১২:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

ঝিনাইদহে লক্ষাধিক নলকূপ পানিশূন্য

ঝিনাইদহে পানির জন্যে চলছে হাহাকার। মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর-নদী কোথাও নেই পানি। পানি নেই নলকূপেও।
জেলার ৬টি উপজেলায় লক্ষাধিক নলকূপে নেই কোনো পানি। এর মধ্যে জেলার শুধুমাত্র শৈলকুপা উপজেলাতেই ৩০ হাজার নলকূপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে গেছে। জেলার সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে কোনো নলকূপেই পানি উঠছে না। গত কয়েক মাস ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে।

 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে রয়েছে ৬টি উপজেলা, এগুলো হলো শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু ও ঝিনাইদহ সদর। জেলার ভেতর দিয়ে নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, গড়াইসহ বেশকিছু নদনদী প্রবাহিত। তবে একমাত্র গড়াই বাদে সবই এখন মৃত, হয় ফসলের চাষ।

জেলার উপজেলাগুলোর ভেতরে শুধুমাত্র শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫শ’ নলকূপ। যার ভেতরে এই মুহূর্তে ৩০ হাজার নলকূপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। জনস্বাস্থ্য অধিদফতর শৈলকুপা উপজেলার কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই উপজেলাতে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকুপ রয়েছে, তার মধ্যে সরকারি নলকূপ মাত্র ১৫শ’, বাকী সব ব্যক্তিমালিকানার। এসবের ভেতরে ৩০ হাজারই এখন পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানান, উপজেলার বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানির সংকট শুরু হয়েছে। তাদের অফিসপাড়ার ৪টি নলকূপই অকেজো বলে জানান।

সরেজমিনে শৈলকুপার মনোহরপুর, বিজুলিয়া, হিতামপুর, পৌরসভার হাবিবপুর, কবিরপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সমস্ত অগভীর নলকূপ অকেজো। গত মাসেও কিছু নলকূপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি এপ্রিলে এসে একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে সব নলকূপ। গ্রামের দারিদ্র মানুষগুলো এমন অবস্থায় নদ নদী বা দূরের কোনো জলাশয় থেকে পানি এনে ফুটিয়ে তা পারিবারিক সব কাজে ব্যবহার করছে। মনোহরপুর গ্রামের গৃহবধু সাগরী, কৃষক মোকন মিয়া, বিজুলিয়া গ্রামের কৃষক ভুন্ডলে মিয়াসহ অনেকে জানান, গত কয়েকমাস ধরেই তাদের নলকূপে কোনো পানি নেই।এমন পরিস্থিতিতে কৃষিকাজে পরিকল্পিত সেচ কার্যক্রম চালানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সচেতন মহলের অনেকেই। মাঠে সেচকাজে ব্যাপকহারে সেচপাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পনির অতিরিক্ত ব্যবহার করায় সংকট বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে পানির স্তর উদ্বেগজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে বলে মতামত তাদের।

সুপেয় পনির সংকটে জনস্বাস্থ্য প্রসঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক রাশেদ আল মামুন জানান, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করতে পারলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুকি থেকে যায়। বিশেষ করে শিশুরা ডাইরিয়া, আমাশয়, পেটেরপীড়াসহ নানা অসুখে পড়ে।

জনস্বাস্থ্য অধিদফতর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা তাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ৩২ হাজার নলকূপ স্থাপন করা আছে। আর এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে।

তিনি জানান, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি নির্ধারনী মহলে তারা জানিয়েছেন, যাতে ডিজাইনমাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাশ হয়। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে বলে তিনি পরামর্শ দেন।

