিএস, কারেছ, এস্টারিসসহ ২০টির বেশি জাতের আলু চাষ হয়েছে। এবার মোট আলু উৎপাদিত হয়েছে ২ লক্ষ ২৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জেলায় বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষীরা প্রর্দশনী প্লটসহ ৩০০ একর জমিতে আলুর চাষ করেছে। এর মধ্যে ২০ একর জমিতে রপ্তানিযোগ্য ডায়মন্ড জাতের আলুর চাষ হয়েছে। এছাড়া আরও ৩০ হেক্টর জমিতে রপ্তানি যোগ্য অন্যান্য জাতের আলুর চাষ হয়েছে।

জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের তহশীলদার পাড়ার বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ আলু চাষী মো আব্দুল মতিন জানান, এবার ১১ একর জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলুর চাষ করেছি। আমার উৎপাদিত আলুর মধ্যে সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন আলু মালেশিয়ায় যাচ্ছে। এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। প্রতি কেজি আলু ১৪ টাকা দরে নিচ্ছে তারা। টাকাও মিলছে নগদ। তবে আলুর দামটা যদি ১৮ থেকে ২০ টাকা হতো, তাহলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম। কেননা আলুর উৎপাদন খরচ আগের চাইতে অনেকাংশে বেড়ে গেছে। সরকার এ বিষয়ে একটু নজর দিলে আমাদের জন্য আরও ভালো হতো। আমরা আলু চাষে আরও আগ্রহী হতাম।পঞ্চগড় জেলা বিএডিসি হিমাগারের উপ-পরিচালক (টিসি) মো আব্দুল হাই সজিব জানান, মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পঞ্চগড় জোনের আওতায় চুক্তিবদ্ধ আলু চাষীদের মাধ্যেমে উৎপাদিত আলু মালেশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে। এবার জেলায় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এখানকার আলু। পঞ্চগড়ের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় আলু চাষে খুবই উপযোগী। এছাড়া আলু শীত প্রধান ফসল হওয়ায় এ অঞ্চলে বেশি শীতের কারণে আলুর বাম্পার ফলন হয়। এবার চাহিদায় তুলনায় বেশি আলু উৎপাদিত হওয়ায় চাষিরা নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এখানকার আলু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। গুণে মানে রঙে পঞ্চগড়ের আলু উন্নত হওয়ায় রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরা এ জেলার আলু রপ্তানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা পঞ্চগড়ের উৎপাদিত আলুর আগাম চাহিদা দিয়ে রেখেছেন। এ বছর পঞ্চগড় বিএডিসি হিমাগারের ৫০০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আলু রপ্তানি শুরু হয়েছে। আগামীতে রপ্তানিকারকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

ট্যাগ :

দুদকের ২ উপপরিচালক বরখাস্ত

মালয়েশিয়ায় পঞ্চগড়ের আলু

প্রকাশিত : ১২:০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ এপ্রিল ২০২১

দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে পঞ্চগড়ের আলু। মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি নেপাল, ভূটানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও জেলার আলু রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর এতে ব্যস্ততা বেড়েছে জেলা বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ আলু চাষী ও আলু শ্রমিকদের। রপ্তানির জন্য আলু প্রক্রিয়াজাত করায় নানা ধাপে বেশ কিছু শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জমি থেকে আলু সংগ্রহের পর আলু বাছাই, গ্রেডিং, ওজন, প্যাকিং, ট্রাকে লোডসহ নানা কাজে দৈনিক ব্যস্ত জেলার আলু শ্রমিকেরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার আলুর বাম্পার ফলনে জেলার বাজারে আলুর দাম কিছুটা পড়ে যায়। কিন্তু বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ার পর আবার বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে হতাশ আলু চাষীরা আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন।

জেলা বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ২৮ মেট্রিক টন ডায়মন্ড জাতের আলু রপ্তানির মধ্যে দিয়ে জেলার আলু রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কেএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং মালেশিয়ার আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান সিনহুয়া ট্রেডিং কর্পোরেশনের মাধ্যেমে ওই দেশে জেলার আলু রপ্তানি করা হচ্ছে। সাড়ে ৮ কেজির প্রতি প্যাকেট আলু পঞ্চগড় থেকে কন্টেইনারে করে প্রথমে যায় চট্টগ্রাম বন্দরে। পরে তা কার্গো জাহাজে করে পৌঁছায় মালেশিয়ায়। এ বছর পঞ্চগড় থেকে ডায়মন্ড জাতের হালকা হলুদ রঙের আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রতিটি আলুর সাইজ ৯০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত।জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানুলা, টিপিএস, কারেছ, এস্টারিসসহ ২০টির বেশি জাতের আলু চাষ হয়েছে। এবার মোট আলু উৎপাদিত হয়েছে ২ লক্ষ ২৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জেলায় বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষীরা প্রর্দশনী প্লটসহ ৩০০ একর জমিতে আলুর চাষ করেছে। এর মধ্যে ২০ একর জমিতে রপ্তানিযোগ্য ডায়মন্ড জাতের আলুর চাষ হয়েছে। এছাড়া আরও ৩০ হেক্টর জমিতে রপ্তানি যোগ্য অন্যান্য জাতের আলুর চাষ হয়েছে।

জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের তহশীলদার পাড়ার বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ আলু চাষী মো আব্দুল মতিন জানান, এবার ১১ একর জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলুর চাষ করেছি। আমার উৎপাদিত আলুর মধ্যে সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন আলু মালেশিয়ায় যাচ্ছে। এটা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। প্রতি কেজি আলু ১৪ টাকা দরে নিচ্ছে তারা। টাকাও মিলছে নগদ। তবে আলুর দামটা যদি ১৮ থেকে ২০ টাকা হতো, তাহলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম। কেননা আলুর উৎপাদন খরচ আগের চাইতে অনেকাংশে বেড়ে গেছে। সরকার এ বিষয়ে একটু নজর দিলে আমাদের জন্য আরও ভালো হতো। আমরা আলু চাষে আরও আগ্রহী হতাম।পঞ্চগড় জেলা বিএডিসি হিমাগারের উপ-পরিচালক (টিসি) মো আব্দুল হাই সজিব জানান, মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পঞ্চগড় জোনের আওতায় চুক্তিবদ্ধ আলু চাষীদের মাধ্যেমে উৎপাদিত আলু মালেশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে। এবার জেলায় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এখানকার আলু। পঞ্চগড়ের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় আলু চাষে খুবই উপযোগী। এছাড়া আলু শীত প্রধান ফসল হওয়ায় এ অঞ্চলে বেশি শীতের কারণে আলুর বাম্পার ফলন হয়। এবার চাহিদায় তুলনায় বেশি আলু উৎপাদিত হওয়ায় চাষিরা নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এখানকার আলু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। গুণে মানে রঙে পঞ্চগড়ের আলু উন্নত হওয়ায় রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকরা এ জেলার আলু রপ্তানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা পঞ্চগড়ের উৎপাদিত আলুর আগাম চাহিদা দিয়ে রেখেছেন। এ বছর পঞ্চগড় বিএডিসি হিমাগারের ৫০০ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আলু রপ্তানি শুরু হয়েছে। আগামীতে রপ্তানিকারকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে এ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।