১২:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিক্রি কম, শঙ্কায় তরমুজ চাষিরা

চৈত্রের শুরুতেই নাটোরের বাজারে উঠেছে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ। তবে শুরুর আকাশচুম্বী দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে। করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কমেছে তরমুজের কেনাবেচা। তাই এবার বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের উদ্বেগ, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে ক্রেতার অভাবে ক্ষেতেই পচবে তরমুজ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানা যায়, চলতি বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৯৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর, সিংড়া ও সদর উপজেলায় আবাদ বেশি হয়েছে। জেলায় এবার তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ মেট্রিক টন। শিলাবৃষ্টি না হলে তরমুজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তরমুজ চাষিরা বলছেন, তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে এবার করোনা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। অন্য বছরগুলোতে চৈত্রের শুরু থেকে মাঝামাঝি কয়েক দফা কালবৈশাখী ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হলেও এবার তা হয়নি। তাই তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। ফলে কৃষক চৈত্রের শুরু থেকেই তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন। প্রথম সপ্তাহে বাজার ভালো থাকলেও করোনার প্রকোপ বাড়ায় হঠাৎ দাম অর্ধেক পড়ে গেছে তরমুজের। এতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তরমুজ কেনা সীমিত করেছেন। দাম কমার কারণে ক্ষেতে থাকা বাকি তরমুজের বিক্রি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে, তরমুজ পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও সমান উদ্বিগ্ন করোনা সংক্রমণ নিয়ে। তারা বলছেন, বৈশাখ শুরুর এক মাস আগে থেকে ভোক্তারা তরমুজ কেনা শুরু করেন। শুরুর দিকে অবস্থাসম্পন্ন ভোক্তারা বেশি দামে হলেও তরমুজ কেনায় চাষিদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনে যান অনেক পাইকার। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। ভালো দামের আশায় কোনো কোনো পাইকার বাজারে তরমুজ সরবরাহ শুরু করেছেন। বিক্রি বাড়ার আশায় অস্থায়ী মোকামগুলোতে তরমুজ মজুদ করা হচ্ছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক চড়া দামে বিক্রি হওয়ার পরই কমতে শুরু করেছে তরমুজের দাম।

তারা আরও বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কায় তরমুজের টাকায় সেসব পণ্য কিনছেন ভোক্তারা। এতে মোকামগুলোতে শুরুতেই বিপুল পরিমাণ তরমুজ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশি, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যয় কমাতে অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা নিজ জেলায় উৎপাদিত তরমুজে ঝুঁকছেন। রফতানির পরিসর সংকুচিত হওয়ায় এবার তরমুজে লোকসান অনেকটাই নিশ্চিত।

শীর্ষ তরমুজ উৎপাদনকারী উপজেলা গুরুদাসপুর, সিংড়া ও নাটোর সদর ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তরমুজ আসা শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মের ফল তরমুজের পসরা সাজিয়ে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী সড়ক-মহাসড়কের ধারে বসেছেন। গ্রামীণ হাট-বাজারসহ প্রায় সব এলাকার বাজারেই কমবেশি তরমুজ সরবরাহ থাকায় চাষি বা পাইকাররা এলাকার বাইরে তরমুজ নিচ্ছেন না।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিক্রি কম, শঙ্কায় তরমুজ চাষিরা

প্রকাশিত : ১২:৫৬:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ এপ্রিল ২০২১

চৈত্রের শুরুতেই নাটোরের বাজারে উঠেছে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ। তবে শুরুর আকাশচুম্বী দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে। করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কমেছে তরমুজের কেনাবেচা। তাই এবার বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন তরমুজ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের উদ্বেগ, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে ক্রেতার অভাবে ক্ষেতেই পচবে তরমুজ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানা যায়, চলতি বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ৫৯৯ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর, সিংড়া ও সদর উপজেলায় আবাদ বেশি হয়েছে। জেলায় এবার তরমুজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ মেট্রিক টন। শিলাবৃষ্টি না হলে তরমুজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তরমুজ চাষিরা বলছেন, তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে এবার করোনা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। অন্য বছরগুলোতে চৈত্রের শুরু থেকে মাঝামাঝি কয়েক দফা কালবৈশাখী ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হলেও এবার তা হয়নি। তাই তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে। ফলে কৃষক চৈত্রের শুরু থেকেই তরমুজ বিক্রি শুরু করেছেন। প্রথম সপ্তাহে বাজার ভালো থাকলেও করোনার প্রকোপ বাড়ায় হঠাৎ দাম অর্ধেক পড়ে গেছে তরমুজের। এতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তরমুজ কেনা সীমিত করেছেন। দাম কমার কারণে ক্ষেতে থাকা বাকি তরমুজের বিক্রি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে, তরমুজ পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরাও সমান উদ্বিগ্ন করোনা সংক্রমণ নিয়ে। তারা বলছেন, বৈশাখ শুরুর এক মাস আগে থেকে ভোক্তারা তরমুজ কেনা শুরু করেন। শুরুর দিকে অবস্থাসম্পন্ন ভোক্তারা বেশি দামে হলেও তরমুজ কেনায় চাষিদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনে যান অনেক পাইকার। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। ভালো দামের আশায় কোনো কোনো পাইকার বাজারে তরমুজ সরবরাহ শুরু করেছেন। বিক্রি বাড়ার আশায় অস্থায়ী মোকামগুলোতে তরমুজ মজুদ করা হচ্ছে। কিন্তু সপ্তাহখানেক চড়া দামে বিক্রি হওয়ার পরই কমতে শুরু করেছে তরমুজের দাম।

তারা আরও বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কায় তরমুজের টাকায় সেসব পণ্য কিনছেন ভোক্তারা। এতে মোকামগুলোতে শুরুতেই বিপুল পরিমাণ তরমুজ অবিক্রিত থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশি, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যয় কমাতে অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা নিজ জেলায় উৎপাদিত তরমুজে ঝুঁকছেন। রফতানির পরিসর সংকুচিত হওয়ায় এবার তরমুজে লোকসান অনেকটাই নিশ্চিত।

শীর্ষ তরমুজ উৎপাদনকারী উপজেলা গুরুদাসপুর, সিংড়া ও নাটোর সদর ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে তরমুজ আসা শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মের ফল তরমুজের পসরা সাজিয়ে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী সড়ক-মহাসড়কের ধারে বসেছেন। গ্রামীণ হাট-বাজারসহ প্রায় সব এলাকার বাজারেই কমবেশি তরমুজ সরবরাহ থাকায় চাষি বা পাইকাররা এলাকার বাইরে তরমুজ নিচ্ছেন না।