ট্যাগ :
জনপ্রিয়

ঝিনাইদহে লক্ষাধিক নলকূপ পানিশূন্য

প্রকাশিত : ১২:০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১

ঝিনাইদহে পানির জন্যে চলছে হাহাকার। মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর-নদী কোথাও নেই পানি। পানি নেই নলকূপেও।
জেলার ৬টি উপজেলায় লক্ষাধিক নলকূপে নেই কোনো পানি। এর মধ্যে জেলার শুধুমাত্র শৈলকুপা উপজেলাতেই ৩০ হাজার নলকূপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে গেছে। জেলার সদর, কালীগঞ্জ, মহেশপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে কোনো নলকূপেই পানি উঠছে না। গত কয়েক মাস ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে।

 

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে রয়েছে ৬টি উপজেলা, এগুলো হলো শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু ও ঝিনাইদহ সদর। জেলার ভেতর দিয়ে নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, গড়াইসহ বেশকিছু নদনদী প্রবাহিত। তবে একমাত্র গড়াই বাদে সবই এখন মৃত, হয় ফসলের চাষ।

জেলার উপজেলাগুলোর ভেতরে শুধুমাত্র শৈলকুপাতেই রয়েছে ৩৭ হাজার ৫শ’ নলকূপ। যার ভেতরে এই মুহূর্তে ৩০ হাজার নলকূপ পানির অভাবে অকেজো হয়ে পড়েছে। জনস্বাস্থ্য অধিদফতর শৈলকুপা উপজেলার কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই উপজেলাতে ৩৭ হাজার ৫০০ নলকুপ রয়েছে, তার মধ্যে সরকারি নলকূপ মাত্র ১৫শ’, বাকী সব ব্যক্তিমালিকানার। এসবের ভেতরে ৩০ হাজারই এখন পানিশূন্য হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন সংকট দেখা দিয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানান, উপজেলার বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানির সংকট শুরু হয়েছে। তাদের অফিসপাড়ার ৪টি নলকূপই অকেজো বলে জানান।

সরেজমিনে শৈলকুপার মনোহরপুর, বিজুলিয়া, হিতামপুর, পৌরসভার হাবিবপুর, কবিরপুরসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, সমস্ত অগভীর নলকূপ অকেজো। গত মাসেও কিছু নলকূপে সামান্য পানি উঠলেও চলতি এপ্রিলে এসে একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে সব নলকূপ। গ্রামের দারিদ্র মানুষগুলো এমন অবস্থায় নদ নদী বা দূরের কোনো জলাশয় থেকে পানি এনে ফুটিয়ে তা পারিবারিক সব কাজে ব্যবহার করছে। মনোহরপুর গ্রামের গৃহবধু সাগরী, কৃষক মোকন মিয়া, বিজুলিয়া গ্রামের কৃষক ভুন্ডলে মিয়াসহ অনেকে জানান, গত কয়েকমাস ধরেই তাদের নলকূপে কোনো পানি নেই।এমন পরিস্থিতিতে কৃষিকাজে পরিকল্পিত সেচ কার্যক্রম চালানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সচেতন মহলের অনেকেই। মাঠে সেচকাজে ব্যাপকহারে সেচপাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পনির অতিরিক্ত ব্যবহার করায় সংকট বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে পানির স্তর উদ্বেগজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে বলে মতামত তাদের।

সুপেয় পনির সংকটে জনস্বাস্থ্য প্রসঙ্গে হাসপাতালের চিকিৎসক রাশেদ আল মামুন জানান, বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করতে পারলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুকি থেকে যায়। বিশেষ করে শিশুরা ডাইরিয়া, আমাশয়, পেটেরপীড়াসহ নানা অসুখে পড়ে।

জনস্বাস্থ্য অধিদফতর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে তা তাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ৩২ হাজার নলকূপ স্থাপন করা আছে। আর এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে।

তিনি জানান, বিভিন্ন ফোরামে বা সরকারের নীতি নির্ধারনী মহলে তারা জানিয়েছেন, যাতে ডিজাইনমাফিক নলকূপ স্থাপনের আইন পাশ হয়। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে বলে তিনি পরামর্শ দেন।